somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার কর্তব্য

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার কর্তব্য


পিতা মাতার কর্তব্য

সন্তান আল্লাহ তাআলার দেয়া আমানত। সুতরাং প্রত্যেক পিতা মাতার জন্য আবশ্যক হল সন্তানের ব্যাপারে যত্নবান হ্ওয়া। পিতা মাতার অসর্তকতার কারণে সন্তানের জীবন যদি সুন্দর না হয়, তাহলে এর জন্য পিতা-মাতাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাই কুরআন হাদীসের আলোকে সংক্ষেপে পিতা-মাতার করণীয় বিষয়গুলো পেশ করা হল।

১-আযান ইকামাত দেয়া সুন্নাত

সন্তান দুনিয়াতে আসার সাথে সাথে তার ডান কানে আযানের কালিমা এবং বাম কানে ইকামাতের কালিমাগুলো শুনিয়ে দেয়া।

হযরত হুসাইন রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, যার সন্তান হয়, সে যেন তার ডান কানে আজান এবং বাম কানে ইকামত দেয়। {শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৮৬১৯, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৬৭৮০, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৭৯৮৫}

২-তাহনীক বা মিষ্টি মুখ করানোর সুন্নাত।

মিষ্টি করানোর দ্বারা উদ্দেশ্য হল-খেজুর বা মিষ্টি দ্রব্য মুখে চিবিয়ে এর সামান্য অংশ আঙ্গুলির মাথায় নিয়ে নবজাতকের মুখে দিবে। অতঃপর ডান ও বাম দিকে মৃদুভাবে আঙ্গুলি নাড়াচাড়া করে, যাতে চিবানো মিষ্টান্ন বস্তু পূর্ণ মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এটা সুন্নাত আমল।

হযরত আবু মুসা আশআরী রাঃ থেকে বর্নিত। তিনি বলেন, আমার একটি ছেলেকে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নিয়ে এলাম, তখন রাসূল সাঃ তার নাম রাখেন ইবরাহীম এবং তাকে তাহনীক করান খেজুর দিয়ে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৫৭৩৯, সুনানুল বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৯০৮৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯৫৭০, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৩৯৪৮}

৩-শিশুর মাথা মুন্ডানো

জন্মের সপ্তম দিন ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সন্তানের মাথা মুন্ডানো, এবং চুলের সমপরিমাণ রৌপ্য বা এর সমমূল্য ফকীর মিসকিনদের মাঝে সদকা করা।

হযরত সামুরা বিন জুনদুব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-প্রত্যেক বালকের পক্ষ থেকে আক্বিকা হল বন্ধক স্বরূপ, যা তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে জবাই করবে, এবং তার মাথা মুন্ডাবে, এবং তার নাম রাখবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৪০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৯০৪৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৯৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২০০৮৩}

হযরত যাফর বিন মুহাম্মদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তার পিতা বলেছেন-হযরত ফাতেমা বিনতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসান, হুসাইন, জয়নব ও উম্মে কুলসুমের চুল ওজন করে সে পরিমাণ রুপা সদকা করে দিয়েছেন। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-১৮৩৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৮২৬২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৯০৭৯}

৪- আক্বিকা করা

সন্তান জন্ম নেবার সপ্তম দিন বকরী বা খাসী জবেহ করে আত্মীয় স্বজন, গরীব মিসকীনদের মাঝে বিতরণ করে দেয়ার নাম আক্বিকা।

হযরত উম্মে কুরজ বলেন, আব্দুর রহমান বিন আবী বকরের পরিবারের এক মহিলা বলেন, আব্দুর রহমানের স্ত্রী ছেলে সন্তান প্রসব করে, তখন আমরা তার পক্ষ থেকে একটি ভেড়া জবাই করেছি। তখন হযরত আয়শা রাঃ বললেন-এমনটি নয়, বরং পদ্ধতি হল-ছেলের পক্ষ থেকে দু’টি সমান পর্যায়ের বকরী আর মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী দিবে [আক্বিকা]।

তারপর এটিকে রান্না করবে, তবে এর হাড্ডিকে ভাঙ্গবে না। তারপর তা নিজে খাবে, অন্যকে খাওয়াবে, এবং দান করবে।

একাজগুলো করবে সপ্তম দিন, সেদিন সক্ষম না হলে চৌদ্দতম দিন, সেদিনও সক্ষম না হলে একুশতম দিন করবে আক্বিকা। [মুসনাদে ইসহাক বিন রাহহুয়া, হাদীস নং-১২৯২}

উম্মে কুরযিল কা’বিয়্যাহ রাঃ বলেন-আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, ছেলের জন্য দু’টি একইমানের বকরী ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরী [আক্বিকা দিবে]। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৩৬, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৫১৩, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৯৬৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৩১৩, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪৬৪৮, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহহুয়া, হাদীস নং-১২৯০}

