গাড়ি ছুটে চলেছে পাকিস্তানের করাচির বুক চিরে। আমাকে এবং শিশিরকে নিয়ে মুশফিক দুষ্টামিতে ব্যস্ত। মুশফিকের স্বভাবই এমন, সে সবাইকে নিয়ে হাসাহাসি করে। আমার পাশেই আছে তামিম। আজ তামিমকে অন্যরকম দেখাচ্ছে। হঠাৎ তামিম বললো, ‘আচ্ছা, আমাদের উপর যদি সত্যিই হামলা হয়?' তামিমকে বললাম ‘ধুর পেঠুক, আমরা বাঘের বাচ্চা, নিশ্চিত মৃত্যু যেনেও পাকিস্তানে খেলতে এসেছি।' পিছন থেকে মাশরাফি বললো, ‘কিছুই হবে না, আমাদের জন্য তো বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।’ তবুও সবার মনে আতঙ্ক। এর মাঝেও মুশফিককে থামায় কে, হেসেই চলেছে অবিরাম।
আমরা এখন স্টেডিয়ামের খুব কাছেই। এনামুল বললো, ‘সাকিব ভাই, যাত্রাতো প্রায় শেষ, মনে হয় বেঁচে গেলাম।’ গাড়িতে সবার মুখেই হাসি, এমন সুযোগে মুশফিক ব্যস্ত খেলার পরিকল্পনায়। কিন্তু হঠাৎ সামনের নিরাপত্তা রক্ষীদের গাড়িগুলো বোমার আঘাতে লন্ড ভন্ড। দ্বিতীয় হামলা হয় আমাদের গাড়িতে। মুহূর্তের মধ্যে বীভৎস চিত্র। চারপাশে রক্তের বন্যা। অসহ্য মৃত্যু যন্ত্রণা, অপেক্ষা মৃত্যুর। মৃত্যু ছায়ায় তন্দ্রাচ্ছন্ন নয়ন, চারপাশে অগণিত গুলির শব্দ আর ছুটাছটি। যুদ্ধ চলছে পাকিস্তানি জঙ্গিদের সাথে সেনাবাহিনীর। এরই মাঝে একদল লোক আমাকে এ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাচ্ছে।
নিজেকে বার বার প্রশ্ন করছি, আমরা পাকিস্তানে আসলাম কেনো? যতই নিরাপত্তা দেওয়া হোক না কেনো, একদল মানুষকে মারার জন্য একটি বোমাইতো যথেষ্ট। হয়তো পত্রিকাগুলি কাল থেকে আমাদের নামে শোকের ঝড় তুলবে। লাল শিরোনামে তুলে ধরবে পঙ্গু সাকিবের জীবনী; সর্বোচ্চ জাতীয় মর্যাদা পাবে মৃত মুশফিক, তামিম। রিপোর্টাররা খুঁজে বের করবে পাকিস্তান জঙ্গি হামলার ইতিহাস। দুর্ঘটনাকামী সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানাবে আমাদের পাকিস্তান সফর সিদ্ধান্তের।
দেশের গুয়েন্দা সংস্থাগুলো কি জানতো না, প্রতি মাসে পাকিস্তানে গড়ে তিন হাজার মানুষ জঙ্গী হামলায় মারা যায়? মাসে শতের বেশী হামলা হয়? দেশের মানুষ গুলি কি ভুলে গিয়েছিলো পাকিস্থানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাই কেড়ে নিয়েছিল সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর জীবন। একজন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা কি আমাদের থেকে কম ছিলো? পাকিস্তানের বিমান বাহিনির মূল ঘাঁটিতে জঙ্গি হামলা হয়। পাকিস্তানের সেনবাহিনীর ক্যাম্পের পাশে এসে হামলা চালায় ভিনদেশীরা। পাকিস্থানের সব থানা জঙ্গি হামলার শিকার। যে দেশের নিরাপত্তারক্ষিরা নিজেদের নিরাপত্তা দিতে পারে না, সেখানে আমাদের কেনই বা পাঠানো হলো?
দেশের হাজারো ছেলের মধ্যে একজনই হার্ডহিটার তামিম থাকে, মুশফিকের মত দুরন্ত ছেলের জন্ম বাঙলার মাটিতে লক্ষ্য ঘরে একবার হয়। মাশরাফির মত দুর্দান্ত ছেলে চৌষট্টি জেলায় একজনই জন্মে। কিন্তু আমাদের অপূর্ণতা প্রকাশ পাবে সেই দিন, যখন গড়া হবে কোন আবুল, বাবুল দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আমারাই এক করেছিলাম বাঙলার কোটি মানুষকে। সময়ে সবাইকে বিজয়ের আনন্দে ভাসাতাম, পরাজয়ে থাকতো কোটি মানুষের অশ্রুভরা নয়ন। ক্যারিয়ারের চাপ সামলাতে এসেছিলাম এই নরকপুরীতে। একদিন গর্ব করে বলতাম আমরা দেশের হয়ে খেলি, দেশের প্রতিনিধিত্ব করি। কিন্তু এখন ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে, সত্যি কি দেশের মানুষ আমাদের ভালোবাসতো? যদি ভালোইবাসতো পাকিস্তানে আসতে দিয়েছিলো কেনো? অগ্নিঝরা প্রতিবাদ কি হতে পারতো না আমাদের বাঁচাতে?
*** লেখাটি কাল্পনিক। কিন্তু একবার চিন্তা করুন তো সত্যি যদি এরকম হয়, তাহলে? এই কালকেও তো পাকিস্তানে জঙ্গী হামলায় মারা গেলো একজন প্রাদেশিক মন্ত্রী সহ বেশ কজন! পাকিস্তানের মতো মূর্তিমান নরকে জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবীতে প্রতিবাদ আমরা কি ঠিকভাবে করছি?
FERDAUS AHMED NOBIN

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



