(যারা পড়ার সুযোগ পান নি তাদের জন্যে)
ফ্যান দাও
এদিকে দেশের সঙ্কট এসে ঠেকেছে ভাতের থালাতেও। খাবার নেই দেশে। নয় মাসের তেমন ফসল হয়নি কিছুই, বিদেশ থেকে যে খাদ্য কিনবে সে পয়সাও নেই বাংলাদেশের হাতে। স্বাধীনতার পরই বিপুল এক খরা এবং তার ঠিক পর পরই লাগাতার দুটি ভয়াবহ বন্যা। যে সামান্য কিছু উৎপাদন হয়েছে দেশে ভাঙ্গা ব্রীজ রাস্তা ঘাটের কারণে তা বাজারে পৌঁছানোও হয়ে উঠেছে দুস্কর। পাশাপাশি চোরাচালান আর অসাধু ব্যাবসায়ীদের খাদ্য মজুদ করা তো আছেই। সব মিলিয়ে শূন্য হয়ে গেছে দরিদ্র মানুষের ভাতের থালা। মধ্যবিত্ত ভাত ছেড়ে খাওয়া শুরু করেছে রুটি।
কিসিঞ্জার কথা দিয়েছিলেন আমেরিকা খাদ্য পাঠাবে। সে ভরসায় বসে আছেন শেখ মুজিব। হঠাত একদিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত খবর পাঠান আমেরিকা কোন খাদ্য পাঠাবে না। আকাশ ভেঙ্গে পড়ে সরকারের কাঁধে। কি ব্যাপার? তারা জানায় বাংলাদেশ কিছুদিন আগে কিউবার কাছে কিছু চটের ব্যাগ বিক্রি করেছে আর আমেরিকা পিএল ৪৮০ নিয়ম আনুযায়ি যে দেশ সমাজতান্ত্রিক কিউবার সাথে বাণিজ্য করবে সে দেশ কোন খাদ্য সাহায্য পেতে পারবে না।
শেখ মুজিবের কমিউনিস্ট বন্ধু ক্যাস্ট্রোর কাছে দুটো চটের ব্যাগ বিক্রি করার দায়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ কে অভুক্ত রাখার নির্মম সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকা। আমেরিকার শত্রু ক্যাস্ট্রো, সেই ক্যাস্ট্রোর সাথে ভাব করার কি পরিণতি হতে পারে তা শেখ মুজিবকে হাড়ে হাড়ে শিক্ষা দেয় আমেরিকা।
ভয়াবহ এক দুভিক্ষ দেখা দেয় দেশে। গ্রাম থেকে মানুষ কাতারে কাতারে চলে আস্তে থাকে শহরে। ঢাকা শহর পরিণত হয় কঙ্কালসার মানুষের প্রেতপুরীতে পথে পথে হাজার হাজার অভুক্ত মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে থাকে। অনেক রাত পর্যন্ত ঢাকার পথে ভিক্ষুকরা কাঁদে ফ্যান দেও। ভাত আর চায়না কেও চায় সামান্য ফ্যান।
দেশের আনাচে কানাচে অসংখ্য লঙ্গরখানায় লাইন দেয় লক্ষ লক্ষ অভুক্ত মানুষ।
সৎ মানুষের লিস্ট
জিনিস পত্রের লাগামহীন দাম, চোরাকারবারী, কালোবাজারী, বেআইনি অস্ত্র, ব্যাংক লুট, ভেজাল, দুর্নীতির বিশাল পাহাড় শেখ মুজিবের সামনে। বিহ্বল শেখ মুজিব ভেবে পান না কি করে এই পাহাড় ডিঙ্গাবেন তিনি। এক বক্তৃতায় তিনি আক্ষেপ
করে বললেন সবাই পায় সোনার খনি, তেলের খনি, আর আমি পাইছি চোরের খনি।
এসময় একদিন দর্শনের অধ্যাপক সাঈদুর রহমান তার সম্পাদিত দর্শন পত্রিকার একটি সৌজন্য কপি নিয়ে যান শেখ মুজিবের কাছে। ১৯৪৫ এ শেখ মুজিব যখন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র তখন তাঁর শিক্ষক ছিলেন সাঈদুর রহমান। শিক্ষক এসেছেন ছাত্রের সাথে দেখা করতে, যিনি এখন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে শেখ মুজিব হঠাত জিজ্ঞেসা করেনঃ স্যার আমাকে লজিকে কত নম্বর দিয়েছিলেন মনে আছে?
সাঈদুর রহমান নীরব থাকেন।
শেখ মুজিবের অফিসে আরো কিছু মানুষ। উপস্থিত সবার সাম্নেই মুজিব বলেনঃ স্যার আমাকে আপনি লিজিকে ২৭ নম্বর দিয়েছিলেন।
সাঈদুর রহমান কিছুটা বিব্রত হয়ে বলেনঃ মুজিব তুমি এখন নম্বরের অনেক উপরে।
শেখ মুজিবঃ দেশের অবস্থা তো দেখছেন স্যার যে লজিকে ২৭ পায় দেশ এর চেয়ে ভালো চালানোর ক্ষমতা তাঁর থাকেনা। তবে স্যার আপনি তো অনেক মানুষ কে চেনেন। দয়া করে আমাকে একটা ১০০ ভালো মানুষের তালিকা করে দিবেন? আমি আবার তাদের নিয়ে চেষ্টা করে দেখি।
সিধা রাস্তা
একটা বিধ্বস্ত নিঃস্ব দেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে তুলে আনবার চেষ্টা করছেন শেখ মুজিব। ছুটে গেছেন ধনবান আমেরিকার কাছে। গুঁড় যা মিলেছে তা খেয়েছে পিঁপড়ায়। এরপরে মিলল অপমান। খাদ্যের জাহাজ পাঠিয়েও আবার ফিরিয়ে নিয়ে গেলো তারা। দেশকে বাঁচাবেন বলে হাত বাড়িয়েছেন সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর দিকেও। সার্কাসের খেলোয়াড়ের মত একটা সূক্ষ্ম দড়ির ওপর দুলতে দুলতে এগিয়ে গেছেন তিনি। একবার ডানে একবার বায়ে। সম্বল তাঁর আত্মবিশ্বাস, কারিশমা। কিন্তু আর তাল রাখতে পারছেন না। একদিকে তাকে নেমে পড়তেই হবে এবার।
একটা কোন কঠোর ব্যবস্থার কথা, দেশে একটা মৌলিক পরিবর্তনের কথা শেখ মুজিব তাঁর মন্ত্রী পরিষদের কাছে বলতে থাকেন প্রতিনিয়ত। কঠোরতর কোনো পদক্ষেপের ব্যাপারে তিনি ধারাবাহিক বৈঠক করতে থাকেন দলের নেতৃবৃন্দের সাথে। শেখ মুজিব দলীয় নেতৃবৃন্দকে তীব্র সমালোচনা করেন। বলেন, আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।
শেখ মুজিব সিধান্ত নেন আর ডান বাম নয় তিনি দেশে এবার সমাজতন্ত্র কায়েম করবেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



