somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌরশক্তি : বিদ্যুতের অসাধারণ এক সমাধান

০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রা চলমান রয়েছে শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে। প্রাণ ধারণ করার জন্য, কাজ করার জন্য, বিনিময়, অর্থনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন প্রক্রিয়া চালু রাখার জন্য শক্তি ব্যবহার প্রয়োজন। শক্তির রয়েছে বিভিন্ন রূপ। কোন ধরনের শক্তি আমরা ব্যবহার করবো সেটি নির্ভর করে শক্তির সহজলভ্যতা, প্রতুলতা, ব্যবহারের সুবিধা, পরিবেশ ও মানুষের ওপর এর প্রভাব ইত্যাদি বিষয়ের ওপর। শক্তির পুনর্নবায়নের ওপর ভিত্তি করে শক্তিকে নবায়নযোগ্য ও অনবায়নযোগ্য শক্তি, এ দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। নবায়নযোগ্য শক্তি ( renewable Energy) হলো এমন শক্তি যা নানা প্রাকৃতিক উৎস যেমন: সূর্যের আলো, বাতাস, বৃষ্টি ইত্যাদি থেকে পাওয়া যায় এবং এগুলোকে বারবার ব্যবহার করা যায়। অ-নবায়নযোগ্য শক্তি (Non-renewable Energy) নবায়ন করা যায় না এমন জ্বালানি বা শক্তি। ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের শক্তিসম্পদের মজুত কমতে থাকে এবং সঞ্চয় সীমিত হওয়ার কারণে তা একসময় নিঃশেষ হয়ে যায়। সকল প্রকার জীবাশ্ম জ্বালানি এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
জীবাশ্ম জ্বালানিসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে যে সমস্ত জ্বালানি ব্যবহার করা হয়ে থাকে তার শতকরা ৭৫ ভাগই হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। এছাড়া বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে, তা দিয়ে আগামী ১৬ বছর জ্বালানীর নিশ্চয়তা পাওয়া যায়। তাই খুব শীঘ্রই নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার এবং গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে কঠিন জ্বালানি সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। আরেক ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানি হচ্ছে কয়লা। কয়লা ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত বিশ্বে জৈব রাসায়নিক কাঁচামালের প্রাথমিক উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। বিশেষত বিশ শতকে জ্বালানি শক্তির প্রাথমিক উৎস হিসেবে কয়লার সিংহভাগ ভূমিকা ছিল। বাংলাদেশের ৫টি কয়লাক্ষেত্রে মোট মজুদ প্রায় ২৭০০ মিলিয়ন টন। বাংলাদেশে আবিষ্কৃত ও উত্তোলিত কয়লার বৃহত্তর অংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা অনবায়নযোগ্য হওয়ায় এর পরিমাণ দিন দিন কমছে। এসব জ্বালানির অপ্রতুলতা থাকা ছাড়াও আরো বড় ক্ষতিকর দিক হচ্ছে পরিবেশের উপর এদের প্রভাব। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা ব্যবহারে উৎপন্ন হয় গ্রীন হাউজ গ্যাস কার্বন-ডাই-অক্সাইড সহ সালফার-ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি বিষাক্ত গ্যাস। ৫০০ মেগাওয়াটের একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতি বছর ১২৫০০০ টনের বেশী ছাই এবং ১৯৩০০০ টন বর্জ্য ধোঁয়া তৈরী করে। সাধারণত এই বর্জ্যের ৭৫ শতাংশের বেশী মাটি ভরাট করে ফেলে রাখা হয়। আর্সেনিক, মার্কারী, ক্রোমিয়াম এবং ক্যাডমিয়াম সহ বিষাক্ত উপাদানে ভর্তি এই বর্জ্য খাবার পানির উৎসকে দূষিত করতে পারে এবং গুরুত্বপূর্ণ মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো করতে পারে এবং স্নায়ুবিক ক্ষতি সাধন করতে পারে। বছরে গড়ে একটি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে উৎপাদিত হয় ৩৭,০০,০০০ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রধাণ কারণ; এটি ১৬১ মিলিয়ন গাছ কাটার সমপরিমাণ কার্বন দূষণের সমান। তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ও গ্যাস এর পরিবর্তে বিকল্প পদ্ধতি বেছে নেয়ার সময় এসেছে। এজন্য অবশ্যই নবায়নযোগ্য শক্তিগুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত।
