আজ নির্বাচন। আমাদের দেশে নির্বাচন একটি উৎসব। আনন্দের একটি উপলক্ষ। জাতি হিসেবে অনেক বিষাদময় সময় আমাদের কাটাতে হয়েছে। উৎসবের সময় এসেছে সে তুলনায় অনেক কম।
নির্বাচন আমার জন্য আনন্দের উপলক্ষ আএকটি ব্যক্তিগত কারণেও, যেটা শুনতে কিছুটা হাস্যকরও মনে হতে পারে। সেটা হলো - আমার মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিলো টানা। নির্বাচনের কারণে তিনদিনের একটা ব্রেক দিতে বাধ্য হয়েছে বলা চলে। এ কথা বলছি কারণ গত ২৬ তারিখ শুক্রবারেও আমাকে পরীক্ষা দিতে হয়েছে।
সকাল থেকেই টিভিটা খোলা ছিলো। ভোরবেলায় বিবিসির প্রোগ্রামও শুনলাম এফএম রেডিওতে।
মা ঘুম ভাঙালেন সকাল সাতটায়। জিজ্ঞেস করলেন, কখন থেকে ভোট নেয়া শুরু?
আমি বললাম, আটটায়।
মা বলেন, ঠিক আছে। আমি তাহলে রেডি হয়ে চলে যাই। আইডি কার্ডটা কি লাগবে?
আমি বললাম, ভোট দেয়ার জন্য আইডি কার্ডের কোন ভূমিকা নেই। তবে তুমি সঙ্গে রাখতে পারো। ইম্পরট্যান্ট হল তোমার ভোটার নম্বরটা।
ঐটা যেন কত? - মার প্রশ্ন।
উফ, তোমার জ্বালায় ঘুমাতেও পারব না....
দাঁড়া দাঁড়া। পেয়েছি মনে হয়। এটা না? - মা দুইটা কাগজ দেখালেন। একটা আওয়ামী লীগের পক্ষে দেয়া আর একটা বিএনপির পক্ষ থেকে।
হুম, এটাই। এখন আমি ঘুমাবো।
ঘুমা। কিন্তু বেশি দেরি করিস না। ৩১ তারিখেই কিন্তু তোর পরীক্ষা।
আচ্ছা ঠিক আছে।
মা চলে গেলেন।
আমি আর বেশি দেরি করলাম না। উঠে পড়লাম।
রিফাতের ফোন এলো।
আচ্ছা তুই তোর ভোটার নাম্বার জেনেছিস কোথা থেকে?
আমি বললাম, নির্বাচন কমিশনের একটা অ্যাড্রেস আছে। ওখান থেকে একটা পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে নিতে হয়।
অ্যাড্রেসটা বল।
অ্যাড্রেসটা ঠিক খেয়াল নেই। দাঁড়া আমি পিসি অন করে তোকে বলছি।
পাওয়ার বাটন চেপে পিসি অন করলাম। নেটে কানেক্টেড হয়ে খুঁজে বের করলাম অ্যাড্রেসটা। মিস কল দিলাম রিফাতকে। ও কলব্যাক করল।
ওয়ান টু থ্রী ডট ফোর নাইন ডট থ্রী নাইন ডট ফাইভ স্ল্যাশ ভোটার লিস্ট।
উদ্ভট অ্যাড্রেস।
উদ্ভট হোক আর যাই হোক এটাই অ্যাড্রেস। এখানে গিয়ে তোর এলাকা চুজ করে দিবি। তারপরে ভোটার তালিকাতে ক্লিক করে পিডিএফ ফাইলটা ডাউনলোড করে নিবি। সেখানে সিরিয়াল অনুযায়ী সাজানো আছে।
ঠিক আছে। থ্যাংক ইউ।
টিভি ছাড়লাম। নাস্তা খেতে খেতে টিভি দেখলাম। উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছে।
শেখ হাসিনার ভোট দেয়াও দেখলাম। উনি অনেক সময় লাগিয়ে, পোজ দিয়ে ছবি তুললেন। এক মিনিটের মাঝে অন্তত এক সহস্র ক্যামেরা ঝলসে উঠল।
প্রেস ব্রিফিংও করলেন। তার সময়েই যে একমাত্র শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার রদবদল হয়েছিল তার উল্লেখ করলেন।
এবারের নির্বাচনের নতুন মাত্রা হল মিডিয়া। ২০০১ এ চ্যানেল ছিলো দুইটা - বিটিভি আর একুশে টিভি। চ্যানেল আই আর এটিএন বাংলাও ছিলো। কিন্তু তখন আমার বাসায় কেবল কানেকশন ছিল না। ইন্টারনেট তো ছিল চরম দুর্লভ এক বস্তু।
বাসায় মোবাইল ছিল একটা। তাও সেটাকে এমনভাবে আগলে রাখা হত যেন যক্ষের ধন।
আজ বাসায় তিন সদস্যের মোবাইলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচে।
মানুষের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে অনেক। আর সেটাই আমাকে আশাবাদী করে তোলে।
আশা করি যুদ্ধাপরাধীদের আর কোনদিন ক্ষমতায় দেখতে হবে না। আমার জীবদ্দশায় দেখা সবচেয়ে কুৎসিত দৃশ্য এটি।
চলুক ভোটদানের উৎসব। নব জাগরণের উৎসব। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধের উৎসব।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





