somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামের সুশীতল ছায়ায় নারী

০৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


একজন নারী ইসলামী শিক্ষা ও অনুপম আদর্শের ছায়া তলে ও ইসলোমের দিক নির্দেশনার আলোকে একটি সম্মানজনক অবস্থায় জীবন যাপন করতে পারে। ইসলামী বিধানে একজন নারী, সে যেদিন থেকে দুনিয়াতে আগমন করেছে, সেদিন থেকেই ইসলামী বিধানে তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার সম্মান ও মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তাকে কন্যা হিসেবে, মা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে, বোন হিসেবে, খালা, ফুফু ইত্যাদি হিসেব, তার জীবনের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন ধরনের সম্মান ও অধিকার আলাদা আলাদা করে দেয়া হয়েছে। একজন নারীর জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। ইসলামে নারীর অবস্থা বেধে একজন নারীকে বিভিন্ন ধরনের সম্মান ও অধিকার দেয়া হয়েছে। নিম্নে তার সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা তুলে ধরা হল।
১, কন্যা-সন্তান হিসেবে নারীর মর্যাদা:
কন্যা হিসেবে নারীর মর্যদা অধিক। ইসলাম কন্যা সন্তানদের প্রতি দয়া করা, তাদের নৈতিক শিক্ষা দেয়া, আদর যত্নসহকারে লালন-পালন করা এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে নেককার নারী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। পক্ষান্তরে জাহিলিয়্যাতের যুগে যে সব কাফের মুশরিকরা কন্যা সন্তানের জন্মকে অপছন্দ করত, তাদের বিরুদ্ধে ইসলাম কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, আর যখন তাদের কাউকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয়; তখন তার চেহারা কালো হয়ে যায়। আর সে থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত।
তাকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে, সে দুঃখে সে কওমের থেকে আত্মগোপন করে। অপমান সত্ত্বেও কি একে রেখে দেবে, না মাটিতে পূতে ফেলবে? জেনে রেখ, তারা যা ফয়সালা করে, তা কতই না মন্দ! [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৫৮,৫৯]
বুখারী ও মুসলিমে মুগিরা ইবনে শু'বা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা তোমাদের উপর মাতা-পিতার নাফরমানি করাকে হারাম করেছেন, ভিক্ষা করা ও কন্যা সন্তানদের পুতে হত্যা করাকে হারাম করেছেন।
হাফেজ ইবনে হাযার আসকালানী রহ. বলেন, জাহিলি যুগের লোকেরা কন্যা সন্তানদের দুটি পদ্ধতিতে হত্যা করত :
এক.
তারা তাদের স্ত্রীদের যখন সন্তান প্রসবের সময় হত, তখন তারা তাদের নির্দেশ দিয়ে বলত, তারা যেন একটি গুহার নিকট চলে যায়। তারপর যখন কোন পুত্র সন্তান জন্ম লাভ করত, তখন তাকে জীবিত রাখত। আর যখন কোন কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করত, তখন তাকে গর্তে নিক্ষেপ করে হত্যা করে ফেলত।
দুই.
যখন তাদের কন্যা সন্তানদের বয়স ছয় বছর হত, তখন তারা তাদের সন্তানের মাকে বলত, তাকে তুমি সাজিয়ে দাও! আমি তাকে নিয়ে আমার আত্মীয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যাব। মা তাকে সাজিয়ে দিলে, তার পিতা তাকে নিয়ে গভীর বন- জঙ্গলে চলে যেত এবং কুপের নিকট এসে তাকে বলত, তুমি একটু নিচের দিকে তাকিয়ে দেখ, সে যখন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখত, তখন তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে কুপের মধ্যে ফেলে দিত। তারপর মাটি চাপা দিয়ে অথবা পাথর মেরে হত্যা করে ফেলত। এ ভাবেই তাদের মধ্যে কন্যা সন্তানদের হত্যা করার ধারাবাহিকতা যুগ যুগ ধরে চলছিল। ইসলামের আগমনের পর ইসলাম নারীদেরকে আল্লাহর পক্ষ হতে বড় একটি নেয়ামত হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং কন্যা সন্তানদের হত্যা করার প্রবণতা বন্ধ করে দেন এবং ঘোষণা দেন যে , কন্যা সন্তান হত্যা করা জঘন্য অপরাধ। কারণ, কন্যা সন্তান জন্ম কোন মানুষের কর্মের ফল নয়, বরং তাও আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে চান কন্যা সন্তান দেন আবার যাকে চান পুত্র সন্তান দেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা বলেন, আসমান সমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে পুত্র ও কন্যা উভয়ই দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করেন। তিনি তো সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪৯-৫০]
মুসনাদে আহমদে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন ব্যক্তির যদি একজন কন্যা সন্তান থাকে এবং সে তাকে হত্যা করেনি, কোন প্রকার অবহেলা করেনি এবং পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের উপর কোন প্রকার প্রাধান্য দেয়নি। আল্লাহ তাকে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [মুসনাদে আহমদ: ২২৩/১]
ইবনে মাজা উকবা ইবনে আমের হতে বর্ণনা করেন,তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে এবং সে তাদের লালন- পালনে ধৈর্য্য ধারণ করে ও তাদের ভালো কাপড় পরায়, তখন তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিবন্ধক হবে। [ইবনে মাজা; ৩৬৬৮]
ইমাম মুসলিম তার সহীহতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি দুই জন কন্যা সন্তান লালন- পালন করে, কিয়ামতের আমি এবং সে দুটি আঙ্গুলের মত এক সাথে মিলেই উপস্থিত হব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঙ্গুল দুটি মিলিয়ে দেখান। [সহিহ মুসলিম; ২৬৩১]
ইমাম বুখারী আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে জাবের রা. হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে লোকের তিন জন বাচ্চা থাকবে এবং সে তাদের যথাযত বরণ- পোষণ, লালন-পালন ও আদর-যত্ন সহকারে ঘড়ে তুলবে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতকে ওয়াজিব করে দেবে। এ কথা শোনে এ লোক দাড়িয়ে বলল, যদি দুইজন কন্যা সন্তান থাকে, তা হলে কি বিধান হে আল্লাহর রাসূল? তখন রাসূল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলল, দুই জন হলেও একই বিধান। (অর্থাৎ সেও এ ফজিলতের অধিকারী হবে) [বুখারি আদাবুল মুফরিদ; ১৭৮]
বুখারী মুসলিমে আয়েশা (রা). হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন গ্রাম্য লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন তোমরা কি তোমাদের বাচ্চাদের চুমু দাও? আমরা আমাদের বাচ্চাদের কখনোই চুমু দেই না। এ কথা শোনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার অন্তর থেকে যদি আল্লাহ তা‘আলা দয়া কেড়ে নিয়ে যায়, আমি তা কখনোই বাধা দিয়ে রাখতে পারব না। [বুখারি আদাবুল মুফরিদ; ৫৯৯৬, মুসলিম; ২৩১৭]
আপনি কি ইসলামে নারীর সম্মান সম্পর্কে জানতে চান
Click This Link অথবা নারী কে? এ সম্পর্কে জানতে Click This Link

ইনশাল্লাহ আগামীতে আসবে (মা হিসেবে একজন নারীর মর্যাদা)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৪১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×