somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : দাঙ্গা

০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোরবেলায় আবিষ্কৃত হল দেহটা। মফস্বঃল শহরের শেষপ্রান্তে, যেখানে আবর্জনার স্তপ ডাঁই করা থাকে, তার পাশে ছোট্ট মাঠে। এদিকে প্রাতঃভ্রমণকারীরা আসেন না। মাঝারি স্কেলের সমাজবিরোধী আর উঠতি নেশাখোরদের আড্ডা। কয়েকজন মুনিষগোছের লোক প্রথম দেখতে পায়। ততক্ষন শেয়ালে, শকুন বা রাতচরা জন্তুরা খানিকটা খেয়েও নিয়েছে।
গায়ের শাড়ী আর লম্বা চুল থেকে বোঝা গেল দেহটা নির্ঘাৎ কোনো মহিলার।

সীমান্তশহরে এমনিতেও ধর্মীয়- রাজনৈতিক উত্তেজনার অভাব হয়না। সংখ্যা হিন্দু-মুসলিম প্রায় সমান সমান। রোদ ওঠার সাথে সাথে দুটো জিনিস একই সাথে ছড়িয়ে পড়ল, ধর্মীয় উত্তেজনা আর লাশপচা গন্ধ। থানা থেকে লোক এলেও তারা ধারে কাছে ভেড়েনি। উচ্চ পর্যায়ের নেতারা যতক্ষন না গ্রীন সিগন্যাল দেবেন ততক্ষণ এ বডি তোলা রিস্কি।

কয়েক আলোকবর্ষ দুর হতে পৃথিবীর মাটিতে এসে নেমেছে এলিসিয়া গ্রহের প্রাণীরা এবং তারা এসেছে এ শহরেই। অত্যুন্নত এই প্রাণীদের সমস্ত কিছু যন্ত্র নিয়ন্ত্রিত। তারা দুঃখ হাসি কান্না প্রেম ইত্যাদি আবেগের সাথে পরিচিত নয়। সুতরাং বুঝতে পারলনা সারাদিন ধরে শহরের মানুষজন কেন পাগলপারা হয়ে ছুটোছুটি করে। বাতাসের তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়াতে আন্দাজ করল, ছোট্ট জনপদের বাসিন্দারা প্রচুর পরিমানে আগুন লাগাচ্ছে।

উগ্র হিন্দু সংগঠনের নেতারা দুপুর থেকে উত্তেজক বক্তব্য রাখল, বিকেলে ধর্মরক্ষায় মাঠে নামল মুসলিম জিহাদী গোষ্ঠীর সৈনিকেরা। উভয়েরই দাবী নিহত মেয়েটি তাদের ঘরের। মহিলাদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়েছে এ রাজ্যে। প্রতিকার চাই।

রাত্রি আটটা নাগাদ নাঙ্গা তলোয়ার ফেজ টুপি পরে আল্লা হু আকবর বলে যারা 'প্রতিকার চাই' প্রোগ্রামে নেমেছিল, তাদের নজর পড়ে দত্তবাড়ির ষোড়শী কন্যা টিউশন পড়ে ফিরছে। সদলবলে তেড়ে যাওয়ার মুখে তাদের বাধা দেন বৃদ্ধ মহীদুল মাস্টার।
ছুরিকাহত হয়ে তিনি শেষবারের মত বলতে পেরেছিলেন, মা তুই পালা। মেয়েটি যা হোক পালাতে পেরেছিল।

জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলে ত্রিশুল ফিশুল নিয়ে সাড়ে আটটার সময় কে বা কারা যখন সাত বছরের মুন্নু সেখকে কোপাতে আসছিল তখন মুদি দোকানদার হারান সাঁতরা তাকে তুলে নিয়ে ছুট মারে। হারানকে পিছন থেকে গুলি করা হয়, ঘটনাচক্রে পুলিশ ভ্যান এসে পড়েছিল। মুন্নু বেঁচে গেছে।

এলিসিয়া গ্রহে গবেষণা চলছে। সেই সূত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কিছু জিনিস স্যাম্পেল হিসাবে নিয়ে যাওয়া চাই। এই মারাত্মক অগ্নিকান্ড আর তান্ডবের ভেতরে তারা ঠাহর করতে পারেনা, তাদের অত্যুন্নত মস্তিষ্ক ফেল করে যায়, মানুষ নামের জীবগুলো কেন একে অপরকে মারছে সারাদিন?

