somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্যঃ বৌ এর চুল

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চুল উঠে টাক পড়ে যাওয়ার মতো দুঃখের কিছু নেই। আমার এক ফান্টুস পিসতুতো দাদার যুবা বয়েসেই হঠাৎ করে খুব চুল ওঠা শুরু হল। দাদা প্রতিদিন চিরুনিতে বিচ্যুত চুলের গুচ্ছ দেখে আর স্টেশনারি দোকানে দৌড়ায়। হেয়ার টনিক, হেয়ার ভাইটালাইজার, হেয়ার সেরাম ইত্যাদি কিনে আনে। শেষে এমন হল, দাদা মেঝেতে শুতো আর সারা বিছানা টেবিল সর্বত্র অ্যান্টি হেয়ারফল প্রোডাক্টে ভর্তি হয়ে থাকত। তবুও চুল পড়া আটকানো যায়নি। দাদার শেষ চুলটা যেদিন পড়ে গেল, খবরটা পেয়ে পাড়ার কোনও কোনও স্টেশনারি-কসমেটিক্স দোকানদাররা নাকি কান্নাকাটিও করেছিল। কে আর কিনবে ডজন ডজন হেয়ার প্রোডাক্ট!
.
কথা হল চুল পড়ে যাওয়া ইন্দ্রলুপ্ত রূপ আয়নায় দেখা যেমন কষ্টের, আবার সেই চুল খাবারে দেখতে পাওয়াও কম কষ্টের না। আর ভাগ্যের পরিহাসে খাবারে চুল থাকার ঘটনা আমার সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি ঘটে যদিও আমি অনেক ভেবেও তার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ বের করতে পারিনি।
ফলত ভাল বড় হোটেল থেকে শুরু করে ঘর, নেমন্তন্ন-বাড়ি, সর্বত্র আমার খাবারে চুল থাকাটা অতি স্বাভাবিক ঘটনা বলে ইহজগতের সবাই এখন মেনে নিয়েছে।
.
.
কলকাতায় এক বড় হোটেলেও বিস্মিত হয়ে দেখেছি আমার চিকেন কষায় একটি সুদীর্ঘ চুল। হোটেলের বয়কে ডেকে বলতে সে উত্তর দিল, "তাহলে এই মাত্র পড়েছে। আমাদের খাবারে কখনও চুল পড়ার কমপ্লেন কেউ করেনি।"
বলে খুব অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে আমার বউয়ের চুলের দিকে তাকাল।
আমি বললাম, "ভাই মাংসের দু-পিস পুরো চুল দিয়ে সাত পাকে না হলেও তিন পাকে বাঁধা আছে। এটা এইমাত্রর গল্প নয়।"
বয় ভাল করে দেখে বলল, "আচ্ছা পাল্টে দিচ্ছি।"
.
ধুলাগড়ের এক হোটেলে পনিরের তরকারিতে চুল পেলাম। এক ম্যানেজার গোছের কাউকে বললাম। তিনি চুলটা তুলে দেখাতে বললেন এবং অতীব সুক্ষ্ণ ভাবে নিরীক্ষণ করলেন(মাঝে এদিক-ওদিক এমন ভাবে তাকালেন, আমার মনে হল একটা ম্যাগনিফাইং গ্লাস খুঁজছেন)। যাইহোক শেষপর্যন্ত তিনি এই সিদ্ধান্তে এলেন, "সাইজে লম্বা আছে, এ লেডিজ চুল না হয়ে যায় না। লেডিজ চুল মানে কোনও কাস্টমারের। কারণ আমাদের সব জেন্টস স্টাফ।"
আমি কোনও উত্তর দিতে পারলাম না। সত্যি তো কাস্টমারের চুল হলে হোটেল কেন দায়িত্ব নেবে! আর চুলের আয়তন (দৈর্ঘ্য ও ঘনত্ব) নিয়ে আলোচনা করলে সেটা অশ্লীলতার দিকে চলে যেতে পারে ভেবে পনির বাদ দিয়েই খেয়ে নিলাম।
.
আগেকার দিনে খাদ্যে চুল থাকা জঘন্য অপরাধ বলে গণ্য হত। তখনকার দিনের পুরুষ মানে এক এক পিস কেশর ফোলানো সিংহ। সে সময় খাবারে চুল পাওয়া গেলে পুরো থালার খাবার মায় বাটির তরকারি পর্যন্ত বদলাতে হতো। শুনেছি একবার ভাতে একসাথে দুটো চুল পাওয়া গেছিল বলে আমার মেজো জ্যাঠামশাই, একটা জলের গ্লাস, দুটো ফুলদানি, একটা টেবিল ল্যাম্প ও একটা ট্রানজিস্টার রেডিও ভেঙেছিলেন। চারজন মিলে জ্যাঠাকে থামিয়েছিল। না থামালে উনি কাঁচের আলমারিটাই উল্টে দিতেন, যার মধ্যে প্রচুর কাঁচের প্লেট-টেট ছিল। ওটাই ছিল মুখার্জিবাড়ির ইতিহাসে খাবারে চুল থাকার জন্য ভাঙা-ভাঙির রেকর্ড। অ্যাকশানের সময় উনি নাকি গর্জন করছিলেন, এই বলে, "শালা হেয়ার অ্যান্ড দেয়ার অনলি হেয়ার অ্যান্ড হেয়ার!"
.
এখন দিনকাল অন্যরকম।
ঘরে খেতে বসে প্রায়শই চুল পাওয়া যায় খাবারে। এই আজই যেমন। লাবড়া বা ঘ্যাঁটে (যাকে আজকাল বিয়ে বাড়ির মেনু কার্ডে নবরত্ন কারি লেখা হয়) চুল পেলাম, যেটা কুঁদরি হয়ে পটলকে জড়িয়ে কুমড়োতে পাক খেয়ে আলুকে গিয়ে আলিঙ্গন করছে।
চুলের দৈর্ঘ্যের দিকে ইঙ্গিত করে বউকে বলতে বউ উত্তর দিল, "আমার একটা চুল যদি তরকারিতে পড়েই থাকে তাতে অত তুলে দেখানোর কী আছে? ফেলে দিয়ে খেয়ে নাও। আমার চুলে তোমার চুলের মতো খুশকি নেই। রীতিমতো পরিষ্কার থাকে, তিনদিন ছাড়া শ্যাম্পু দিই, কন্ডিশনার দিই, বাজাজ অ্যামন্ড মাখি রোজ, বুঝলে?"
আমি বুঝে যাই...
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৫৯
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×