somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : আমার রাগী জ্যাঠামশাই ও কবিতা !!

২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কদিন ধরেই পৃথিবীতে আজগুবি সব ব্যাপার-স্যাপার হচ্ছে। আমার জ্যাঠামশাই, তাঁর মতো রাগী এবং নিরস লোক ব্রহ্মান্ডে নেই বলেই আমার বিশ্বাস। সবসময় ভুরু বিশাল ভাবে কুঁচকে রাখার ফলে ভুরুর অবস্থা এমন হয়েছে যে পাড়ার ছেলেমেয়েদের বক্ররেখা শেখানোর জন্য সবাই জ্যাঠামশাইয়ের ভুরু দেখায়। মানুষটাকে জীবনে কোনদিন এক কলি গানও, মায় বাথরুমেও গুনগুন করে গাইতে শুনিনি, সেই মোগাম্বো টাইপ মানুষটা হঠাৎ করে কবিতা লেখা শুরু করে দিলেন। তখনই মনে হয়েছে পৃথিবীর নাটবল্টু নির্ঘাত ঢিলে হয়ে গেছে।
জ্যাঠামশাইকে আমরা চিরকালই ভয় পেতাম, এখন তার সঙ্গে তাঁর কবিতাকেও ভয় পেতে শুরু করলাম। দু একটা উদাহরণ দেওয়া যেতেই পারে:
.
কালো হুলোটা মহাপাজি
মাছ খায় চুরি করি
ধরতে পারলে ব্যাটার কান
মলে দেব বেশ করি
.
হয় যদি পেটে অধিক বায়ু
দাঁড়িও না আকাশের নীচে
ফানুস হয়ে যাইবে উড়িয়া
ছুটিবে শকুন তোমার পিছে
.
সমস্যা হল জ্যাঠাইমার। জ্যাঠা রিটায়ার করার পর থেকে জ্যাঠাইমার সারাদিনের বেশির ভাগ সময় কাটত জ্যাঠার সঙ্গে ঝগড়া করে। এখন জ্যাঠা সারাদিন একটা আট নম্বরের নোটবুকে মুখ গুঁজে বসে থাকেন আর মাঝে মাঝে একটা লাইন লিখে সজোরে মাথা নাড়েন। তাহলে জ্যাঠাইমা বেচারি সময় কাটায় কিভাবে! আমার মা সান্ত্বনা দিয়ে বলল, টিভি সিরিয়ালে মন দিতে। কিন্তু জগৎসংসারে ঝগড়া করার মতো আনন্দদায়ক কিছু আর যে নেই এটা জ্যাঠাইমা কী করে অন্যদের বোঝায়!
এরপর জ্যাঠার কবি প্রতিভার আরও একটু বিকাশ হল। শুরু হল ছন্দ মিলিয়ে কথা বলা। যেমন...
চা দিতে এত কেন হয় দেরি
বাজারে কখন যাইব হে নারী...

জ্যাঠাইমা সুযোগ পেয়ে গেল। বলল, "হবে হবে দেরি হবে। কতগুলো দাসী রেখেছ শুনি?"
এই লেগে গেল বোধহয়! আমরা সবাই নিশ্বাস বন্ধ করে জ্যাঠার জবাবের অপেক্ষায় রইলাম। জ্যাঠা জলদ গম্ভীর স্বরে সবাইকে হতাশ করে দিয়ে বললেন, "তাহলে যাই বের করি খাতাখানি/
লিখে ফেলি কিছু কবিতা এখনি।"
.
