somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুস্তারিবিন: ভয়ঙ্কর ইজরায়েলি গুপ্তচর বাহিনী।ফিলিস্তিন এ এদের কর্মকান্ড জানলে চমকে যাবেন!!

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুস্তারিবিন : ভয়ংকর ইসরাইলি গুপ্তচর
ফিলিস্তিনিদের মতোই পোশাক, নিখুঁত ফিলিস্তিনি আরবি স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলে। আচার-আচরণ সবাই তাদের মতো। মাঙ্কি টুপি কিংবা আরবীয় পাগড়িতে মুখ ঢাকা। চিৎকার করে ইসরাইলবিরোধী শ্লোগান দেয়, কখনো পাথর ছোড়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর উদ্দেশে। তবে বিক্ষোভ করতে করতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কাছাকাছি পৌঁছতেই আমূল বদলে যায় তারা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ জাপটে ধরে আশপাশের টার্গেটকৃত বিক্ষোভকারীদের। অন্যরা বাধা দিতে এলেই জামার ভেতর থেকে লুকানো পিস্তল বের করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। এমন আচমকা পরিস্থিতিতে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে বিক্ষোভকারীরা। এরপর ইসরাইলি সেনারা ছুটে এসে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তাদের জাপটে ধরা বিক্ষোভকারীদের। অনেকদিন ধরেই ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করতে এমন একদল গুপ্তচর কাজে লাগাচ্ছে ইসরাইল। সেনাবাহিনীর অধীনে কঠোর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এদের গড়ে তোলায় হয়।
এরা কারা?
এই লোকগুলোকে বলা হয় মুস্তারিবিন। হিব্রু ভাষার এই শব্দটির অর্থ যে বা যারা আরবি ভাষা ও সংস্কৃতিতে পারদর্শী। এরা ইসরাইলি গুপ্তচর। ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর একটি অফিশিয়াল পরিভাষা মুস্তারিবিন। যারা আরব সেজে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কাজ করে গোপন মিশন নিয়ে। শুধু ফিলিস্তিন নয়, ইয়েমেন, সৌদি আরব, মিশর,লিবিয়া, মরক্কো,ইরাক ও তিউনিসিয়ার মতো অন্য অনেক আরব দেশেও সক্রিয় এই ইসরাইলি এজেন্টরা। কঠোর প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয় মুস্তারিবিনদের, যাতে নিখুঁতভাবে ফিলিস্তিনি লোকদের মতো ভাষা ও আচরণ আয়ত্ত করতে পারে। ইসরাইলবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অ্যান্তোনিও শালহাতের মতে, এদের প্রধান মিশন হচ্ছে টার্গেটকৃত এলাকায় মিশে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা, ফিলিস্তিনিদের গ্রেফতার করা- মোট কথা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যায় এমন যেকোনো কার্যক্রম প্রতিহত করা। ১৯৪২ সালে প্রথম মুস্তারিবিন বাহিনী গঠন করে ইসরাইল। ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার আগের ইহুদিবাদীদের প্রধান শক্তি হাগানাহ মিলিশিয়াদের এলিট ফোর্স পালমাচের অংশ ছিল সেই মুস্তারিবিনরা। (হাগানাহ গোষ্ঠীটিই পড়ে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে রূপান্তরিত হয়)। শুরু থেকেই অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় এই গ্রুপটির কাজের বিষয়ে। যে কারণে বেশি কিছু জানা যায় না তাদের সম্পর্কে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী গঠিত হওয়ার পর এই মুস্তারিবিনদের গ্রুপটি বিলুপ্ত করা হলেও পরে আবার ভিন্ন আঙ্গিকে গড়ে তোলা হয় তাদের।
এই বাহিনীর সদস্যদের নিখুঁত আরবি জানতে হয়, যেন মনে হয় তা তাদের মাতৃভাষা। চেহারা ও শারীরিক গঠন ফিলিস্তিনিদের মতো এমন লোকদেরই বাছাই করা হয় এই বাহিনীর জন্য। এরপর ফিলিস্তিন বা যে দেশে কাজ করবে সেই দেশের উচ্চারণ ভঙ্গি, স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতির ওপর দেয়া হয় কঠোর প্রশিক্ষণ। রোজা, নামাজসহ অনান্য ইবাদতগুলো পালনেও মুসলিমদের মতো অভ্যস্ত করে তোলা হয়। চার থেকে ছয় মাস টানা প্রশিক্ষণ চলে। এরপরও বাড়তি সতর্কতার জন্য প্রয়োজনে মেকাপ ও পরচুলা ব্যবহার করে তারা। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের ভিড়ে মিশে যাওয়া, অস্ত্র চালানোসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ তো রয়েছেই। সব মিলে ১৫ মাস থেকে দেড় বছরের প্রশিক্ষণ শেষে প্রস্তুত করা হয় এক একজন মুস্তারিবিন।
