আচ্ছা , আমাদের জীবনের মূল্য কতটুকু।৭০০ কোটি মানুষের একটা ক্ষুদ্র গ্রহের প্রাণী । আপনার অস্তিত্ব কত কত ক্ষুদ্র আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।সামান্য একটা সূর্যের নিচে থাকা প্রাণী।মিলিওন মিলিওন সূর্যের মতো সূর্য আছে।সে তুলনায় তো সূর্য নিছক একটা চিনির দানার মতো।আরও , শুনলাম – মহাবিশ্ব নাকি একটা না , অগণিত।পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ এসেছে ( সম্ভবত ১৫ হাজার কোটি -শুরু থেকে)।তাদের কয়জনের কথা আমরা জানি।আপনি যতই বিখ্যাত কিংবা যতই অখ্যাত হোন না কেন – আপনার পরিণতি সুনির্দিষ্ট।নিয়তির মতো নির্ভুল – যা আপনি খণ্ডাতে পারেন না।
মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা অতন্ত্য ক্ষুদ্র।আপনার আমার মৃত্যুতে কিছু আসে যায় না।একটা পিঁপড়া যেমন পায়ের তলায় পিষে যায় , আপনার মৃত্যুর দাম তার চাইতে খুব একটা বেশি হবার কথা না। আপনি মারা যেতে পারেন – কোন সুন্দর বিকেলে কিংবা ঘুটঘুটে অন্ধকার অ্যামবুলেন্স এর ভিতরে।কার কিছু এসে যায় না।আপনার বাবা-মা অনেক কাঁদবে।আপনার বউটিও অনেক কাঁদবে।১/২ বছর পর সব শেষ।আপনার বউ ব্যাঙ্কের ফর্মে অবলীলায় আপনার নামের আগে মরহুম লিখবে।ক্লাসটিচার যখন আপনার ছেলেকে বলবে , তোমার বাবার নাম কি।ছেলে কপট দুঃখের সাথে উত্তর দিবে- আমার বাবা নেই।স্যার দুঃখিত হওয়ার ভান করে – ও আচ্ছা ঠিক আছে।ছেলেও একটা করুন মুখের অভিনয় করবে এবং বসে পড়বে।শেষ।সব শেষ।
জীবন আসলে কিছুই না। যতদিন বেঁচে আছেন , থাকুন । নাস্তিক হলেই তো কথাই নেই।আর আস্তিক হলেও এক জীবনে যত অপরাধ করেছেন – জান্নাতে যাওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।দোজখের লেলিহান আগুন আপনার অপেক্ষায় ব্যস্ত হয়ে বসে আছে।উচ্চাশার আগুনে পুড়ে ছারখার হয়েছেন – এ জীবনে।পরবর্তী জীবনটাই বা বাদ যাবে কেন?
তবুও আমরা বেঁচে আছি।কিভাবে কিভাবে যেন টিকে আছি।হয়ত , ঘরের মধ্যে শিশুটির নিরর্থক দৌড়াদৌড়ি দেখে , পার্থিব সফলতায় মায়ের হাসিমুখ দেখে , বাবার গোপনে চোখের পানি ফেলা দেখে , প্রেমিকার উচ্ছল কালো চুল দেখে কিংবা সকালের সেই শান্ত চেহারা , জোছনার অলৌকিক আলো দেখে।
অথবা মরে যেতে ইচ্ছে করে , নেশাগ্রস্থ ভায়ের টাকার জন্য পাতা দুটি হাত দেখে , বোনকে অন্য ছেলের হাত ধরে রমনা পার্কে দেখে , মায়ের অবিরাম কান্না , বাবার পেনশনের টাকা পাওয়ার জন্য শহরের নির্মম পিচডালা দুপুরের পথে হাঁটতে দেখে , প্রেমিকার বিয়ের বিশাল তোরণদ্বার দেখে।
তবু উজবুকের মতো বেঁচে থাকি আমরা।হাতঘড়িটা অবিরাম টিকটিক করে জানিয়ে দেয় – যে তোমার সময় শেষ হয়ে আসছে।হাতের জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে সবকিছু মুছে ফেলতে চাই , কিন্তু মুছে না।তাসের প্যাকেটে শান্তি খুঁজতে যাই – কিন্তু...
অবিশ্বাস্যভাবে যদিও টিকে যান।অনেক কষ্ট , অনেক কষ্ট পার করে বৃদ্ধ বয়সের সন্ধ্যাকালে এসে পৌঁছুবেন।ঠিকানা আপনার হতে পারে ওল্ডহোম।নিরন্তর , ওল্ডহোমের জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকবেন।সবুজ প্রকৃতি না, শহরের কৃপণ বিল্ডিং গুলির রংচঙে দেয়াল দেখবেন।তবুও তাকিয়ে থাকবেন।কিছু খুঁজবেন।আয়া এসে আপনার লবণাক্ত বালিশ নিয়ে যাবে।নির্বোধ আয়া, কখনই জানবে না , যে তার হাতের শত শত বালিশগুলি অগণিতবার চোখের পানিতে ধোওয়া।কিংবা আপনার জায়গা হতে পারে , ছেলের বাড়ি।বউমার প্রছন্ন চেহারা আপনি ধরতে পারবেন।রাতের বেলায় ছেলের সাথে ঝগড়া করবে –ঝগড়ার মাঝে আপনার নামও কয়েকবার শুনতে পাবেন।নপুংসক ছেলে এসে আপনার পেনশনের সব টাকা চাইবে- কিছুদিন পরে।এতকিছুর পরেও , খুঁজে খুঁজে পত্রিকার স্বাস্থ্য অংশ পড়বেন- কিভাবে শতবর্ষী হওয়া যায়।সিগারেট,চা কম কম খাবেন অনেকদিন বাঁচার জন্য।সকালবেলা পার্কে বাচ্চা ছেলে মেয়ের মতো দৌড়াদৌড়ি করবেন।যাতে আরও কিছুদিন বেঁচে থাকেন।কি অপরিসীম নির্লজ্জতা!ছিঃ!
এত চেষ্টা করার পরও - কিছুদিন পর , সস্তামার্কিন কাপড়ে বেরিয়ে যাবেন ঘর থেকে।সকালে মৃত্যু , বিকালে অন্ধকার দরজা-জানালা বিহীন চিরস্থায়ী আবাসে।এরপর, কি হবে বলতে পারিনা।তবে, বলতে পারি কবরের উপর কিছুদিনপর নতুন কবর উঠবে। আপনার-আমার মতো , আরেক পরাজিত আহত যোদ্ধার।
এই হতে পারে আপনার , আমার জীবনের সাদা-কালো পেন্সিলে আঁকা নির্মম স্কেচ।নিয়তির মতো নির্ভুল হয়ে ফলে যেতে পারে আপনার-আমার জীবনে।এরই নাম জীবন।হতাশাবাদীর চোখের জীবন।অনেকেই এ জীবনে কোন আশার আলো খুঁজে পায় না।তবুও বাঁচতে চায়।প্রকৃতির কি নির্মম খেলা।কি অপরিসীম নির্লজ্জতা!ছিঃ!
আলোচিত ব্লগ
ছবির গল্প, গল্পের ছবি
সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত
বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!
কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে
আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন
অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?
এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন