মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা অতন্ত্য ক্ষুদ্র।আপনার আমার মৃত্যুতে কিছু আসে যায় না।একটা পিঁপড়া যেমন পায়ের তলায় পিষে যায় , আপনার মৃত্যুর দাম তার চাইতে খুব একটা বেশি হবার কথা না। আপনি মারা যেতে পারেন – কোন সুন্দর বিকেলে কিংবা ঘুটঘুটে অন্ধকার অ্যামবুলেন্স এর ভিতরে।কার কিছু এসে যায় না।আপনার বাবা-মা অনেক কাঁদবে।আপনার বউটিও অনেক কাঁদবে।১/২ বছর পর সব শেষ।আপনার বউ ব্যাঙ্কের ফর্মে অবলীলায় আপনার নামের আগে মরহুম লিখবে।ক্লাসটিচার যখন আপনার ছেলেকে বলবে , তোমার বাবার নাম কি।ছেলে কপট দুঃখের সাথে উত্তর দিবে- আমার বাবা নেই।স্যার দুঃখিত হওয়ার ভান করে – ও আচ্ছা ঠিক আছে।ছেলেও একটা করুন মুখের অভিনয় করবে এবং বসে পড়বে।শেষ।সব শেষ।
জীবন আসলে কিছুই না। যতদিন বেঁচে আছেন , থাকুন । নাস্তিক হলেই তো কথাই নেই।আর আস্তিক হলেও এক জীবনে যত অপরাধ করেছেন – জান্নাতে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।দোজখের লেলিহান আগুন আপনার অপেক্ষায় ব্যস্ত হয়ে বসে আছে।উচ্চাশার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়েছেন – এ জীবনে।পরবর্তী জীবনটাই বা বাদ যাবে কেন?
তবুও আমরা বেঁচে আছি।কিভাবে কিভাবে যেন টিকে আছি।হয়ত , ঘরের মধ্যে শিশুটির নিরর্থক দৌড়াদৌড়ি দেখে , পার্থিব সফলতায় মায়ের হাসিমুখ দেখে , বাবার গোপনে চোখের পানি ফেলা দেখে , প্রেমিকার উচ্ছল কালো চুল দেখে কিংবা সকালের সেই শান্ত চেহারা , জোছনার অলৌকিক আলো দেখে।
অথবা মরে যেতে ইচ্ছে করে , নেশাগ্রস্থ ভায়ের টাকার জন্য পাতা দুটি হাত দেখে , বোনকে অন্য ছেলের হাত ধরে রমনা পার্কে দেখে , মায়ের অবিরাম কান্না , বাবার পেনশনের টাকা পাওয়ার জন্য শহরের নির্মম পিচডালা দুপুরের পথে হাঁটতে দেখে , প্রেমিকার বিয়ের বিশাল তোরণদ্বার দেখে।
তবু উজবুকের মতো বেঁচে থাকি আমরা।হাতঘড়িটা অবিরাম টিকটিক করে জানিয়ে দেয় – যে তোমার সময় শেষ হয়ে আসছে।হাতের জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে সবকিছু মুছে ফেলতে চাই , কিন্তু মুছে না।তাসের প্যাকেটে শান্তি খুঁজতে যাই – কিন্তু...
অবিশ্বাস্যভাবে যদিও টিকে যান।অনেক কষ্ট , অনেক কষ্ট পার করে বৃদ্ধ বয়সের সন্ধ্যাকালে এসে পৌঁছুবেন।ঠিকানা আপনার হতে পারে ওল্ডহোম।নিরন্তর , ওল্ডহোমের জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকবেন।সবুজ প্রকৃতি না, শহরের কৃপণ বিল্ডিং গুলির রংচঙে দেয়াল দেখবেন।তবুও তাকিয়ে থাকবেন।কিছু খুঁজবেন।আয়া এসে আপনার লবণাক্ত বালিশ নিয়ে যাবে।নির্বোধ আয়া, কখনই জানবে না , যে তার হাতের শত শত বালিশগুলি অগণিতবার চোখের পানিতে ধোওয়া।কিংবা আপনার জায়গা হতে পারে , ছেলের বাড়ি।বউমার প্রছন্ন চেহারা আপনি ধরতে পারবেন।রাতের বেলায় ছেলের সাথে ঝগড়া করবে –ঝগড়ার মাঝে আপনার নামও কয়েকবার শুনতে পাবেন।নপুংসক ছেলে এসে আপনার পেনশনের সব টাকা চাইবে- কিছুদিন পরে।এতকিছুর পরেও , খুঁজে খুঁজে পত্রিকার স্বাস্থ্য অংশ পড়বেন- কিভাবে শতবর্ষী হওয়া যায়।সিগারেট,চা কম কম খাবেন অনেকদিন বাঁচার জন্য।সকালবেলা পার্কে বাচ্চা ছেলে মেয়ের মতো দৌড়াদৌড়ি করবেন।যাতে আরও কিছুদিন বেঁচে থাকেন।কি অপরিসীম নির্লজ্জতা!ছিঃ!
এত চেষ্টা করার পরও - কিছুদিন পর , সস্তামার্কিন কাপড়ে বেরিয়ে যাবেন ঘর থেকে।সকালে মৃত্যু , বিকালে অন্ধকার দরজা-জানালা বিহীন চিরস্থায়ী আবাসে।এরপর, কি হবে বলতে পারিনা।তবে, বলতে পারি কবরের উপর কিছুদিনপর নতুন কবর উঠবে। আপনার-আমার মতো , আরেক পরাজিত আহত যোদ্ধার।
এই হতে পারে আপনার , আমার জীবনের সাদা-কালো পেন্সিলে আঁকা নির্মম স্কেচ।নিয়তির মতো নির্ভুল হয়ে ফলে যেতে পারে আপনার-আমার জীবনে।এরই নাম জীবন।হতাশাবাদীর চোখের জীবন।অনেকেই এ জীবনে কোন আশার আলো খুঁজে পায় না।তবুও বাঁচতে চায়।প্রকৃতির কি নির্মম খেলা।কি অপরিসীম নির্লজ্জতা!ছিঃ!