পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো নিহত হওয়ার প্রধান কারণ নিরাপত্তায় গাফিলতি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অগোচরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেনি বলে জাতিসংঘ তদন্ত প্রতিবেদনের মন্তব্য ওই হত্যাকাণ্ডে কোন রাষ্ট্রীয় শক্তির জড়িত থাকার ইঙ্গিতবাহী। সন্দেহের তালিকা থেকে পাকিস্তানের প্রভাবশালী সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে যেন বাইরে রাখা না হয়Ñ প্রতিবেদনের এ মন্তব্যও তাৎপর্যপূর্ণ। ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডিতে নির্বাচনী মিছিলে আÍঘাতী বোমা হামলা ও আততায়ীর গুলিতে নিহত হন বেনজির। সে সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিলেন পারভেজ মোশাররফ, যদিও তিনি সেনাপ্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন আগেই। বেনজিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল কেন্দ্রীয় সরকার, পাঞ্জাব সরকার ও রাওয়ালপিন্ডি প্রশাসন। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও নির্বাচনে জনপ্রিয়তার দৌড়ে এগিয়ে থাকা নেত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের কেউই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি, এটা রহস্যজনক। পাকিস্তানের রাজনীতিতে বেনজির ভুট্টো তুলনামূলক উদারপন্থী নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ও কাশ্মীর নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় ছিলেন আগ্রহী। এটা ছিল পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর নীতির ওপর একটি সম্ভাব্য আঘাত। বেনজির নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য সম্পর্কোন্নয়ন ও জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদারে যারা ভীত ছিলেন, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীতে তাদের প্রভাবও ছিল ওপেন সিক্রেট। বেনজিরের মিছিলে তার গাড়ির কাছে গিয়ে এক কিশোর আÍঘাতী হামলা চালায়। সাধারণভাবে এটা জঙ্গিদের কাজ মনে হলেও এর পেছনে অন্য কোন মহলের হাত থাকা অস্বাভাবিক নয়। একজন কিশোরের সিদ্ধান্তে এত বড় অঘটন ঘটতে পারে না। সুষ্ঠু তদন্ত করা গেলে বেনজির হত্যা রহস্য উšে§াচিত হবে আশা করা যায়। ওই ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা পুলিশি তদন্তকে প্রভাবিত করেছে বলে জাতিসংঘ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। জাতিসংঘের তদন্ত কাজেও সহায়তা করেনি পাকিস্তান সরকার। কোন রাষ্ট্র যখন তার শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তখনই মুখ থুবড়ে পড়ে গণতন্ত্র। এ উপমহাদেশে বারবার এ ধরনের আঘাত এসেছে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও নেপালের রাজনৈতিক শক্তিগুলো সম্মুখীন হয়েছে নিরাপত্তা হুমকির। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিরোধী দলে থাকাকালে তার ওপর বড় আঘাত এসেছিল। ওই ঘটনায় সৌভাগ্যক্রমে তিনি রক্ষা পেলেও দলের বেশ ক’জন নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়। এরপর ঘটনাটির তদন্ত প্রভাবিত এবং তাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালানো হয় বলেও অভিযোগ ওঠে তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে। মামলার পুনঃতদন্তে বেরিয়ে আসে এর সত্যতা। রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর এ ধরনের আঘাত শুধু নিন্দনীয়ই নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব অপরাধের দ্রুত বিচারের নজির কম। এমন অনেক ঘটনায় ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। রাষ্ট্রের মধ্যে গণতান্ত্রিক শক্তিবিরোধী উপাদান থাকা বিপজ্জনক। এতে বিপন্ন হতে পারে গণতন্ত্র। এ কারণে সব রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার হওয়া প্রয়োজন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর হত্যাকারীদের পরিচয় একদিন উদ্ঘাটন হবে এবং তারা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে, এটাই আশা করব আমরা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





