
-- "হ্যাঁ। কেন বলুন তো?"
-- "আপনার ডেবিট কার্ডের ব্যাপারে কিছু তথ্য চাই। এটা একটা রুটিন ভেরিফিকেশন।"
-- "দিতেই হবে? আর যদি না দিই?"
-- "তাহলে আপনার কার্ড লক করে দেওয়া হবে।"
-- "উরে বাব্বা, তাই নাকি! কার্ড লক হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাব। ওই অ্যাকাউন্টে প্রায় চার লাখ টাকা আছে। মানে ওই একটাই মাত্র অ্যাকাউন্ট আমার। এটিএম থেকে অল্প অল্প টাকা তুলি দরকার মতো। লক হয়ে গেলে খুব মুস্কিলে পড়ে যাব।"
-- "বেশ তাহলে বলুন যা জানতে চাই।"
-- "একটু ধরুন প্লিজ। আমার মিসেস কেন ডাকছে দেখি।...ওগো শুনছ একটু দাঁড়াও, আমি একটা জরুরি ফোনে আছি। হ্যাঁ কী হয়েছে? মাংসটা চেখে দেখতে হবে? আচ্ছা দেখছি দেখছি। দাঁড়ান ভাই একটু মাংসটা চেখে নিয়েই সব বলছি।"
-- "স্যার একটু তাড়াতাড়ি করুন। দেরি হলে কার্ড লক হয়ে গেলে আপনিই মুস্কিলে পড়ে যাবেন। চার লাখ আছে বললেন না?"
-- "হুঁ চার লাখ। দাঁড়ান দাঁড়ান ব্যাঙ্কের মেসেজটা দেখে বলছি।.. হুম চার লাখ একুশ হাজার পাঁচশো ছত্রিশ টাকা। একটা ইনসিওরেন্সর তিন লাখ টাকা ঢুকেছে। তাই এতটা ব্যালেন্স।..হ্যাঁ গো মাংসটা খুব ভাল হয়েছে। আর সামান্য একটু নুন দিতে হবে মনে হচ্ছে। ঝাল একটু বেশি দিয়েছ, বলো? শুকনো লংকা একগাদা দিয়েছ নাকি? খেতে কিন্তু ফার্স্টক্লাস হয়েছে।"
-- "স্যার আপনি খুব দেরি করে দিচ্ছেন। এরপর কিছু হলে তখন ব্যাঙ্ককে দোষ দেবেন না কিন্তু।"
-- "ভাই এক্সট্রিমলি সরি। বলুন বলুন কী বলতে হবে?.. না না বেশি নয়। অল্প একটু নুন দিও। খুব ভাল সেদ্ধ হয়েছে বুঝলে। বেশ কচি পাঁঠা মনে হচ্ছে। স্যালাড আমিই করব।.. হ্যাঁ কী যেন বলতে হবে ভাই? আপনার গলা শুনে আপনাকে বেশ কম বয়সীই মনে হচ্ছে তাই ভাই বলছি, কিছু মনে করছেন না তো?"
-- "না না কিছু মনে করছি না। আপনি শুধু ডেবিট কার্ডের সিক্রেট পিনটা বলুন তাহলেই হবে।"
-- "সেরেছে সে তো আমার মনেই থাকে না। দাঁড়ান দাঁড়ান একটা কাগজে লিখে আলমারিতে রেখেছি। এক্ষুনি বলছি।.. ওগো শুনছ? আলমারির চাবিটা কোথায় একটু বলবে?.. এক্ষুনি এক্ষুনি লাগবে। দেরি করলে চলবে না। খুব জরুরি রে বাবা।.. দাঁড়ান ভাই এক্ষুনি বলছি। শুধু এইটুকু দরকার প্রথমেই যদি বলে দিতেন তাহলে এতক্ষণে দিয়েই দিতাম।"
-- "একটু তাড়াতাড়ি করুন।"
-- "হ্যাঁ হ্যাঁ এই যে দিচ্ছি।.. ও আলমারিতে চাবি দেওয়া নেই? আলমারি খোলাই আছে? আরে আগে বলবে তো।.. এই যে ভাই.. আসলে পিন আমি শুধু ভুলে যাই তাই লিখে রাখি। কী ভাই আমার মতো ভুলো মনের মানুষের সেটাই করা উচিত, না কী বলেন?"
-- "হ্যাঁ হ্যাঁ, এবার নম্বরটা বলুন?"
-- "উফফ আলমারির কী অবস্থা!.. শুনছ একবার এসো না। লকারে একটা কাগজ রাখা ছিল। সব তো ওলট-পালট করে রেখেছ। জানেন পুরো লকারটা ইমিটেশান গয়নায় ভর্তি। আসল গয়নাতো সব ব্যাঙ্কের লকারে রাখা আছে। আচ্ছা ভাই আপনিই বলুন, ইমিটেশান কেউ যত্ন করে আলমারির লকারে রাখে? আমার আসল কাগজটাই কোথায় চাপা পড়ে গেছে। একটু ধরুন এক্ষুনি খুঁজে বলছি। লক হয়ে গেলে বিপদে পড়ে যাব কিন্তু ভাই।"
-- "আপনি আমার সঙ্গে মজা করছেন? মজা? আপনার সাহস তো কম নয়? জানেন আমি কী করতে পারি?"
-- "না না বিশ্বাস করুন মজা করিনি। এই তো গত রবিবারেও আপনার মতোই একজন ফোন করেছিলেন ব্যাঙ্ক থেকে। তিনি মহিলা। আমি তাঁকে অবশ্য বোন বলিনি, ম্যাডাম বলেছি। অনেকক্ষণ কথা হলো তাঁর সাথে। তিনিও ওই সিক্রেট পিনটাই চাচ্ছিলেন, না না উনি ডেবিট কার্ডের সিভিভি নম্বরটা চাইছিলেন। তবে তাঁর কী হলো কে জানে! বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে হুট্ করে ফোন কেটে দিলেন। আরে আমি কথা বলতে ভালবাসি তাই মন খারাপ হয়ে গেল। হ্যাঁ আপনি কী চাইছেন যেন? সিক্রেট নম্বরটা? আমার এত ভুলো মন কিচ্ছু মনে রাখতে পারি না। অথচ এই ভুলো মন নিয়েই পঁচিশ বছর পুলিশে চাকরি করছি। সি আই ডিতেই আছি কুড়ি বছর। কত ক্রিমিনালের পেট থেকে কত কথা বের করেছি। আড়ালে সবাই ঠ্যাঙাড়ে ঘোষ বলে আমায়। ..হ্যালো হ্যালো, যাহ্ বাবা কেটে দিলেন কেন? ... সেদিনও একই কেস হলো। ধুস্ চাকরির কথাটা না বললেই হতো। ওগো যাচ্ছি দাঁড়াও, স্যালাডটা.."
.
(এক বন্ধুর সহযোগিতায় প্রায় ২ বছর আগে লিখেছিলাম।)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


