অতন্দ্রীলা , জাফর ছেলেটাকে চিনো ?
- হ্যাঁ হ্যাঁ , চিনবো না কেন?
- জাফর ছেলেটার সাথে ওইদিন দেখা হইছিল। শুকিয়ে স্লিম স্লিম ফিগারে এসে গেছে। আগেতো মোটা ছিল।
- ভালই তো জিম টিম করে মনে হয়।
- আরে নাহ , বলল ইয়াবা আর গাঁজা খায় নিয়মিত। ইয়াবা আর গাঁজা খাইলে বলে মানুষ স্লিম হয় , এখন তো দেখি সত্য ঘটনা।
অতন্দ্রীলা হাসতে হাসতে পড়ে যাওয়ার দশা হল। আমি তো বিষম খেলাম। হাসির কি হল এখানে। হাসি থামিয়ে কোনমতে বলল ,
- আচ্ছা মানুষ এত্ত বোকা হয় কেন ? জানো ইয়াবা কিংবা গাঁজা খেলে মানুষের দেহের মেদ কমে না , উল্টো মাংসপেশী শুকিয়ে যেতে থাকে। কল্পনা করতে পারো , একটা মানুষের মেদ নষ্ট হচ্ছে না , উল্টো মাংসপেশি শুকিয়ে যাচ্ছে।
আমি কল্পনা করেই ধাক্কা খেলাম। তবুও মেয়ে মানুষের সাথে তর্কে হারা চলে না। এতক্ষণ মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে থাকলেও , অতন্দ্রীলার সাথে টক্কর দিতে , মাদকসেবীদের পক্ষে চলে গেলাম। মেয়ে মানুষ আমাকে হারাবে , কাভি নেহি।
- আচ্ছা , অতন্দ্রীলা গাঁজা খেলে নাকি মাথা সম্পূর্ণ ক্লিয়ার হয় , ইয়াবা খেলেও নাকি ঘুম আসে না। ভালই লাগে , একটু আধটু খেলে কিইবা হয়। খাচ্ছে খাক না। ওতো দেখলাম , মোটামুটি সুস্থই আছে !
- সুস্থ... হুহ। শুনো , গাঁজা কিংবা ইয়াবা খেলে ব্রেইনে রক্তক্ষরণ পর্যন্ত হয়। চিন্তা করতে পারো রক্তক্ষরণ। ইয়াবা খাইতে খাইতে ব্রেইনের রক্তনালী ছিড়ে গিয়ে মানুষ মারাও যায়। সাময়িক একটা ধাক্কার অথবা মজার জন্যে - কোন মানুষ নিজের ব্রেইনে রক্তক্ষরণ ঘটায় না , বুঝলা।
- তাইলে , পড়ালেখা তো জাফর ভালই করে। ব্রেইনে তো সমস্যা নাই।
- শুনো ব্রেইনে রক্তক্ষরণ হইতে হইতে একটা সময় ব্রেইন অকার্যকর হইয়া যায়। এরপর , তুমি শত পড়া লেখা করতে গেলেও কিচ্ছু করতে পারবা না। কিছু মনেই থাকবে না। পড়ালেখা তো দূরে থাকা , সাধারণ কিছুও মনে থাকবে না। তুমি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একবার ওপেন কথাবার্তায় যাইয়ো। দেখবা , এরকম কত কেইস , কতজন বলতেছে।
- তাইলে তো শুনছি , ইয়াবা খাইলে জাইগা থাকা যায় , ভালো পড়ালেখা করা যায়!
- বাজারের গুজব। যারা বেঁচে তারাই এইগুলি ছড়ায়। এতক্ষণ কি বললাম। তুমি একজন ডাক্তারের কাছে যাও , উনি যদি এইটা বলে কিংবা কোন বইপত্র নেট থেকে পাওয়া তথ্য সার্টিফাই করে। আমি নিজে এখন থেকে মাদক নেয়া শুরু করবো। এমনটা হইলে , সবার আব্বা আম্মা জোর কইরা ছেলে পেলে দের ইয়াবা খাওয়াইতো। বলতো , "বাবা , একটু কষ্ট করে খেয়ে নে। আমি এলমোনিয়াম ফয়েল ধরছি , তোর আব্বা লাইটার ধরছে। এটা খাওয়ার পর , তোর বড় বোনে সুন্দর করে গাঁজা বানায়া আনতেছে , ওইটা টেনে পড়তে বয়!"
ডাক্তার বলবে না সিওর থাকো। অবশ্য , ডাক্তাররে তো আবাল মাদকসেবীরা বাপ জনমের শত্রু মনে করে। মনে হয় যে , ইয়াবা-গাঁজার সাথে ডাক্তারের জমি-জমা নিয়া বিরোধ।
- তাইলে জাফরের কি হবে?
