somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাই হিরু'স নং ১

২৭ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুহুল আমীন ভাই।
সাম হাও মাই হিরু, মাই ইন্সপাইরেশন।

আমার এক্স কলিগ। গত ডিসেম্বরের কনকনে শীতের সকালে অফিসে গিয়ে দেখি আমার পাশের ডেস্কে একজন অপরিচিত লোক বসা।
কিছুক্ষণ পরে চা পর্ব শেষে আমার ম্যানেজার আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো,
"ইমরান, রুহুল আমীন সাহেব আমাদের রিয়েল এস্টেটে জয়েন করেছে। এসসিটেন্ট ম্যানেজার হিসাবে "।
হাই হ্যালো হলো।
তখন হরতাল সাড়া দেশে। মানুষ পোড়ানু হচ্ছে, বাসে আগুন। অফিস থেকে নিষেধ জরুরী কাজ না থাকলে বাইরে যাওয়ার দরকার নাই। স্টে সেফ ফার্স্ট।

তো, উনার সাথে প্রথম কয়েকদিন আলাপ করার সুযোগ হচ্ছিলনা। ভদ্রলোক ডেসিগ্নেশনে আমার সিনিয়র, বয়সেও। তাই আমি ডেস্কে বসে বসে ফেবু চালাইতাম।
আর মাঝে মাঝে ক্লায়েন্ট ফলোআপ করতাম। ফোনে যোগাযোগ রাখতাম। পি আর টা মেন্টেইন করতাম।
জ্বালাও, পোড়াও এটা সেটা নিয়ে মাঝে মাঝে আমি, আমার ম্যানেজার, কলিগরা আড্ডা দিতাম। রুহুল ভাইও জয়েন করতো। বাট কথা কম বলতো।
ফেসবুকে শীতার্তদের নিয়ে বিভিন্ন ইভেন্টের কাজে বিকালে অফিস শেষে ফিল্ডে কিছু পোলাপাইন নিয়ে রাস্তায়, পার্কে ভিক্ষা করতাম।
মোবাইল টিপাটিপি দেখে রুহুল ভাই জিজ্ঞেস করলো, সাড়াদিন মোবাইলে কি করেন ভাই?
আমার ম্যানেজার বললো, " রুহুল ভাই, ইমরান তো ব্লগার, লেখালেখি করে "।
রুহুল ভাই, চুখ বড় বড় করে তাকিয়া থাকলেন।
তারপরে প্রায়ই আমরা নীচে চা, সিগারেট খেতে যেতাম। ততোদিনে সম্পর্কটা ভাই-ব্রাদার হয়ে গেছে।

সে দিন, ইভেন্টের কাজে মিরপুর চিড়িয়াখানায় ভিক্ষা করার ডেট।
আমি রুহুল ভাই কে বললাম, " রুহুল ভাই আমি আজকে একটু তাড়াতাড়ি বের হবো। আমার ইভেন্টের একটা কাজ আছে।
উনি খুব খুশি হলেন।
এইসব, অনলাইন ইভেন্টের কাজ করতে গেলে বিভিন্ন ধরনেত কম্পলিকেশন্স দেখা দেয়। কারণ, এখানে যারা কাজ করে, তারা কেও কারো পুর্ব পরিচিতো না। শুধু লাইক,কমেন্টের মাধ্যমে পরিচয়।
হৃদয়ের সম্পর্ক নাই কারো সাথে কারোর।
তাই, কাজ উদ্ধার করা এবং লক্ষে পৌছা খুব কঠিন হতো।

চলতেছিলো আমার মোটামোটি এভাবেই।
১৩ ডিসেম্বর সকালে, অফিসে একটু লেটে এসে শুনি রুহুল ভাই স্টার কাবা রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে গেছে।
চিন্তা করলাম, যাই একটু ঘুরে আসি।
বানানী পোষ্ট অফিসের কাছে এসে দেখি রুহুল ভাই ফুটপাথে কাধে ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা কিনতাছে।
পাশে একটা বুড়া মহিলা দাঁড়ানো, কুলে একটা ছেলে বাচ্চা।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম " কি করতেছেন ভাইয়া! "
- দেখনা, ইমরান, এই মহিলার নাতিটার গায়ে একটাও শীতের জামা নাই। আমার হাতেও বেশি টাকা নাই, ভালো কোথাও থেকে জামা কিনে দেয়ার। তাই এইখান থেকে দিচ্ছি। "

