
বাংলাদেশের সরকার ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে ব্রিটিশ সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।
পত্রিকাটির গত ৩০শে জুলাই প্রকাশিত সংখ্যায় বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যেকার সম্পর্ক নিয়ে এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ভারতের দেওয়া অর্থের সুবাদে ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছে এমন মন্তব্য করা হয়। এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বেশ কিছু দিক নিয়ে সমালোচনাও করা হয়।
এর পর আজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি দুর্বল গবেষণার ভিত্তিতে লিখিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, এখানে তথ্যবিভ্রান্তি ঘটেছে এবং সত্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্টে প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “ভারতীয় অর্থ ও উপদেশের দ্বারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হবার পর থেকেই বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক সতেজ হয়।”
এর জবাবে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, এটি একটি চরম মিথ্যাচার এবং এটি দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রতি লেখকের অসম্মানজনক মনোভাবের পরিচয়।
দ্য ইকোনমিস্টের ঐ প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার ট্রানজিট নিয়েও বলা হয়েছে, এ বিষয়ে বাংলাদেশে অনেক মহলেই সংশয় রয়েছে৻
প্রতিবেদনটিতে মন্তব্য করা হয়েছে, “ঢাকায় সামরিক ও বেসামরিক মহলে এমন অনেকেই রয়েছেন, যারা সন্দেহ করেন এই ট্রানজিটকে ব্যবহার করে ভারত বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে অস্ত্র পরিবহণ করবে৻”
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এর ফলে ভারত নাগাল্যান্ড এবং মণিপুরের বিদ্রোহীদের সহজেই দমন করতে পারবে, যা বাংলাদেশকে ঐ বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর অঅক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে বলেও এরা আশঙ্কা করছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হচ্ছে, এ তথ্যটিও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, কেন না এই ট্রানজিটের মাধ্যমে দুই দেশই ব্যাপকভাবে লাভবান হবে।
প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধুমাত্র ভারতের সাথেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে ভুটান, শ্রীলংকা এবং মালদ্বীপের মধ্যে উচ্চপর্যায় থেকে নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরা হয়।
তবে প্রতিবাদলিপিতে এটাও বলা হয় যে, বাংলাদেশ ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ককে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখে। কারণ, এর সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভাষা জড়িত।
সম্প্রতি বাংলাদেশে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার দুজন শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীর সফর এবং আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন সফরের দিকে ইঙ্গিত করে দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনটিতে বলা হয় বলা হয়, ভারত বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ক্ষমতাসীন দলের ওপর খুব বেশী নির্ভর করছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “তবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ক্রমাগত স্বৈরাচারী মনোভাব দেখাচ্ছে।”
এ বিষয়ে ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেটি মাথায় রেখে বাংলাদেশের বিরোধী দলের সাথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করাটা দূরদৃষ্টির কাজ হবে, সেই প্রতিবেদনে এমনও মন্তব্য করা হয়েছে।
এর প্রতিবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য যে সব উদ্যোগ নিয়েছেন, তা সম্পর্কে লেখকের দুর্বল জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে !
দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনের মাধ্যমে কোন বিশেষ গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিবাদলিপিতে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত বীনা সিক্রি এই বিতর্ক নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বিবিসিকে বলেন, ভারত যে শুধু বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সাথে সম্পর্ক ভাল করার চেষ্টা করছে এ কথা ঠিক নয়, বরং অতীতে খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ও দিল্লির দিক থেকে একই রকম উদ্যোগ ছিল৻
ফলে বাংলাদেশে ভারতের কূটনীতি একপেশে বা ভারত ক্ষমতাসীন দলের ওপর বেশি নির্ভরশীলতা দেখাচ্ছে, এমন বক্তব্য তিনি মানতে রাজি হননি৻
লেখাটি বিবিসি থেকে নেয়া

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