- জাফরের মৃত্যু হবে। হয় আত্মহত্যা করে নয় অন্যভাবে। ইয়াবা গাঁজা বেশি করে খেলে আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ে। মানসিক ভারসম্য হারিয়ে যাইতে থাকে , শ্বাসকষ্টে পর্যন্ত মারা যাবে। হাত পায়ের পেশিগুলা আস্তে আস্তে অবশ হয়ে যাইতে থাকবে। ফুসফুসে ক্যান্সার হইবো। তোমরা পুরুষেরা যেটা নিয়া বেশি চিন্তিত , সেক্সুয়াল ক্ষমতা এক্কেবারে নষ্ট হইয়া যাবে। এখন তো বয়স কম , ইয়াবা নিয়া লিটনের ফ্ল্যাটে যাইতেছো। কয়েকবছর হইয়া গেলে টের পাইবা। ৮/১০ বছর হইলে তো ,পুরাপুরিই গন।
-ধুর , অতনি , এইডা বাদে কও। তোমার সাথে সেক্সুয়াল আলাপ করতে লজ্জা লাগে। এইটা করে প্রেমিক-প্রেমিকারা।
- তাই নাকি ! খেমটা খুলে নাচবা , আবার ঘোমটাও দিবা! আচ্ছা , বাদ দাও। যেটা বলতেছিলাম , একটা সময় হ্যালুসিনেশন হবে। উলটা পালটা দেখবে , শুনবে। প্যারানয়াও হবে। এটা হইলে , জাফর মনে করবে সবাই তাঁর সাথে শত্রুতা করতেছে। দুনিয়াতে তার কেউ নাই। মারামারি- কাটাকাটি-ভাংচুর এইসব শুরু করবে। ফ্যামিলিতে অশান্তি। বাপে বলবে ঘর থেকে বাইর হ , পোলায় নোপ! উলটা আর বিয়া কইরা একটা নিষ্পাপ মেয়ের জীবনের বারোটা বাজাবে। বয়সের শেষদিকে আইসা , পুরাপুরি মানসিক ভারসম্য হারাইয়া ফেলবে। আর একটা মূল কথাইতো বলা হয়নি - এরা অল্টাইম ডিপ্রেশনে ভুগবে। হতাশা , তীব্র হতাশা নিয়ে জীবন পার করবে।
- বুঝছি , এতকিছু বোঝানোর পরও তো ছাড়তে পারবে না। বলে আর কি লাভ , বলো। মধ্য দিয়া যারা খায় নাই জীবনে , যেমন আমি উপকার পাইলাম। ওরাতো ডুমড , জাস্ট ফাকড!
- কে বলছে তোমারে। এটা জানো , গাঁজা কোন ক্যামিক্যাল এডিক্টিভ জিনিস না। এটা অভ্যাসের আর মানসিক এডিক্টিভ। সিগারেটের মত। যে কেউ , জীবনের যেকোন পর্যায়ে নিজে নিজেই গাঁজা ছাইড়া দিতে পারবে। এটা ক্যামিক্যাল এডিক্টিভ না , মানে না খাইলে মইরা যাবা এই টাইপ না। মানসিক ব্যাপার সম্পূর্ণ - আর এটা মনে রাইখো , বুড়া হইলে তওবা পড়ুম স্টাইলে আবার ছাড়া যাইবো না। তওবাও সব গুনাহ মাফ করে , মাগার গাঞ্জায় মাফ করে না। অলরেডি , লাইফরে টুট কইরা দিবে।
- আর , ইয়াবা!
- এইডা অবশ্য ক্যামিক্যাল এডিক্টিভ। এটা জন্যে, মাদক নিরাময় কেন্দ্র ছাড়া আর উপায় নাই। সব মাদক নিয়া উম দেয়া রানীক্ষেত মুরগির মত সবাই ঝুরে , বাট এইটা খাইলে ঘুমায় না। ব্যাপারটা , সিরিয়াস ! এইটার জন্যে , ডাক্তারের কাছে যাইতেই হবে। না গেলে খুব দ্রুত , পৃথিবীতে থাইকাই নরকের টিকিট কাটতে হবে।
- বুঝছি। হ্যাঁরে কইলে , হ্যাঁয় বুঝবো তো।
- অবশ্যই বুঝবো। তুমি হ্যাঁরে জিগ্যেস করো , সে কি জানতো আসলে চিকন না মাংসপেশি শুকাচ্ছে। আনন্দের বিনিময়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হইতেছে , রক্তনালী পর্যন্ত ছিড়ে যাইতে পারে ব্লাহ ব্লাহ ব্লা!
- আচ্ছা , দেখি বইলা।
- বইলো। আর এখন এক কাপ চা খাও। খেয়ে বিদায় হও। মাথা ধরে গেছে , বকবক করতে করতে ...
-----------------------------
-----------------------------
এর চাইতে আর কোন সহজ উপায় ছিল না আমার বোঝানোর। জাফর এবং অতন্দ্রীলা এখানে কাল্পনিক চরিত্র। কটমটে রেফারেন্স দেয়া লেখা আসলে কেউ পড়ে না। পড়লেও খুব কম , তাই তথ্য নির্ভর লেখা লিখলাম না। বেশিরভাগই পূর্বে পড়া , পত্রিকা , নেট থেকে নেয়া তথ্য। বড় তথ্যনির্ভর লিখাতে সোজাসুজি কমেন্টে গিয়ে অসাধারণ ঠুকে দিয়ে আসে। গত ছয় বছরে ইয়াবার ব্যবহার বাংলাদেশে ৬৬ গুন বেড়ে গিয়েছে , এই প্রাসঙ্গিক ভয়াবহ তথ্যটা তাও দিয়তে দিলাম। সো , আমি যা লিখেছি , সহজভাবেই লিখেছি। কেউ ছাড়লে কিংবা কেউ যদি এই লেখা পড়ে জীবনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হন , মাদক আর নিবেন না। তাহলেই লেখাটা হয়ত সার্থকতা ফিরে পাবে।
মাদকসেবী ভাইরা , পৃথিবীতে বসেই না জেনে , ভুল বুঝে নরকের টিকিট কেটেছেন , দ্রুতও স্টেশনে গিয়ে টিকিট ক্যান্সেলের ব্যবস্থা করুন। আপনি ভেবেছেন , ট্রেন বেশিদূর যাবে না।
আসলে , ট্রেনটা যে কতদূর যাবে কল্পনাও করতে পারছেন না।
পূর্বে ফেসবুকে প্রকাশিত।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:০৭