সন্ধ্যায় একসাথে বের হয়ে বনানী ১১ নাম্বারের দিকে হাটতেছি।
হঠাৎ, রুহুল ভাই এক বৃদ্ধা মহিলা কে দেখে তাকে থামালেন।
কাধের ব্যাগ থেকে, পুড়ানো একটা বার্মিজ শাল বের করে মহিলা কে দিলেন।
আমি যাষ্ট স্পিচলেস হয়ে গেলাম!
রুহুল ভাই আমার হাত ধরে বললেন " ইমরান, আমি বহু মানুষের সাথে মিশেছি, কিন্তু তোমার মত ছেলে খুব কম এসেছে আমার জীবিনে। তুমি, চাকরী, লেখালেখি, সোস্যাল রেস্পন্সিবিলিটি, পারিবারিক দায়বদ্ধ্যতা একসাথে কিভাবে করো! আমি ভাই, তোমার বয়সে তোমার মতই ছিলাম। তোমার আদর্শ আর আমার আদর্শ এক।"

রুহুল ভাই বলতেছেন " আমি, শীতের সময়ে সবসময় কাধে একটা ব্যাগ রাখি। অফিস শেষে বাসায় ফিরার সময়ে প্রতিদিন একটা বন্ধুর বাসায় গিয়ে তাদের পুড়ান শীতের জামা সংগ্রহ করি।
তারপরের দিন, ব্যাগ নিয়ে সন্ধ্যায় ঘুরি, আর সত্যিকারের দঃস্থদের খুজে দিয়ে দেই।
ইমরান, তুমি আর তোমরা যেটা করতেছ, সেভাবে অনেকেই তোমাদের ইভেন্টে লাইক দিবে, কিন্তু অংশগ্রহণ করবে খুব কম।
কিন্তু যদি তোমরা এইভাবে, প্রতিদিন নিজেরা একজনের বাসা ভিজিট করো, দেখবা ডেইলী একজন শীতার্তকে জামা দিতে পারবা "
আমি মন্ত্র মুগ্ধের মতো তার ইউনিক আইডিয়া শুনলাম।
পরদিন থেকে আমি কাধে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে আমার বন্ধু, আত্ত্বীয় স্বজন্দের বাসায় ঘুরে ঘুরে প্রতিদিন জামা উঠাতাম।
আর দুজন মিলে মনের সুখে রাস্তায় হাঠতাম আর মানুষ্কে দিতাম।
আমাদের চেয়ে বেশি সুখে সম্ভবতো দুনিয়াতে তখন কেও ছিলোনা।

মাস ছয়েক হয়ে গেলো রুহুল ভাই আমাদের কম্পানী থেকে অন্য জায়গায় চলে গেছে।
কিন্তু রয়ে গেছে রুহুল ভাইয়ের ভালোবাসা, শিক্ষা, আর সেই ডাক " ইমরান "!
কিছক্ষন আগে রুহুল ভাই ফোন দিয়ে বলতেছে " ইমরান, আপনি কালকে একটু আমার অফিসের দিকে আসবেন! আপনাকে বহুদিন ধরে জড়িয়ে ধরিণা। বহুদিন ধরে, সিগারেট শেয়ার করিনা আপনার সাথে।! ইফতারীর পরে একটু আসবেন, ইমরান! "
ইদানিং খুব ভয়ে থাকি, দিন দিন ভালোবাসার মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে!
আমি কি পাড়বো তাদের প্রাপ্য প্রতিদান দিতে!
আচ্ছা, ভালোবাসার কি প্রতিদান হয়।
I love you man!

সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৫০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×