জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোনো পক্ষকে সমর্থন দেওয়ার কথা অস্বীকার করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবীর বলেছেন, সরকার সমর্থক এই ছাত্র সংগঠনের দায়-দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ ছাত্রলীগের ‘উপাচার্য গ্র“প’ নামে পরিচিত অংশের কর্মীদের হামলায় নিহত হওয়ার পর উপচার্য ও তার প্রশাসন ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়ে।
তবে ছাত্রলীগের কোনো পক্ষকে সমর্থন দেওয়ার কথা অস্বীকার করে উপচার্য মঙ্গলবার নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “ছাত্রলীগে আমার কোন গ্র“প নেই। উপাচার্য বা প্রশাসন কখনোই ছাত্রলীগের কোনো কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত নয়।”
‘ছাত্রলীগের কোনো কর্মকাণ্ডের দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেবে না’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপরে অন্য কাউকে এ বিষয়ে জড়িত পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন উপাচার্য।
শরীফ এনামুল কবীর বলেন, “অনেকে প্রশাসনকে ব্যর্থ বলছেন। তবে আমি মনে করি না প্রশাসন ব্যর্থ। বিগত ৪০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডগুলোর যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো, তাহলে আর এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী জুবায়েরকে রোববার সন্ধ্যায় শহীদ রফিক-জব্বার হলে কুপিয়ে জখম করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। সোমবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকায় ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা হয় সোমবার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন ছাত্রকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে, যাদের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এছাড়া প্রো- উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. ফরহাদ হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ।
জুবায়ের হত্যার প্রতিবাদে গত দুদিন ধরে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করছে।
ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে। ইতোমধ্যে মামলাও করা হয়েছে। পুলিশকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, এর সঙ্গে আর কারো সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে যেন তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়।”
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধরনের অস্থীতিশীলতা কারো কাম্য নয়। জুবায়েরের ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এর জন্য কেউ যেন অস্থিতিশীল কোনো অবস্থান না নেয় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার কাছে এ অনুরোধ করবো।”
এদিকে জুবায়েরের হত্যাকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন ‘উপাচার্য গ্র“প’ নামে পরিচিত পক্ষটিও।
এ পক্ষের নেতা শেখ মো. শরীফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত। তবে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন। তাদের অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ছাত্রলীগ নিজস্ব গঠনতন্ত্র দিয়ে চলে। এর কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কোনো হাত নেই।”
“উপাচার্য আওয়ামী রাজনীতি করেন, আমরা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি। সুতরাং আমাদের মধ্যে আদর্শগত মিল রয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগের কোনো কর্মকাণ্ডে তার কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ নেই”, যোগ করেন তিনি।