মুস্তারিবেনদের সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রুপটির নাম ছিল রিমন। ১৯৭৮ সালে গঠিত গ্রুপটি ২০০৫ সালে বিলুপ্ত করা হয়। এরা মূলত গাজা উপত্যকায় কাজ করত ইসরাইলি চর হিসেবে। এ ছাড়া গত শতাব্দীর আশি ও নব্বইয়ের দশকে শিমশন নামে একটি গ্রুপও কাজ করত গাজায়। অ্যান্তোনিও শালহাত জানান, দাবদেভান-২১৭ নামে একটি এলিট ফোর্স এখনো সক্রিয় আছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীতে। আশির দশকে সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী ইহুদ বারাক গঠন করেছিলেন গ্রুপটি। মুস্তারিবিনদের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় ও গোপনীয় এই গ্রুপটি বর্তমানে কাজ করে পশ্চিম তীরে।
সাম্প্রতিক বিক্ষোভে মুস্তারিবিন
গত ডিসেম্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুসালেমকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ থেকে কয়েক শ’ ফিলিস্তিনিকে আটক করে ইসরাইলি বাহিনী। প্রথম দুই সপ্তাহেই ওই বিক্ষোভে নিহত হয় ১০ ফিলিস্তিনি। সে সময় ১৩ ডিসেম্বর রামাল্লার অবৈধ ইসরাইলি বসতি বেট আই-১ এর কাছে মুস্তারিবেনদের একটি গ্রুপ বিক্ষোভকারীদের মাঝে মিশে তিন ফিলিস্তিনি যুবককে গ্রেফতার করে। গাজার নারী সাংবাদিক রাশা হারজাল্লাহ বলেন, ‘তারা মাত্র দশ মিনিট ছিল বিক্ষোভকারীদের মাঝে। অন্য বিক্ষোভকারীদের মতোই ছিলো তাদের পোশাক; কিন্তু হঠাৎ করে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। সংখ্যা ছিল পাঁচজন। পিস্তল বের করে ফাঁকা গুলি ছুড়তে শুরু করে। তিনজনকে জাপটে ধরে। সেনারা দ্রুত গুলি করতে করতে এগিয়ে আসে এবং তিন বিক্ষোভকারীকে আটক করে নিয়ে যায়।
ফিলিস্তিনের ওয়াফা সংবাদ সংস্থার এই সাংবাদিক আরো জানান, ইসরাইলি চরদের একজন তার খুব কাছেই দাঁড়িয়েছিল। গায়ে লাল জামা, রুমাল দিয়ে মুখ ঢাকা। বিক্ষোভকারীদের একেবারে সামনের সারিতেই ছিল সে। সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের পর যখন সেনাবাহিনীকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল, তখন দেখা যায় এক বিক্ষোভকারীকে জাপটে ধরে মাটিতে পড়ে আছে সেই লাল জামাওয়ালা। রাশা বলেন, ‘আমি কাছে যেতে চাইলে সে পিস্তল বের করে আমার দিকে তাক করে। পাশ থেকে এক ফটোগ্রাফার চিৎকার করে আমাকে কাছে না যাওয়ার জন্য সাবধান করে দেয়।’
চেনার উপায় কী
ইসরাইলি সেনাবাহিনী এই গুপ্তচরদের এত নিখুঁতভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে নামায় যে, তাদের চেনা প্রায় অসম্ভব। তবে সাংবাদিক রাশা জানান, সেদিন মুস্তারেবিন তাদের গ্রেফতার অভিযান শুরু করা আগে অনেকক্ষণ ফিলিস্তিনিরা সেনাদের ওপর পাথর ছুড়েছে; কিন্তু সেনাবাহিনী কোন জবাব দেয়নি। বিষয়টি তখনই সন্দেহজনক মনে হতে থাকে। তারা বুঝতে পারেন বিক্ষোভের মধ্যে মুস্তারেবিন আছে। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে তাদের জানা আছে, বিক্ষোভে ইসরাইলি চর প্রবেশ করলে সেনারা গুলি, টিয়ার গ্যাস কিছুই ছোড়ে না; কিন্তু এত বিক্ষোভকারীর মধ্যে কে গুপ্তচর তা বোঝার কোনো উপায় ছিল না তাদের। ২০১৫ সালের একটি বিক্ষোভেও এই মুস্তারিবিনদের অভিযান কাছ থেকে দেখেছেন রাশা। সেবার দুই ফিলিস্তিনিকে জাপটে ধরে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে তারা। প্রাণে বেঁচে গেলেও মাথায় গুলি লাগা একজন আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে মুস্তারেবিনদের উপস্থিতির বিষয়ে অনেক সতর্ক হয়েছে ফিলিস্তিনিরা। বিক্ষোভকালে আশপাশের লোকদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। নিজেদের মুস্তারিবিনদের থেকে আলাদা করতে তারা কোমরের কাছে প্যান্টের ভেতর শার্ট গুজে রাখে (ইন করা)। কারণ, কোমরে অস্ত্র গোঁজা থাকলে কেউ এমন করতে পারবে না। কখনো কখনো বিক্ষোভকারীদের পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গ্রুপকে দায়িত্বও দেয়া হয়। যাদের দায়িত্ব হয় বিক্ষোভে সন্দেহজনক লোকদের উপস্থিতির ওপর চোখ রাখা।
.
.....সোর্স- প্রথম আলো,বাংলা খবর, আল-জাজিরা
.....কৃতজ্ঞতা : আমার বন্ধু Salman Shamil
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:২৪
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×