গত ১৫ বছর ধরে নিবিড়ভাবে ফুটবল দেখি, আর গত ১০ বছর ধইরা ইংল্যান্ডের লীগ আর স্প্যানীশ লীগ মোটামুটি ভালই ফলো করি/লাইভ দেখি/হাইলাইট দেখি/বিশ্লেষণ করি। কিন্তু আজতক হোসে মরিনহোর মত ক্ষতিকারক ক্যারেকটার দেখি নাই, গতকালকের বার্সা-রিয়ালমাদ্রিদ গেমের পর এইটা আবার নিশ্চিত হইলাম।
বলাবাহুল্য, ফুটবল যথেষ্ট স্ট্রেসের খেলা, টপ টীমগুলায় যারা খেলে আর যারা কোচিং করায়, তাদের উপর প্রত্যাশা আর চাপ এতো বেশী থাকে যে সবারই নার্ভ খুবই উত্তেজিত থাকে খেলার সময়। আর খেলতে গিয়া ঠোকাঠুকি ঝগড়া গালাগালি কিছু হইবই,এইটা সবাই বুঝে। কিন্তু এইগুলারও যে একটা লিমিট আছে, সেইটাও লোকজন বুঝে, এইজন্যই দেখবেন খেলা শেষের পর সবাই হাত মিলাইতেছে, "এইগুলা নিছকই খেলা" এই স্পিরিট নিয়া সবাই আবার বাড়িতে শান্তিতে ঘুমাইতে যায়।
কিন্তু হোসে মরিনহো নামক একটা এটেশন-সিকার, যেকোনো মুল্যে জিততে চাওয়া পাগল-ছাগল লোকটা এই লিমিট মানতে রাজী না, তার নিজের গোঁ ধরে রাখতে লোকটা এখন বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত, যেই বিষে তার দলের খেলোয়াড়রাও হয়ে উঠছে তারই মত, এইটার শেষ যে কোথায় হবে কে জানে।
একটা কথা বলে নেই, খেলার আগে মাইন্ড গেম সবাই খেলে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এলেক্স ফার্গুসন এই ব্যাপারে প্রবাদপ্রতিম। কেভিন কিগান খালি কানতে বাকী রাখছিলেন, রাফাবেনিটেজ বা আরসেন ওয়েঙ্গাররাও সুবিধা করতে পারেননাই। খেলার মাঠেও রেফারীকে চাপে রাখতে চায় এদএর সবাই।
কিন্তু মরিনহো এদের সবাইকে ছাড়ায়া গেছেন একটা দিকে----মাঠে ভায়োলেন্সের আমদানী করে, সেই ভায়োলেন্স ফাউলের মাধ্যমেই হোক আর প্রতিপক্ষরে ঘুষাঘুষির মাধ্যমে হোক বা বিষাক্ত বিদ্বেষপূর্ণ কথাবার্তার মাধ্যমেই হোক, তিনি সবকিছুতেই রাজী।
হোসে মরিনহো গতবছরের এল ক্লাসিকোর পর বার্সাকে লক্ষ্য করে যেসব প্রলাপ বকেছেন, সেইসব ইউটিউবের কমেন্ট সেকশনে বা সামুর ক্যাচাল পোস্টেই কেবল মানায়। তার উস্কানীমূলক কথাবার্তায় রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা আরো তেতে থাকে, বলাই বাহুল্য। নেগেটিভ খেলা তো আছেই, তিনি পেপের মত একটা মারমারকাটকাট ডিফেন্ডারকেও যখন মিডফিল্ডে খেলান, তখনি তার খেলার স্টাইল বোঝা যায়---যাই হোক, খেলার স্টাইলের জন্য একজনকে খুব বেশী দোষ দেয়া যায় না---তবে তার আক্রমণাত্মক মেজাজ যখন তসার খেলোয়াড়দের মধ্যেও সংক্রমিত হয়, তখনই সেটস খেলা ছেড়ে ভায়োলেন্সের দিকে মোড় নেয়। সেটা গত সিজনেও দেখা গেছে, এবারও দেখা গেল।
যতবে এবার তিনি যা করেছেন, সেটা তার আগের কীর্তিকলাপকেও ছাড়িয়ে গেছে। সাধারণত দেখা যায়, ফুটবল মাঠে যদি হঠাৎ ৭/৮ জন খেলোয়াড়ে ঝগড়া লেগে যায়, তখন কোচ তাদের নিরস্ত করার চেষ্টা করেন, বা অন্তত দূরে থাকেন। কিন্তু হোসে মরিনহো যা করলেন, সেটা প্রায় অকল্পনীয়।
ঘটনার শুরু বার্সেলোনার ফ্যাব্রেগাসকে ফাউল করা নিয়া। ফাউল কর্সেন মার্চেলো, খুবই খরাপ ফাউল, রেড কার্ড। এই ধরনের ফাউল দেইখা বার্সার প্লেয়াররা গেছে তেড়ে, তখন বার্সার কোচ তাদের থামাইতে গেছে। কিন্তু মরিনহো যেটা করলেন, তা হইল, সেই ঝামেলা পাকানির সময়ই, বার্সার এসিস্টেন্ট কোচ টিটো ভিলানোভার পিছনে গিয়া, তার চোখে আংগুল ঢুকায়া দিলেন!
পুরা গ্যাঞ্জামের ভিডিও আছে এইখানে
মরিনহোর কীর্তি পাইবেন ২:৪৫ মিনিটে।
এইখানেই শেষ না, খেলার পরে তনি টিটো ভিলেনোভাকে সানবাদিকের সামনে "পিটো" বলে ডাকেন, যেটার অর্থ, পর্তুগীজ ভাষায়, পেনিস বা পুরুষাঙ্গ।
জীবনে কোনোদিন এইরকম কোনো হাই প্রোফাইল কোচরে এইভাবে খেলোয়াড় মারামারিতে সরাসরি অংশ নিতে দেখি নাই। গতবার এল ক্লাসিকোয় দেখছিলাম রোনাল্দো বার্সার কোচ পেপ গোয়ার্দিওলারে গিয়া সরাসরি হাত দিয়া ধাক্কাই দিছে, নিতান্তই ভদ্রলোক পেপ সেইটা চুপ কইরা হজম করছেন। এই সবই হইল মরিনহোর পাগলামীর ফসল।
আজকে খেলার শেষে জেরার্ড পিকে সরাসরি হোসে মরিনহোরে দিকে আঙুল তইলা বলছে "তুমিই এইগুলা শুরু করছ, তুমিই দায়ী।" পেপ গোয়ার্দিওলা আশংকা প্রকাশ করেছেন যে এইযে এইগুলা শুরু হইছে, সেটা র শেষ খুব খারাপভাবেই হবে। বার্সা রিয়াল ২টা ক্লাবই বিশ্ব ফুটবলে রত্ন বিশেষ, হোসে মরিনহোর মত ক্যাচালজীবী হয়ত শেষ পর্যন্ত দুটোরই অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়ে যাবেন।
প্রাসঙ্গিক ১টা বিশ্লেষণ
Click This Link