হয়ে গেল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৩০০টি আসনের মাঝে ২৯৯টি আসনের ফলাফলও চূড়ান্ত। পরিসংখ্যানটি সবারই জানা, তাই পুনরুল্লেখ অপ্রয়োজনীয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার অধিক যদি কিছু থেকে থাকে, তবে তাই পেয়েছে।
এখন সময় এসেছে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের। আমি কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক নই। নিতান্তই সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে আমি যাবুঝেছি তাই বলছি। কোন ব্যাপারে দ্বিমত থাকলে বলবেন আশা করি।
প্রথম কথা হল - বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট যতই দুর্নীতি আর দ্রব্যমূল্যের চাপে সাধারণ মানুষের জীনকে দুর্বিসহ করে তুলুক না কেন, পরিসংখ্যানগত দিক থেকে তাদের এই মহাবিপর্যয় ছিল অপ্রত্যাশিত। বিশেষত গত দুই মাসে বিশ্লেষকমহলে এ কথা বার বার উচ্চারিত হচ্ছিল যে বিএনপি ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী দুর্দশা অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে। জয়ের পাল্লা কখনোই হয়ত বিএনপির দিকে ঝোঁকে নি, কিন্তু তার মানে এই নয় কেউ এই ভরাডুবির কথা আন্দাজ করতে পেরেছিল।
কেন এমন হল? বিএনপি হয়তো এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করবে। তারা কি বের করবে জানি না, কিন্তু আমি মোটামুটি চোখ বন্ধ করে বলতে পারি একটি প্রধান কারণের কথা। সেটি হল - নতুন প্রজন্মের ভোটার। এবারের নির্বাচনে প্রায় ২৫ শতাংশই ছিল নতুন ভোটার। এই নতুন ভোটারের মাঝে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সমর্থক প্রায় সমান (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি)। একটি ক্ষুদ্র অংশ চরম বাম কিংবা চরম ডান রাজনীতিতে বিশ্বাস করে যারা কোন বড় ফ্যাক্টর নয়।
এই নতুন ভোটারদের মাঝে একটি বিষয় খুবই লক্ষণীয়। জামাতে ইসলামী নামের রাজনৈতিক দলটিকে রাজনীতি করতে দেয়া উচিত কিনা সেটা নিয়ে তাদের মাঝে দ্বিধা আছে (যদিও আসলে দ্বিধার জায়গা নেই, কারণ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নির্বাচন কমিশনের শর্তগুলো পূরণ করতে পারে নি। নির্বাচন কমিশন নিজেই নিজের শর্ত ভঙ্গ করে তাদের নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুমতি দিয়েছে)। কিন্তু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা সরাসরি যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত ছিল, জামাতে ইসলামীর সেইসব নেতাদের বিচার করা উচিত - এই ব্যাপারে প্রায় শতভাগ তরুণ ভোটারেরাই একমত, ঐ অতি ক্ষুদ্র চরম ডান অংশটি ছাড়া।
গত কয়েক বছরে ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ার প্রসার হয়েছে অনেক। টেলিভিশন, পত্রিকা এবং ইন্টারনেট - এই তিনটি প্রধান প্রচারমাধ্যমে বার বার উচ্চারিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি। একই সাথে আলোচিত হয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলো। এগুলো সবই যায় জামাতের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মভীরু, কিন্তু ধর্মান্ধ নয় - এটি এর আগেও প্রমাণিত হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু গত প্রজন্মের ভোটারদের মার্কাপ্রীতির কারণে অনেক ধর্মভিত্তিক দল সুযোগ পেয়েছে ক্ষমতায় বসার।
বিএনপির ভরাডুবির এটি একটিমাত্র কারণ। এছাড়াও আছে দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং পরিবারতন্ত্রের বিষয়গুলো। আপাতত সেদিকে যাচ্ছি না।
এখন দেখার বিষয় হল, জামাতকে প্রতিহত করাতে তরুণ প্রজন্মের যে ভূমিকা সেটিকে বিএনপি কিভাবে নেয়। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এবং সম্ভবত আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ সমর্থকেরাও আমার সাথে একমত হবেন, জামাতকে সঙ্গী না করলে বিএনপি নিঃসন্দেহে আরো বেশি ভোট পেত। এই কথাটা বিএনপির বোঝাটা জরুরী। মানুষ দুই ভাবে শেখে; দেখে এবং ঠেকে। বিএনপির তো দেখা এবং ঠেকা দুটোই একসাথে হয়ে গেছে। তারা কি শিখবে কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন।
আগামী পাঁচ বছরে মানুষের মাঝে যুদ্ধাপরাধ এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির বিপক্ষে সচেতনতা আরো বাড়বে এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। বাংলাদেশের মানুষ তাদের পতাকার দায়িত্ব আর কোন যুদ্ধাপরাধীর হাতে তুলে দিতে চায় না। এ কথা বিএনপি যত দ্রুত উপলব্ধি করবে ততই ভালো।
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এখন কি করা উচিত সে বিষয়ে একটি স্টিকি পোস্ট এখন ব্লগের প্রথম পাতায় রয়েছে। আমি পোস্টের বিষয়বস্তুর সাথে শতভাগ একমত। তাই এ ব্যাপারে আর কথা বাড়ালাম না।
শেষ কথা একটাই - জামাতের সঙ্গ না ছাড়লে বিএনপি ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল, যেটি বিপুল সংখ্যক মানুষের মতামতের প্রতিনিধিত্ব করে, সেটির বিলোপ এবং জামাতের মত উগ্র একটি দলের উত্থান কখনোই কাম্য হতে পারে না। নিজেদের বাঁচানো এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে হৃত সমর্থন পুনরুদ্ধার করতে হলে বিএনপিকে এখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





