somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য নয় : একটি পারিবারিক গল্প (দ্বিতীয় অধ্যায়)

০২ রা জুলাই, ২০২২ রাত ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম পর্ব : একটি পারিবারিক গল্প

সকাল সাড়ে আটটা, কমলিনী ঝাঁই ঝ‍্যাঁৎ , ফ্যাসসস , খটখট করে প্রচন্ড হাত চালিয়ে রান্না করছেন। ছেলে আহান স্কুলে যাবে, বর অনির্বান এর অফিস আছে, তার আগে একটা মাছের ঝোল, গরম ভাত আর এক দুটো ভাজাভুজি নামিয়ে ফেলতে হবে তো। তার উপর আবার দুজনের টিফিন বানানো বাকি। 7 বছরের ছেলে, কিন্তু খাওয়া নিয়ে এত নখড়া যে প্রতিদিন সকালে তার গলা দিয়ে খাদ্য নামানো আর চালের আড়তে 10 টন চালের 10000 বস্তা আনলোড করার সমান।
বর অনির্বানের এত সমস্যা নেই। গোবেচারা, গোলগাল একটা ভালো মানুষ, এমনকী অখাদ্য খাবারও এমন সোনামুখ করে খেয়ে নেয় যে মাঝেমাঝে কমলিনীর রাগ হয়ে যায় মিনসেটার উপর। একটু বললে কী হয়? অ্যাঁ! কমলিনী কি কামড়ে দেবে ওকে? কিন্তু এ রাগ বেশিক্ষণ থাকে না,,, মানুষটা বড় শিশুসুলভ। কিছুটা অসহায়ও বটে। তেমন একটা প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করে উঠতে পারে না, ভয় পায়, সঙ্কুচিত হয়ে যায়। মনে আছে ছেলের নামকরণের সময় সবাই অনিরুদ্ধ, অনিকেত ইত্যাদি নাম সাজেস্ট করছিল,,, কিন্তু কমলিনী হিন্দি সিরিয়ালের পোকা ,, রিহান , রুজান , আহান এসব নামের গ্ল্যামারাস ভাবটাই তার মাথা মজিয়ে রেখেছিল, সেই চ্যাটচ্যাটে রস মাখানো ক্কাথ থেকে বেছে টেনে সে ছেলের নামকরণ করেছে "আহান" , মাত্র একবার মুখ গম্ভীর আর চোখ বড় বড় করে তাকাতে হয়েছে অনির্বানের দিকে, ব্যাস.....কাজ হয়ে গেছে....কোনোরকম কনফ্রন্টেশন মানুষটাকে খুব গুটিয়ে ছোট করে দেয়। তাই কমলিনীর এই মানুষটার প্রতি বড় মায়া। মানুষটাও বড় মায়াময়, গোলগাল, ফর্সা , ঘেমে ভিজে যাওয়া হাসিমুখ নিয়ে সন্ধ্যেবেলা যখন অফিস থেকে বাড়ি ফিরে ব্যাগ থেকে তাঁর বা ছেলের পছন্দের চপ - সিঙ্গারাটা ,, বা ইলিশ মাছের প্লাস্টিক প্যাকেটটা বের করে বযেন "দেখো তো কী এনিচি" -- কমলিনীর নিজেকে এ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বউ বলে মনে হয়।

"আহাআআন , বাথরুম থেকে বেরোবি না আমি কান ধরে বের করবো? জানোয়ার,, দেরী হয়ে যাবে তো!!" --- এই এক চিৎকারে ডাবল কাজ হয়,, অনির্বানও তড়িঘড়ি রেডি হয়ে যায় প্রভাতী আলস্য - আড়মোড়া ভেঙে।
আগুন লাগার এলার্ট আসার পরের মুহূর্তের দমকল কর্মীদের তৎপরতায় বাপ ছেলে ঘিপঘাপ রেডি হয়ে উঠোন পেরিয়ে বেরোতেই অনির্বানের মুখটা হাঁ হয়ে গেল, হৃৎপিন্ড লাফ দিয়ে গলায় চলে এলো --- অনতিদূরে রাস্তার অপজিটের মুদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ছেনু। ওঁকে দেখে হাসলো। অনির্বানের সারা শরীর দিয়ে বিদ্যুৎ খেলে গেলো।