ব্যাপারটা একদিন চরম আকার ধারণ করল। জ্যাঠাইমা, মা ও কাকিমারা রান্নাঘরে রাতের খাওয়া খাচ্ছিল। জ্যাঠা হঠাৎ সেখানে গিয়ে জ্যাঠাইমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "ওগো প্রিয়া তোমায় লইয়া লিখেছি কবিতা/ ত্বরা করি এসো শোনাতে চাই তা।"
শুনে উপস্থিত সবাই দৌড়ে পালাল। জ্যাঠাইমা লজ্জায়-ঘেন্নায় আত্মহত্যা করার অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু দড়ি-কলসি যদি বা পাওয়া গেল একটা পুকুর কাছেপিঠে পাওয়া না যাওয়ায় জ্যাঠাইমার আত্মহত্যা করা হল না।
এরপর বাড়ির বাকি পুরুষরা আর চুপ করে থাকতে পারল না।
.
ভূত তাড়ানোর ব্যাপারে বিশুর প্রভূত নাম। ভূত তাড়ানোটা তার পার্ট টাইম জব, এমনিতে বাজারে আনাজ বিক্রি করে। তাকেই সুপারি দেওয়া হল। একদিন সক্কাল সক্কাল সে হাজির হল দুজন শাগরেদ ও নানা রকম উপকরণ নিয়ে।
বিশু প্রথমেই জ্যাঠামশাইকে একটা গাঁদা ফুলের মালা পরিয়ে দিল। জ্যাঠা ভাবলেন তাঁর কবি প্রতিভার স্বীকৃতি।
তিনি বললেন, "এ মণিহার আমায় নাহি সাজে/ রজনীগন্ধার মালা কী জুটল না আজে?"
ওঝা এবার ধুনো টুনো জ্বালিয়ে মন্ত্র পড়া শুরু করল। জ্যাঠামশাই প্রথমে বুঝতে পারেননি ব্যাপারটা। কিন্তু বিশু ওঝা যখন ঝাঁটা বের করল তখন হঠাৎ তাঁর চোখ সেই পুরানো দিনের মতো রক্তিম বর্ণ ধারণ করল। ঝাঁটাটা খপ্ করে ধরে নিয়ে বললেন, "তুই বিশা না? বাজারে পচা পুঁই শাক বিক্রি করিস? হারামজাদা তোর এত সাহস হয় কী করে আমায় ঝাঁটা মারার? আজ তোকে গুলি করে দেব। কেউ বন্দুকটা বের করো।"
বন্দুক! বন্দুক তো আমাদের বাড়িতে নেই! কিন্তু জ্যাঠামশাইয়ের এই ধমকানিতে ব্যাপক কাজ হল। বিশু ওঝা জ্যাঠামশাইয়ের পা ধরে নাক কান মুলে, ক্ষমা চেয়ে বিদায় নিল।
.
হঠাৎ একদিন দেখা গেল জ্যাঠামশাই পূর্বাবস্থায় ফিরেছেন। ভুরু ফের বক্ররেখায় পরিণত হয়েছে। রাগী থমথমে মুখ। কবিতার খাতা আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পরে জানা গেল, বেশ কিছু কবিতা তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় পাঠিয়েছিলেন, সবগুলোই অমনোনীত হয়ে ফেরত এসেছে।
এক সম্পাদক আবার একটি মন্তব্যও জুড়েছেন ফেরত পাঠানো কবিতার সঙ্গে, 'জল পড়ে পাতা নড়ে পাগলা হাতির মাথা নড়ে টাইপ কবিতাগুলি পাঠ করলাম। পড়ে যা বুঝলাম, হয় আপনি প্রেমে পড়েছেন নতুবা আপনার পেট গরম হয়েছে! প্রেমে পড়লে কিছু করার নেই তবে যদি না পড়ে থাকেন তবে এখন নিয়ম করে কিছুদিন ইসবগুলের ভুসি ও ডাব খান।'
.
সম্পাদকের বিদ্রূপ নাকি ইসবগুলের ভুসি ও ডাবের জল, তাঁর পূর্বাবস্থায় ফেরার জন্য কে দায়ী তা অবশ্য বলতে পারব না।
(পুরনো লেখা।আগে দিয়েছিলাম কিনা মনে নেই।)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:০৯
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×