১.
প্রচন্ড তাপ প্রবাহের এই সময়ে সকাল আটটায় রান্না শেষ করে ঘাম মুছতে মুছতে শোবার ঘরে আসে যে তরুনী তার আর জীবনী শক্তি বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। সাড়ে আটটায় কাস। বাথরুমে পানি নেই। Worse half তখনও গড়াচেছ বিছানায়। সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্রিটির ক্লাসে যাওয়া হয়না আজও। দীর্ঘশ্বাস হয়ে বের হয় বিছানায় গড়ানো মানুষটির উক্তি, "রেজাল্ট খারাপ হলে মার খাবে"। অথচ যার কাছে প্রত্যাশা তাকে একাই এক হাতে করতে হয় রান্না, কাপড় কাঁচা, ঘর মোছা। বিশেষ ছুটিতে থাকা পতিদেব দশটায় খাওয়া সেরে যখন পাবলিক লাইব্রেরীতে যাচেছন, তখন বোধ হয় করুণার আভাস পাওয়া যায় তার কন্ঠে,
-তুমিও যাবে নাকি? বাসায় বসে কি করবে? কাসে তো গেলে না!
-বোরকা পড়ে যেতে ইচেচ করছে না। গরমে ঘেমে গিয়ে শ্বাস আটকে আসে। মুখ বন্ধ থাকে বলে বেশি খারাপ লাগে।
সহনুভ’তি আদায়ের চেষ্টাটা মাঠেই মারা যায়। কুঁচকানো ভ্রু, মুখ থেকে ছিটকে আসে কথাগুলো:
-কলেজের অর্ধেকের বেশি মেয়ে মুখ ঢেকে ক্লাস করে।
খন্ডন অকাট্য যুক্তি। কিছু বলার থাকে না। তরুনীটি মনে ভাবে, "কেন একদিন অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়ে যাই না?" ভেবেই কুঁকড়ে যায়, কারণ তখন অন্য প্রশ্ন সামনে আসবে, "কেন পড়ে গেলে? কতজন পুরুষ ধরে তুলেছে?" পাথর চাপা কষ্ট বয়ে বেড়ানো তরুনী ভাবে, " কেন যে পৃথিবীতে মেয়ে হয়ে জন্মালাম?" তার একবারও মনে পড়ে না , কোন পুরুষ কখনও আরেকটি প্রাণের জন্ম দিতে পারে না।
২.
H. S. C. পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে হোস্টেলের দিকে হেঁটে আসছিল এক কিশোরী। ভীড় ভাঙ্গা রাস্তায় রিক্শা না পাওয়ায় তিন রুমমেট গুটি গুটি আগাচিছল। জ্বর গায়ে পরীক্ষা দিতে দিতে কান্ত মেয়েটির দিকে ভীষণ এক মায়ায় হাত বাড়ায় বান্ধবীরা। হঠাৎই রাস্তায় দেখা গেল কর্মজীবি বাবাকে। কাছে আসতেই বাবার বিদ্রুপ মাখানো কন্ঠে ফিরে তাকায় চারপাশের মানুষ,
-মাথায় কাপড়টা থাকলে কি রাস্তার মধ্যে হাঁটা যায় না? মাথায় কাপড় দিলে কি মানসম্মান কমে, নাকি স্মার্টনেস কমে যায়?
দ্রূত মাথায় কাপড় টেনে নতমুখে হাটতে থাকা সেই কিশোরী সেদিন ভেবেছিল, "কেন এই বাবাটার ঘরেই জন্ম নিলাম।"
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১০:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




