somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : ভালোবাসার কতো রঙ !!

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(আমার জীবনের লেখা প্রথম গল্প।)
(১)
সমাপ্তি কে আজ খুব সুন্দর লাগছে অনির্বানের। গোধূলির আলোয় মেয়েটাকে কেমন মায়বিনী লাগে। সেই ক্লাস টেনে পরবার সময় অংকের স্যার রতন বাবুর কোচিং ক্লাসে প্রথম দেখা। তারপর কিভাবে যে জড়িয়ে গেল মেয়েটার সাথে, সে অনেক ইতিহাস। তবে প্রবাল ছেলেটা অনেক সাহায্য করেছিল ওকে। প্রবাল ছিল অনির্বানের সহপাঠী। আর সমাপ্তি সবেমাত্র ক্লাস এইট। ভালবাসার কিবা বুঝতো তখন ওরা। তবু ভালবেসেছিল সমাপ্তি কে। প্রবাল কে দিয়েই প্রস্তাবটা পাঠিয়েছিল অনির্বান। শৈশবের অপরিপক্ক দাড়িপাল্লায় নিজেকে মাপতে থাকা সমাপ্তি রাজি হয়নি প্রথমে। অনির্বান ও আর ডিস্টার্ব করেনি কখনো। বরং একটু এড়িয়েই চলতো সমাপ্তিকে। মাস দুই পরে এমন ই কোন মাহ-ভাদরের সন্ধ্যা বেলা কোচিং ক্লাস থেকে বেরিয়ে সরু গলিটার আবছা অন্ধকার বাঁকে কাঙখিত গলাটা শুনে চমকে উঠেছিল অনির্বান। সন্ধ্যার হাড়িয়ে যাওয়া আলো তে স্বপ্নে দেখা মুখটি চিনে নিতে অসুবিধা হয়নি একটুও। বলেছিল..
-কিছু বলবে..?
উত্তরে ভীষন ভীষন অভিমানি একটা কন্ঠস্বর ভেসে এসেছিল তার কানে..
-এখন আর বিকাল বেলা, সাইকেল চালিয়ে যাওনা কেন আমাদের বাড়ির দিকে..?

সে আজ আট বছর হলো। এখন সমাপ্তি ফাইনাল ইয়ার। আর অনির্বান বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পাস করা চাকুরী সন্ধানি এক বেকার যুবক। আচ্ছা শহরের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ীর অপরূপা সুন্দরী পরিপূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত এই মেয়েটা ভালবেসেছিল কেন তাকে? সরকারী অফিসের সামান্য কেরানী রাজশেখর চ্যার্টাজীর ছেলে অনির্বান। যার না আছে হাই স্যোসাইটির স্টেট্যাস, না আছে নির্দীষ্ট কোন ভবিষ্যত। ধুর, ভালবাসা তো এমনই হয়। ঈশ্বর প্রদত্ত এই অনুভূতির কাছে ধনী দরিদ্র, উচু নীচু কোন ভেদাভেদই যে নেই, সমাপ্তিই তো তার প্রমান। তবু মনে মনে একটু ভয় হয় অনির্বানের। যদি সত্যি কোন একদিন হারিয়ে যায় সমাপ্তি। যদি কোন ধনী রাজকুমারের কাছে হেরে যায় তার ভালবাসা...
-এই বুদ্ধু কাঁদছ কেন..?
-কই কাঁদলাম? পাগলী কোথাকার।
চোখ কচলানর ছলে চোখ দুটো মুছে নেয় অনির্বান। মনের ভেতর জমে থাকা বেদনা দায়ক প্রশ্নটা আরো একবার ছুঁড়ে দেয় সমাপ্তিকে।
-আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেনা তো সুমি?
-এই কি হয়েছ গো তোমার.? আবার আজে বাজে চিন্তা করছ। কতবার বলব একি কথা।
-যদি কেউ তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নেয়.?
আরো কাছে সরে আসে সমাপ্তি। জড়িয়ে ধরে অনির্বান কে। প্রায় বুকের সাথে মিশে গিয়ে, চোখে চোখ রেখে অত্যন্ত মৃদু স্বরে বলে..
-এই পাশটায় তাকাও। দেখ পার্কের ওই নিয়ন বাতির আলোয় তোমার একটা ছায়া পরেছে। আমি কি চাইলেই কাড়তে পারবো এটাকে তোমার থেকে.? পারব না গো, কেউই পারবেনা। তুমিও না। এমন কি তোমার এই বুকে যতদিন নিঃশ্বাস আছে। যতদিন এই চোখ সূর্যের আলো দেখবে, ততদিন সয়ং জগদঈশ্বর ও না।
আমি যে তোমার ছায়া বুদ্ধু..!

