somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প--ফোন নম্বর

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


টিনা কাঁচা মেয়ে না। মনে মনে প্ৰস্তুত। বেগতিক দেখলেই পুলিশের কাছে তাঁর বিপদের খবর পৌঁছে যাবে। ফোন হাতেই আছে। জাস্ট একটা টাচের অপেক্ষা। টিনা জানে। চারিদিকে যা ঘটছে। অনেক কিছু হতে পারে। সারারাতের ব্যাপার। সেইজন্য আগে থেকেই খারাপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য রেডি হয়ে এসেছে। সেই খারাপ মুহূর্ত ক্রমশ কাছে এগিয়ে আসছে। টিনাও প্ৰস্তুত।

টিনা প্রতিবার মা বাবার সঙ্গে পুজো দেখতে বের হয়। কিন্তু এবার হল না। মায়ের হাঁটুর ব্যাথাটা বেড়েছে। ফলে মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবার পুজো ঘরে বসেই কাটাবে। টেলিভিশনের পর্দায় দেখবে দুর্গা পুজো। আর বাবা ? বাবার নতুন নাটকের শো চলছে। পুজোর কটাদিন দিনে দুটো করে শো। ফলে বাবার এখন দম ফেলার সময় নেই। মা বাবাকে যখন পাওয়া গেল না। তখন টিনা ভাবল কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে পুজো দেখতে যাবে। কিন্তু কপাল খারাপ হলে যা হয় আর কি। সবাই যাবে জোড়াই জোড়াই। টিনা তো আর কাবাব-মে হাড্ডি হতে পারে না। তাই সে পথও ত্যাগ করতে হল। প্রেমিক নেই বলে টিনার কখনও খারাপ লাগেনি। কিন্তু উনিশ বছরের জীবনে এই প্রথমবারের জন্য খারাপ লাগল। মনে হল--বন্ধুদের মত আমারও যদি বয়ফ্রেন্ড থাকত। তারপর শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিল একাই দেখব পুজো। মেয়েরা কতকিছু করছে। আমি পুজো দেখার মত সহজ একটা ব্যাপার একা একা সামলাতে পারব না ? অবশ্যই পারব। যেমন ভাবা তেমন কাজ। শুধু বের হওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করে নিল।সারারাতের ব্যাপার। টুকিটাকি কিছু জিনিসতো সঙ্গে নিতেই হবে।

ভোর হয়ে আসছে। সারারাতে মোট ছাব্বিশটা ঠাকুর দেখেছে টিনা। সবকটাই বিখ্যাত পুজো। প্যান্ডেলও দারুণ দারুণ। এক একটা পুজো কমিটি এক এক ধরনের থিমের ওপর মন্ডপ সাজিয়েছে। কিন্তু টিনার এবারের পুজো দেখার সময়টুকু পুরোপুরি সহজভাবে কাটেনি। একটা ছেলে। দেখতে শুনতে বেশ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে পা দিয়েছে। নেভি ব্লু জিন্স, আর গোলাপি টি শার্টে বেশ মানিয়েছে। চোখে চশমা। সারারাত ধরে টিনাকে ফলো করেছে। টিনা যখন যে প্যান্ডেলে গেছে, ছেলেটিও তখন সেই প্যান্ডেলে হাজির। টিনা যখন রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে। গোলাপি টি শার্ট তখন ঠিক তাঁর পাশের টেবিলে। মানুষের বাইরে থেকে দেখে কিছুই বোঝার উপায় নেই। এই সুন্দর ছেলেটি যে খারাপ মানুষ না তার কি গ্যারান্টি আছে ? মানুষের সুন্দর মুখোশের আড়ালে কুৎসিত মুখ লুকিয়ে থাকে। টিনা এবার চলে যাবে। ছেলেটি টিনার দিকে এগিয়ে আসছে। টিনাও প্ৰস্তুত। পুলিশের স্পেশাল নম্বরে হাত দিয়ে রেখেছে। উল্টোপাল্টা কিছু হলেই নম্বরটা প্রেস করে দেবে। ব্যাস। পুলিশের কাছে চলে যাবে টিনার বিপদ সঙ্কেত। পুলিশ লোকেশন ট্র্যাক করে চলে আসবে। টিনাকে আর কিছুই করতে হবে না। আর তার আগেই টিনা নিজস্ব শক্তি দিয়ে মোকাবেলা করবে ছেলেটির। টিনার নিজের ওপর ভরসা আছে। সে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। গত চার বছর ধরে। শুধুমাত্র নিরাপত্তার জন্য। পথেঘাটে যাতে নিজের সুরক্ষার জন্য অন্যের ওপর ভরসা করতে না হয়। ছেলেটি এগিয়ে আসছে। একদম কাছাকাছি এসে পড়েছে। টিনা দম বন্ধ করে অপেক্ষা করছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য।

মানুষের ধারণা সবসময় ঠিক হয় না। বরঞ্চ মাঝে মধ্যে আমাদের আইডিয়ার উল্টো ঘটনাও ঘটে। তখন চমকে যাওয়া ছাড়া অন্য পথ থাকে না। এক্ষেত্রেও তাই হল। টিনার হাতে একগুচ্ছ গোলাপ তুলে দিয়ে ছেলেটি চলে গেল। যাওয়ার আগে মুগ্ধ চোখে টিনাকে দেখে গেল।

টিনা পুরো থ। সাদা বাংলায় যাকে বলে হতভম্ব। ছেলেটি চলে যাওয়ারও বেশ কিছু সময় পরে টিনা ধাতস্থ হল। ফুলের তোড়ার দিকে তাকিয়ে দেখল। শুধু ফুল নেই। ফুলের মাঝে উঁকি দিচ্ছে ছোট্ট এক টুকরো কাগজ। টিনা দ্রুত কাগজটা খুলে দেখল--ফোন নম্বর।

সেই ঘটনার পর প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। টিনা ছেলেটিকে ফোন করেনি। ফোন করবে কিনা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। তবে একটা কথা সত্য। এই কদিন টিনা শুধু সেই ছেলেটির কথায় ভেবেছে। আর ফোন নম্বর লেখা কাগজটা দেখেছে। বারবার। ফলে একটা কাজ হয়েছে। ফোন নম্বরটা টিনার মুখস্থ হয়ে গেছে। টিনা এটুকু বুঝেছে। কোনদিন যদি ছেলেটিকে ফোন নাও করে। তবুও ভুলতে পারবে না। এই ফোন নম্বর। টিনার হৃদয়ের গভীরে লেখা হয়ে গেছে 993312.....
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×