somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জামাত এবং তরুণ প্রজন্ম

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হয়ে গেল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৩০০টি আসনের মাঝে ২৯৯টি আসনের ফলাফলও চূড়ান্ত। পরিসংখ্যানটি সবারই জানা, তাই পুনরুল্লেখ অপ্রয়োজনীয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধিক যদি কিছু থেকে থাকে, তবে তাই পেয়েছে।

এখন সময় এসেছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের। আমি কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক নই। নিতান্তই সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে আমি যাবুঝেছি তাই বলছি। কোন ব্যাপারে দ্বিমত থাকলে বলবেন আশা করি।

প্রথম কথা হল - বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট যতই দুর্নীতি আর দ্রব্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষের জীনকে দুর্বিসহ করে তুলুক না কেন, পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তাদের এই মহাবিপর্যয় ছিল অপ্রত্যাশিত। বিশেষত গত দুই মাসে বিশ্লেষকমহলে এ কথা বার বার উচ্চারিত হচ্ছিল যে বিএনপি ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী দুর্দশা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। জয়ের পাল্লা কখনোই হয়ত বিএনপির দিকে ঝোঁকে নি, কিন্তু তার মানে এই নয় কেউ এই ভরাডুবির কথা আন্দাজ করতে পেরেছিল।

কেন এমন হল? বিএনপি হয়তো এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করবে। তারা কি বের করবে জানি না, কিন্তু আমি মোটামুটি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি একটি প্রধান কারণের কথা। সেটি হল - নতুন প্রজন্মের ভোটার। এবারের নির্বাচনে প্রায় ২৫ শতাংশই ছিল নতুন ভোটার। এই নতুন ভোটারের মাঝে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সমর্থক প্রায় সমান (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)। একটি ক্ষুদ্র অংশ চরম বাম কিংবা চরম ডান রাজনীতিতে বিশ্বাস করে যারা কোন বড় ফ্যাক্টর নয়।

এই নতুন ভোটারদের মাঝে একটি বিষয় খুবই লক্ষণীয়। জামাতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটিকে রাজনীতি করতে দেয়া উচিত কিনা সেটা নিয়ে তাদের মাঝে দ্বিধা আছে (যদিও আসলে দ্বিধার জায়গা নেই, কারণ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নির্বাচন কমিশনের শর্তগুলো পূরণ করতে পারে নি। নির্বাচন কমিশন নিজেই নিজের শর্ত ভঙ্গ করে তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুমতি দিয়েছে)। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা সরাসরি যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল, জামাতে ইসলামীর সেইসব নেতাদের বিচার করা উচিত - এই ব্যাপারে প্রায় শতভাগ তরুণ ভোটারেরাই একমত, ঐ অতি ক্ষুদ্র চরম ডান অংশটি ছাড়া।

গত কয়েক বছরে ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার প্রসার হয়েছে অনেক। টেলিভিশন, পত্রিকা এবং ইন্টারনেট - এই তিনটি প্রধান প্রচারমাধ্যমে বার বার উচ্চারিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি। একই সাথে আলোচিত হয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলো। এগুলো সবই যায় জামাতের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নয় - এটি এর আগেও প্রমাণিত হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু গত প্রজন্মের ভোটারদের মার্কাপ্রীতির কারণে অনেক ধর্মভিত্তিক দল সুযোগ পেয়েছে ক্ষমতায় বসার।

বিএনপির ভরাডুবির এটি একটিমাত্র কারণ। এছাড়াও আছে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং পরিবারতন্ত্রের বিষয়গুলো। আপাতত সেদিকে যাচ্ছি না।

এখন দেখার বিষয় হল, জামাতকে প্রতিহত করাতে তরুণ প্রজন্মের যে ভূমিকা সেটিকে বিএনপি কিভাবে নেয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং সম্ভবত আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থকেরাও আমার সাথে একমত হবেন, জামাতকে সঙ্গী না করলে বিএনপি নিঃসন্দেহে আরো বেশি ভোট পেত। এই কথাটা বিএনপির বোঝাটা জরুরী। মানুষ দুই ভাবে শেখে; দেখে এবং ঠেকে। বিএনপির তো দেখা এবং ঠেকা দুটোই একসাথে হয়ে গেছে। তারা কি শিখবে কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন।

আগামী পাঁচ বছরে মানুষের মাঝে যুদ্ধাপরাধ এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপক্ষে সচেতনতা আরো বাড়বে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। বাংলাদেশের মানুষ তাদের পতাকার দায়িত্ব আর কোন যুদ্ধাপরাধীর হাতে তুলে দিতে চায় না। এ কথা বিএনপি যত দ্রুত উপলব্ধি করবে ততই ভালো।

বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এখন কি করা উচিত সে বিষয়ে একটি স্টিকি পোস্ট এখন ব্লগের প্রথম পাতায় রয়েছে। আমি পোস্টের বিষয়বস্তুর সাথে শতভাগ একমত। তাই এ ব্যাপারে আর কথা বাড়ালাম না।

শেষ কথা একটাই - জামাতের সঙ্গ না ছাড়লে বিএনপি ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল, যেটি বিপুল সংখ্যক মানুষের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে, সেটির বিলোপ এবং জামাতের মত উগ্র একটি দলের উত্থান কখনোই কাম্য হতে পারে না। নিজেদের বাঁচানো এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে হৃত সমর্থন পুনরুদ্ধার করতে হলে বিএনপিকে এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৪৭
১১টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×