বর্তমান বিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তির মধ্যে সৌরশক্তির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিদ্যুত কেন্দ্র গ্যাস নির্ভর। সে বিকল্প হিসেবে কয়লা ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে দেশীয় কয়লার উৎপাদনে জোর দিতে হবে। কিন্তু দেশের কয়লা ‍উত্তোলনের তেমন কোন ব্যবস্থা সরকার করেনি। তাই বাংলাদেশের জন্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরশক্তির ব্যবহারের চেয়ে বিকল্প ভালো আর কিছু হতে পারেনা। বাংলাদেশ ২০.৩০ থেকে ২৬.৩৮ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮.০৪ থেকে ৯২.৪৪ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। যা সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক ভৌগলিক অবস্থান। এছাড়া এখানে বছরে তিনশো দিনেরও বেশি রোদ থাকেসৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কিছু কিছু ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেমন প্রতি বর্গমিটারে কি পরিমাণ সৌরশক্তি আসে এবং বছরে কত দিন নিশ্চিতভাবে এই শক্তি পাওয়া যায়, আকাশ কি পরিমাণ পরিস্কার থাকে এবং দিনের উজ্জ্বল অংশের গড় দৈর্ঘ্য কত। এখানে বছরে ৩০০ দিন প্রতি বর্গমিটারে গড়ে ৩৫০০ থেকে ৬৫০০ ওয়াটের সমপরিমাণ সৌর শক্তি আসে।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৩ সালে সৌর বিদ্যুত নিয়ে কাজ শুরু হয় এবং বিভিন্ন কোম্পানী যেমন ইডকল, গ্রামীণ শক্তি, ব্র্যাক, সৃজনী এর জনপ্রিয়করণে কাজ করে যাচ্ছে। একটি সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের পর এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যেতে পারে। এছাড়া সৌরশক্তি বিষয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে৷ ফলে সৌরবিদ্যুতের দাম দিন দিন কমছে। প্রাথমিকভাবে স্থাপনার পর, এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এর কোন বিল দিতে হয় না। আর ৫-৬ বছরের মধ্যে ব্যাটারী নষ্ট হওয়ারও কোন সম্ভাবনা নেই। সোলার হোম সিস্টেম বিভিন্ন ওয়াটের হয়ে থাকে৷ তাই প্রতিটা পরিবার তাদের চাহিদা অনুযায়ী পছন্দেরটা বেছে নিতে পারে৷ পাঁচজনের একটা পরিবার ক্ষেত্রে ৪০-৫০ ওয়াটের সোলার হোম সিস্টেম হলেই চলে । এছাড়া ৮৫ ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্যানেল দিয়ে চারটি বাতি, একটা পাখা ও একটি সাদাকালো টিভি চালানো সম্ভব। বিশ বছরের জন্য ২০ ওয়াটের একটি প্যানেল নিলে, সঙ্গে পাঁচ বছর মেয়াদী ব্যাটারি, তিন বছরের জন্য চার্জ কন্ট্রোলার আর এলইডি লাইট ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য, এমন হলে ১২ হাজার টাকা খরচ হবে৷ কৃষি প্রধান দেশ বাংলাদেশে কয়েক লাখ ইরিগেশন পাম্প চলে৷ এগুলোর অধিকাংশই ডিজেল চালিত৷ তবে কিছু কিছু বিদ্যুতেও চলে৷ বলা বাহুল্য, এগুলো ডিজেলে চললে কালো ধোয়া বের হয়, ব্যয় হয় প্রচুর অর্থের। কৃষি প্রধান দেশ বাংলাদেশে কয়েক লাখ ইরিগেশন পাম্প চলে৷ এগুলোর অধিকাংশই ডিজেল চালিত৷ তবে কিছু কিছু বিদ্যুতেও চলে৷ বলা বাহুল্য, এগুলো ডিজেলে চললে কালো ধোয়া বের হয়, ব্যয় হয় প্রচুর অর্থের। সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। বর্তমানে এটি দিয়ে প্রতিদিন ১৫ লাখ গ্যালন পানি উঠছে৷ কুষ্টিয়া, রংপুর ও দিনাজপুরে চলছে এই ইরিগেশন পাম্প।
সৌরবিদ্যুতের ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল। নিজেদের ছাদে দেশের সবচেয়ে বড় সৌর প্যানেল স্থাপন করে চমক দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশ্বের বড় বড় কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও যা নেই, এবার সূর্যের আলোয় নিজেরা আলোকিত হয়ে তা করে দেখিয়েছে তারা। সারা বিশ্বে কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এই প্রথম এধরনের উদ্যোগ নেয়া হলো।

গ্যাস ও কয়লার বিকল্প হিসেবে তাই সৌরশক্তির বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন একটু পরিবর্তনের সদিচ্ছা আর দেশপ্রেম। পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী এমন প্রাকৃতিক উপহার এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে?

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×