somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : চ্যাপ্টাদের স্বপ্ন দেখতে নেই !!

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"বাবু বাজার থেকে আলু আর একটু আনাজ নিয়ে আয়।"
.
পৃথিবীতে একমাত্র মা আমাকে বাবু বলে। বাকি সবাই ডাকে চ্যাপ্টা বলে। তার কারণ আছে। আমার নাক বলে কোনও বস্তুই নেই। তাই নাক চ্যাপ্টা থেকে 'চ্যাপ্টা'। নাক প্রায় না থাকায় আমাকে বীভৎস দেখায়। যদি কোনও প্রতিযোগিতা থাকত "সবচেয়ে বদখত পুরুষ" আমি হেসেখেলে জিতে যেতাম। স্কুল থেকে কলেজ, কোনও মেয়ে আমার দিকে নরম চোখে চায়নি। একবার তাকিয়েই শক্ খাওয়ার মতো ঝটাকসে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে।
.
এবং আমি এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এখন যেটা দরকার সেটা হলো একটা চাকরি -বাকরি কিছু। মা আর আমি। আমাদের দুজনের সংসার। কিন্তু রোজগার প্রায় নেই বলতে গেলে। কিছু টাকা 'এম আই এস' করা আছে তার সুদ আর আমি দুটো টিউশ্যানি করি তাতেই কোনরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে টাল খেতে খেতে চলে যায়।
আমি মাকে বললাম, "টাকা দাও।"
মা আলমারি খুলে একটা একশো টাকার নোট আমার হাতে দিল।
.
বাইরে বেরতেই দেখি তিন্নি দাঁড়িয়ে আছে।
তিন্নি আমার সঙ্গে কলেজে পড়ত। আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে। আমাকে পাত্তা দেওয়া তো দূরের কথা, কটা কথা বলেছে সন্দেহ। আমি ওর পাশ কাটিয়ে বাজারের দিকে এগোলাম।
ও আমার কাছে এগিয়ে এসে বলল, "চ্যাপ্টা শোন, তোর কাছেই এসেছি।"
আমার কাছে তিন্নি এসেছে? এর চেয়ে কলকাতায় বরফ পড়ার খবরও অনেক বিশ্বাসযোগ্য ছিল।
আমি চুপ করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
তিন্নি বলল, "চ, আমার গাড়িতে ওঠ। অনেক খুঁজে তোর বাড়ি বের করেছি। তোর সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে।"
.
আজ এসব কী উল্টোপাল্টা হচ্ছে! আমার সঙ্গে তিন্নির জরুরি কথা আছে? গাড়িতে উঠতে বলছে!!
নাহ্ সূর্যতো আকাশে ঠিক জায়গাতেই আছে!
আমি বললাম, "বাজার যেতে হবে। কী বলবি ঝটপট বল।"
--"চ্যাপ্টা তোকে আমায় একটু হেল্প করতে হবে।"
আমি অসহায় ভাবে বললাম, "আমি তোকে কী হেল্প করব? আমার চাকরি বাকরি নেই। আমাকেই কে হেল্প করে তার নেই ঠিক।"
--"তুই ভ্যাবলাই আছিস। শোন আমার টাকা পয়সার দরকার নেই। উল্টে তুই যদি হেল্প করিস বাবাকে বলে বাবার পাঁউরুটি কারখানায় ঢুকিয়ে দেব।"
এইবার আমাকে সিরিয়াস হতেই হলো। আমাদের বাড়ির সামনের মাঠে রাখা ঝাঁ চকচকে রুপালি ইনোভা গাড়ি তে উঠে পড়লাম।
.
এখন আমি তিন্নির সাজানো প্রেমিক। ওর পরিচিতের মধ্যে আমিই সবচেয়ে কুচ্ছিত তাই আমিই সিলেক্ট হয়েছি। ওকে অনীক নামের কোনও এক রূপবান যুবক ল্যাং মেরে অন্য একজন মেয়ের সঙ্গে প্রেম করছে তাই ও বদলা নেওয়ার জন্য অনীককে দেখিয়ে আমার মতো কদাকারের সঙ্গে প্রেম করছে।
খুড়োর কলের মতো আমার সামনে পাঁউরুটি কারখানার চাকরিটা ঝুলে আছে। আমি মিছিমিছি প্রেম-প্রেম খেলছি তিন্নির সঙ্গে। ভাগ্যিস আমি কদর্য -কুৎসিত তাই তো তিন্নির আমার কথা মনে পড়েছে।
আজ রেস্টুরেন্ট কাল মুভি পরশু পার্ক তরশু শপিং মল করতে করতে কাটছে আমার। তিন্নির মতো ঝিংচাক সুন্দরীর পাশে আমার মতো এক পিস ওরাংওটাং দেখে সবাই সাংঘাতিক রেগে যাচ্ছে, আওয়াজ দিচ্ছে...
.
মাস খানেক এইভাবে চলার পরে একদিন তিন্নি এসে এমন ভাবে হাত ছুঁড়ল অলিম্পিকে সোনা জেতার পর খেলোয়াড়েরা ঠিক এভাবেই হাত ছোঁড়ে।
বলল, "আমি জিতেছি। কাল থেকে অনীক বারবার ফোন করে যাচ্ছে। প্রথমে ধরিনি একান্নটা কল কেটে তারপর ধরেছি। বলল, আমি থাকতে মুক্তোর মালা কোনও বাঁদরের গলায় কেন ঝুলবে? "
.
আমি ভাবলাম যাক বাঁচা গেল। বললাম, "তোর কাজ তো হয়ে গেল এবার আমারটা করে দে।"
--"চ্যাপ্টা তোর কী মন বলে কিছু নেই? তোর একটুও মনে হচ্ছে না যে আর আমাদের দেখা হবে না। তোর খারাপ লাগছে না? কষ্ট হচ্ছে না?"
আমি কী করে বলি, তিন্নি তুই ব্যাপক ইমোশনাল তাই এখন এসব বলছিস। আসলে কী জানিস? তুই হলি আমার কাছে কোনও বলিউডি নায়িকার মতো অন্য গ্রহের জীব, যাকে দূর থেকে দেখে ফিদা হওয়া যায়, যার ছবি ঘরের দেয়ালে চিপকানো যায়...ব্যাস ওই পর্যন্ত। তুই পূর্ণিমার চাঁদ আর আমি পারভেজের সাইকেল সারাইয়ের দোকানের মিটমিটে বাল্ব।
.
একটু চুপ করে থেকে তিন্নি বলল, "আমি অনীককে কী উত্তর দিয়েছি জানিস? বলেছি বাঁদরের গলাতেই মালাটা এতদিন ছিল এখন বরঞ্চ মানুষের গলায়। জানিস প্রথম প্রথম তোকে আমার ঘেন্না লাগত। আমি তোর মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না। তারপর তোর সঙ্গে কিছুদিন সময় কাটানোর পর কী যে হলো! এখন আর তোর মুখটা খারাপ লাগে না। বিশ্বাস কর তোকে দেখার জন্য মনটা এখন হেবি ছটফট করে।"
.
হঠাৎ আমি দমকলের ঘন্টা শুনতে পেলাম। ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললাম। তারপর তিন্নিকে হতভম্ব করে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।
... না.. চ্যাপ্টাদের স্বপ্ন দেখতে নেই ...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৩০
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×