ছেনু মাকে বিক্কিরি করতে পারে নি, আরবে মাগী বিক্কিরি করতে গেলে কাকে ধরতে হয়, সে জানে না। রমা দির বাপকে ধরেছিল সে, কিন্তু সে শুয়োরের বাচ্চা মেয়ে বেচা টাকায় গলা অবধি ইংরিজি মদ খেয়ে হেগে বমি করে নেতিয়ে আছে, কথা বলছে না। এদিকে হাতের টাকা শেষ হচ্ছে। তাই ছেনু তার সবচেয়ে পুরোনো আর রেগুলার কাস্টমারের কাছে এসেছে, অনির্বান। অনির্বানই ছেনুর পোত্থম কাস্টমার। হেবি ব্যথা লেগেছিল ছেনুর, চিৎকার করে অজ্ঞান প্রায় হয়ে গেছিল, রক্তে ভাসাভাসি কান্ড, ছেনুর মা ভেবেছিল অনির্বান বুঝি আর কোনোদিন আসবে না, কিন্তু না,,,, অনির্বানের ওই যন্ত্রনাটা দেখতে ভালো লেগেছিল, নিজেকে অসম্ভব শক্তিশালী ফীল করছিল সে। অনির্বানের মত একটা নেহাৎ ছাপোষা লোক, যাকে কেউ পাত্তা দেয় না, কেউ জোরে ধমকে দিলে গু বেরিয়ে যায়,, তার দেওয়া যন্ত্রনায় কেউ কাতরাচ্ছে,, আহাহাহা,, কী অদ্ভুত শক্তি,, গালাগালি দিতে দিতে গলা টিপে ধরতো ছেনুর , "দেখ কেমন লাগে খানকির বাচ্চা খানকি" বলে সজোরে কোমর ঠেলতো অনির্বান। মাল পড়ে গেলেও চুল ধরে টেনে রেখে কোমরের ধাক্কা মেরেই যেত,, যতক্ষন মাথার ভিতর ক্ষমতাবোধের মাল না পড়ছে।
তারপর ছোট্ট শরীরটা অল্প ছুঁড়ে গদির উপর রিলিজ করাটা ছিল অনির্বানের সিগনেচার ফিনিশিং।
ছেনুও কম যায় না। অল্প দিনেই বুঝে গেছিল যে অনির্বানের যন্ত্রনা দিতে ভালো লাগে, তাই পরবর্তীতে ব্যথা কম লাগলেও তারস্বরে চেল্লাত "ও বাবাগো, ও মাগো, মরে যাবো গো, ছেড়ে দাও গো,, আর পারছি না" ---এসব বলে লোকটাকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষ ফীল করিয়ে দিলেই ওর তাড়াতাড়ি মাল পড়ে যায়, নুনুর মালও , আবার মাথার পোকার মালও,, হাত খুলে টাকা দেয় বাঞ্চতটা। পঞ্চাশ একশো টাকা এক্সট্রা দেয় প্রতিবার।
কিন্তু কদিন ধরে মালটার দেখা নাই। বোধ হয় রেললাইনের ওপারের কোনো আরো কচি ছেলে পেয়েছে।
ইস্টেশনের স্ট্যান্ডের কাল্টু রিস্কাওয়ালার কাছ থেকে অনির্বানের ঠিকানা পেয়েছে ছেনু, দেরী না করে সকাল সকাল চলে এসেছে, চোখে জল এনে কেঁউ মিউ করে কটা টাকা চাওয়ার রিহার্সালও দিয়েছে রাস্তায় আসতে আসতে, কিন্তু একটা খটকা লাগছে,,, মেয়েছেলেদের মত ইকটু ন্যাকামিও করবে কি না ভাবছে ও, কিন্তু বুঝতে পারছে না কীভাবে করবে? মেয়েলি ছলা কলাটা ও ঠিক পারে না যেমন পারে লাইনপারের সেন্টু দা, ওহো, ও তো আবার নাম বদলে স্যান্ডি হয়ে গেছে এখন, সেন্টু দা বললে খচে যায়, কাপড় তুলে শাপ শাপান্ত করে,,,,
এসব ভাবতে ভাবতেই অপজিটে অনির্বান আর আহানকে দ্যাখে ছেনু ,,,, "হুড়ি ল্যাওড়া, বাবুর সঙ্গে এই কচি মালটা কে? এটাকেই খাচ্ছে বলে হয়তো আমার কাছে আসছে না কুত্তার বাচ্চাটা,,, সালা ফুল কচি জুটিয়েছে দেখছি,, পুরো ফর্সা মাল তো"
নাঃ ,,,, ছেনু ভেবেই নিয়েছে ,,, ডেনড্রাইট কম কিনে এবার ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনতে হবে দুয়েকটা,, কাস্টমার হাতছাড়া হচ্ছে, ব্যবসা বসে যাচ্ছে বাঁড়া ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:০৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×