কর্মক্লান্ত শহরটা তখন বিদায় জানাচ্ছে গোধূলির শেষ আলো কে। অস্তামিত সূর্যের অন্তিম আভাটুকু প্রানপনে গায়ে মেখে নিজেকে সমার্পিত করেদিচ্ছে চির তমশার কাছে। দুরে কোন এক কারখানায়, থেকে থেকে ছুটির সাইরেন বেজে চলেছে।
.
(২)
হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরে সবে মাত্র শার্টটা খুলছিল অনির্বান। তখনই ফোনটা এলো। রিসিভারটা কানে দিতেই শুনতে পেল..
-মিষ্টার চ্যাটার্জী বলছেন..?
-হ্যাঁ বলছি।
-আমি টি.এম.সি.আর.সি কোলকাতা থেকে বলছি।
-হ্যাঁ বলুন।
-দেখুন..পেসেন্টের কান্ডিসান ভাল নয়, পারলে একটু তারাতারি আসুন।
এক মুহুর্ত সময় নষ্ট করেনি অনির্বান। গ্যারেজ থেকে গাড়ীটা নিয়ে এই ভোর রাতে নিজেই ড্রাইভ করে প্রায় পনেরো মিনিটের ভেতরই চলে এসেছে হসপিটলে। বিয়ের পর থেকে এই ছয় বছর কোনদিনও দূরে রাখেনি সমাপ্তি তাকে। লিউকোমিয়া ধরা পরার পরেও না। কিন্তু কেন জানিনা হসপিটলের আই.সি.ইউ তে ভর্তি থাকা গত চার দিন একবারো কাছে ডাকেনি ওকে। অনির্বান যদিও চেষ্টা করেছে কাছে যাওয়ার, সমাপ্তিই হেসে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। মেয়েটাকে কখনো কাঁদতে দেখেনি অনির্বান। এমনকি যেদিন ও জানতে পারলো ওর লিউকোমিয়া, সেদিনও না। মেয়েটা বোধ হয় সত্যিই কাঁদতে জানেনা।
.
(৩)
ডাঃ অভিরুপ সিনহার সাথে কথা বলে, আই.সি.ইউ টার সামনে এসে দাঁড়ায় অনির্বান। কাচের জানলা দিয়ে দেখতে পায়, বিছানার সাথে প্রায় মিশে যাওয়া শরীরটা লম্বা করে, চাতক পাখীর মত একদৃষ্টে দড়জার দিকে তাকিয়ে আছে সমাপ্তি। ওকে দেখা মাত্র ইশারায় ডাক দেয়। বুকের ভেতর গুঁমরে থাকা বাঁধ ভাঙা কান্নাটাকে আটকে দিয়ে, নিজেকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে সমাপ্তির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সমাপ্তির হাতটাকে হাতের ভিতর তুলে নেয়। চির হাস্যরত সেই মুখটার দিকে তাকিয়ে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেনা অনির্বান। নিজের অজান্তেই চোখের জল বাঁধ ভাঙে। আছড়ে পরে সমাপ্তির বুকে। অনুভব করে শীর্নকায় আঙুল গুলো মাতৃ স্নেহে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওর চুলের ফাঁকে। শুনতে পায়...
-এবার আমায় বিদায় দাও অনি।
-না আমি পারবনা। আমি পারবনা।
ভাঙা গলায় ডুকড়ে ওঠে অনির্বান।
-বুদ্ধু কোথাকার। আবার কাঁদছ.!
-এমন তো কথা ছিলনা সুমি। তুমি বলেছিলে, তুমি কোনদিন আমাকে ছেড়ে....
-কে বলেছে আমি ছেড়ে যাচ্ছি,
মৃত্যুতেই তো সব শেষ নয়। ভালোবাসার কি মৃত্যু হয়গো পাগল। সেতো চির শাশ্বত, অমর।

মাথার ভিতর চলতে থাকা কম্পিত আঙুল গুলো কখন যেন থেমে গিয়েছে। বাইরে তখন সূর্য উঠছে। উদিত রবির মিঠে ছোঁয়ায় জেগে উঠছে পৃথিবী। নতুন উদ্যোমে নতুন আশায় বুক বাধছে শহরটা। শুধু গোধূলির রাজ্য ছেড়ে চির তমশায় দিকে পাড়ি জমাচ্ছে আজ থেকে ঠিক চোদ্দ বছর আগে কোন এক সরু রাস্তার বাঁকে শোনা ভীষন ভীষন অভিমানী কোনদিন ফিরবে না এক সুর...!!
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৩
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×