৫- শিশুর ভাল নাম রাখা

শিশু সন্তানের ভাল নাম রাখা পিতা-মাতার দায়িত্ব। এ নাম তাৎপর্যবহ ও অর্থবোধক ও প্রশংসনীয় হওয়া উচিত। এ নামেই তাকে ডাকা হবে। ভাল নাম রাখা তাগিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন।

হযরত আবু দারদা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের নাম ও পিতার নাম ধরে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা ভাল নাম নির্বাচন কর। {আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৫০}

পুত্র সন্তানের নামের ক্ষেত্রে নবীদের নাম, সাহাবীদের নাম, বুজুর্গদের নামের সাথে মিলিয়ে রাখলেই ভাল। আর কন্যা সন্তানের নাম মহিলা সাহাবী, বা প্রাক-ইসলামী যুগের মহীয়সী নারীদের নামের সাথে মিলিয়ে রাখা উচিত।

৬- শিশুর খৎনা বা মুসলমানী করানো

পুত্র সন্তানের মুসলমানী করানো ইসলামের একটি অন্যতম বিধান। এ বিধান পরিত্যাগ করার কোন অবকাশ নেই।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, পাচটি জিনিস মানুষের প্রাকৃতিগত বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত। ১-খৎনা করা, ২-নিম্নাংশ পরিস্কার করা। ৩-গোঁফ খাট করা। ৪-নখ কাটা। ৫- বগলের লোম পরিস্কার করা। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৫৫৫০}

৭-শিশুদের প্রথম উক্তি হোক তাওহীদ ও রিসালাতের স্বীকৃতি:

শিশু যখন প্রথম কথা বলতে শুরু করে তখনই তার মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ জারী করার চেষ্টা করা।

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, শিশু যখ কথা বলতে শুরু করে, তখন সর্বপ্রথম তাদেরকে লা-ইলাহার ইল্লাল্লাহর তালকীন কর। কারণ যে ব্যক্তির প্রথম ও শেষ কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ হবে সে যদি হাজার বছরও বেঁচে থাকে, তবুও কোন গোনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে না। {সুনানে বায়হাকী, মুস্তাদরাকে হাকেম}

হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-তোমাদের সন্তানদের তিনটি অভ্যাসের অনুসারীরূপে গড়ে তোল। যথা-১-তাদের নবীর প্রতি, ২- নবী পরিবারের প্রতি ভালবাসা শিক্ষা দাও। ৩- কুরআনে কারীমের তিলাওয়াতের অভ্যাস তাদের মাঝে গড়ে তোল। {তাবরানী}

৮- মায়ের দুধ পান করানো

সন্তানকে কমপক্ষে দুই বৎসর মায়ের দুধ পান করানো শরীয়তের বিধান।

ইরশাদ হচ্ছে-

“আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ন দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়”। {সূরা বাকারা-২৩৩}

৯-আপন সন্তানকে অভিশাপ না দেয়া

সন্তানদের লালন-পালন ও পরিচর্যা একটি জটিল বিষয় ও ধৈর্যশীলতার কাজ। সন্তানের বাড়াবাড়িমূলক কাজ কিংবা অসমচীন কোন কার্মকান্ডে ক্রুদ্ধ হয়ে সন্তানকে গালমন্দ ও অভিশাপ দেয়া উচিত নয়। এ থেকে বিরত থাকতে হবে। অভিশাপ লেগে গেলে সারা জীবন পিতা মাতাই শোকতাপ করবে। হযরত জাবির রাঃ বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-নিজের জন্য সন্তানের জন্য ও নিজ অর্থ সম্পদের জন্য বদ দুআ ও অভিশম্পাত কর না। এমন মুহুর্ত না জানি পেয়ে যায়, যে মুহুর্তে আল্লাহ তাআলার নিকট যা যাচনা করা হবে, তাই কবুল হয়ে যাবে। {মুসলিম শরীফ}

১০-ধর্মীয় অনুভূতি সৃষ্টি করা

আল্লাহর মহত্ব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শ্রেষ্ঠত্ব,পরকাল,কুরআন ও হাদীস, নামাযসহ ধর্মীয় বুনিয়াদী বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়া। বিশেষ করে সাত বৎসর বয়স থেকেই নামাযের হুকুম দেয়া, এবং দশ বৎসর বয়স থেকে নামায না পড়লে কড়া শাসন করা।

সংকলক

মুফতী হাফীজুদ্দীন

প্রধান মুফতী ও পরিচালক

জামিয়াতুল আস’আদ আল ইসলামিয়া ঢাকা

মুহাদ্দিস-জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ ঢাকা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×