পরদিন সাতসকালে মুদ্দফরাশ এসে হাজির। লাল ফিতের ফাঁস খোলা কি মুখের কথা? কলকাতায় বসে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ফাইল সই করেন বটে, সেটা নেমে ডিএম, এস ডিও হয়ে আসতে আসতে দেরি হয়ে যায়। যে মহিলার বডি নিয়ে উত্তেজনা ছড়ালো তা তুলে এনে পোস্ট মর্টেম সমাপনান্তে স্পেশাল এনকোয়ারি কমিটি বসানোর হুকুম হল।

মুদ্দফরাশরা কাছে গিয়ে বডি ধরে টানাটানি করে। বলে হুজুর এ লাশের তো অন্য কেস আছে। কি কেস? ঘেন্নায় নাকমুখ চেপে ধরে বড়বাবু জিজ্ঞেস করেন।
-আজ্ঞে এ মাল হেঁদু মোচুমান কিছুই না।
- মানে, তবে কি খেরেস্তান, যত্তসব, বডি দেখে মেয়েছেলের জাত বুঝে যাস!
- হুজুর এ হল গিয়ে.... ছেলেও না মেয়েও না!

এলিসিয়া গ্রহের প্রাণীদের ডেটাবেসে ফুটে উঠছে পৃথিবীর বিস্ময়কর এক তথ্য। এ গ্রহে তৃতীয় লিঙ্গের একরকম প্রাণী জন্ম নেয়। এদের লিঙ্গপরিচয় নেই, ধর্মপরিচয় সচরাচর দেয়না। এদের হিজড়ে বলে। জন্মসুত্রে যাই হোক, মোটামুটি সমন্বয়বাদী ধর্ম পালন করে এরা। মরনের পরে বাইরের সমাজ জানতে পারেনা কি হল। হয়ত খুব গোপনে দাহ বা দাফন করা হয় তাদের, অনেকের মরদেহকে ঝাঁটা-জুতো-লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ফেলে রাখা হয় মাঠে। শালীনতাহীন বীভৎস পরিনতি নিয়ে সে হতভাগা বা হতভাগী যেন এই বিষাদময়জীবন আর ফিরে না পায় পরজন্মে।

বডি মর্গে পাঠানো হল। কাল রাত থেকে যেসব বীরপুঙ্গব শিশু নারী বৃদ্ধর জবাই করার প্রস্তুতি নিয়েছিল, তারা হঠাৎ সুবোধ হয়ে গেল। সিআরপিএফ জওয়ানরা ঠান্ডা চোখ মেলে শহরে পায়চারি করছে। আরো ঠান্ডা তাদের বন্দুকের নল। ওদিকে মর্গে হইচই পড়ে গেছে৷ আগের দিন দাঙ্গায় নিহত দুটো লোকের বডিতে আশ্চর্যরকম ফুটো। কেউ যেন নিখুঁত হাতে কেটে তুলে নিয়েছে তাদের হৃৎপিন্ড দুটি! মিডিয়া এসেছে, রহস্যের হাতছানি পেয়ে আজ সন্ধ্যেয় সরগরম থাকবে নিউজচ্যানেল।

প্রায় আলোর সমান গতি নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে এলিসিয়ার মহাকাশযান। তাদের এই বিপজ্জনক গ্রহে থাকার সাহস হয়নি। নীল গ্রহের খুব দামী দুটো জিনিস নিয়ে ফিরে যাচ্ছে তারা, মাতাল, বোকাসোকা হারান সাঁতরা আর রুগ্ন ধর্মভীরু মহীদুল মাস্টারের হৃৎপিন্ড। ক্ষুধা, দারিদ্র, কান্না, ঘেন্নায় ভরা প্রেমহীন ধরিত্রীর সবচেয়ে দামি আর বিরল দুটো জিনিস।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২৮
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×