somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ম ভার্সেস বিজ্ঞান

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্মের নামে শুধু নিজ সম্প্রদায়ের মানুষকে বোকা বানানো যায়, কিন্তু বিজ্ঞানের নামে সারা পৃথিবীর মানুষকে বোকা বানানো যায়।
কারণ, কিছু মানুষ ভগবানে বিশ্বাস করে কিন্তু সবাই 'বিজ্ঞান' বিশ্বাস করে।
কি বলছেন? বিজ্ঞানে বিশ্বাসের কোন স্থান নেই? বিজ্ঞান শুধু যুক্তি বোঝে?
উঁহু! , ওই বস্তাপচা কথা বলে লাভ নেই।
আরে মশাই, সবাই বিজ্ঞানের যুক্তি বোঝে? সবাই বিজ্ঞানের সব থিওরী, সব সূত্র বোঝে? না, বোঝে না।
শুধু বিশ্বাস করে।
বিজ্ঞান এই বলছে, অতএব এটাই সত্যি। আরে বাবা, বিজ্ঞান কে? বিজ্ঞান কি একটা মানুষ? বিজ্ঞান বলছে মানে টা কী? কে নিয়েছে বিজ্ঞানের ঠিকা? বিজ্ঞানীরা? ডাক্তাররা? প্রযুক্তিবিদরা? এরা সবাই? তাহলে ডাক্তারে ডাক্তারে, বিজ্ঞানীতে বিজ্ঞানীতে, এত মতভেদ কেন? এত বাদানুবাদ, তর্কবিতর্ক কেন? সত্য তো একটাই হবে! একই সঙ্গে একই বিষয়ে একাধিক সত্য তো হতে পারে না!
তাহলে?
যুক্তি তো সবাই দিচ্ছে।
কোন যুক্তিটা কোন যুক্তিকে খন্ডন করছে এটা কে বলবে?
কোনটা সঠিক, কোনটা আসল সত্য, সেই সিদ্ধান্ত নেবার অধিকার কার আছে? কে বলবে, এই বিজ্ঞানীই ঠিক বলছে অথবা এই ডাক্তারের মতটাই ঠিক? কার থাকা উচিৎ সেই অধিকার? সাধারণ মানুষের? সরকারের? ধনকুবেরদের? কার?
সাধারণ মানুষ, যাদের জনসাধারণ বলা হয়, তারা নিজের নিজের পছন্দমতো মতবাদ বা মতামতটাকেই বিশ্বাস করছে আর বলছে 'বিজ্ঞান বলছে'।
হ্যাঁ, এবার যেটা বলতে আসবেন সেটাও জানি। বলবেন- বিজ্ঞানে সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা হয়। পরীক্ষালব্ধ ফলের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিজ্ঞানে ব্যক্তিগত মতামতের কোন গুরুত্ব নেই।
জানি বন্ধু, খুব মিষ্টি এই কথাটা। পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ-সিদ্ধান্ত।
বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে খুব ভালো করেই জানি, ওই 'পরীক্ষা' আর 'পর্যবেক্ষণ' এর পরতে পরতে কত ঘাপলা আর শাপলা লুকিয়ে থাকতে পারে।
খুব সহজ দুটো উদাহরণ দিয়ে বিষয় টা বোঝানোর চেষ্টা করছি।
ধরুন একটা ইঁটের ঘনত্ব মাপতে হবে।
তাহলে ইঁটটার ভর আর আয়তন মাপতে হবে। তারপর ভরকে আয়তন দিয়ে ভাগ করলেই ঘনত্ব পাওয়া যাবে।
এখন ভর মাপবেন কি করে? কেন? দাঁড়িপাল্লা দিয়ে! যদি সঠিক না হয় দাঁড়িপাল্লাটা? তাহলে ডিজিটাল ব্যালান্স দিয়ে মাপুন! না, তাতেও নিশ্চিন্তি নেই। ক্যালিব্রেশন ভুল থাকতে পারে। যন্ত্র তো, হাজার হোক!
কি আর করা যাবে, ওই ডিজিটাল দাঁড়িপাল্লার দ্বারা প্রাপ্ত ভরকেই সঠিক ধরে নেওয়া হল। ( আলোচনার সুবিধার্থে ভর আর ওজনের পার্থক্য নিয়ে এখানে আলোচনা করলাম না)
এরপর আসছে আয়তন মাপা। পরিমিতির সাহায্যে আয়তন হিসাব করা যেতে পারে। ইঁট আয়তঘনাকার, সুতরাং
আয়তন = দৈর্ঘ্য× প্রস্থ× উচ্চতা।
কিন্তু, এগুলো যে স্কেল দিয়ে মাপবেন, সেটা যে নির্ভুল মাপ দেয় জানলেন কি করে? তাছাড়া ইঁটটার মাঝখানে তো লেখার জায়গাটা গর্ত মতো আছে! ওই গর্তটার আয়তন তো বাদ দিতে হবে! অনেক ঝামেলা! সহজ কোন উপায় নেই? হ্যাঁ, আছে তো! জলে ডুবিয়ে দিন। অপসারিত জলের আয়তনই হবে ইঁটের আয়তন। কিভাবে মাপা যাবে? একটা গামলায় জল ভরে ইঁটটাকে ডুবিয়ে দিলে উপছে পড়া জলটাকে মাপনী চোঙে ভরলেই পাওয়া যাবে ইঁটের আয়তন।
কিন্তু সাবধান, ডোবানোর সময় হাতের আঙুল যেন একটুও না ডোবে। উপছে পড়া জল যেন একটুও ছিটকে না যায়। মাপনী চোঙের দেওয়া মাপ যেন একদম সঠিক হয়।
তাহলে কি বুঝলেন? সামান্য একটা ইঁটের ঘনত্বও সঠিকভাবে মাপা কত কঠিন! কত রকম ত্রুটি থেকে যাবার সম্ভাবনা!
এবার আসুন আরেকটা সহজ বৈজ্ঞানিক পরিমাপ করি।
ঘরের তাপমাত্রা নির্ণয়।
কি ভাবছেন? এটা আবার একটা পরীক্ষা হল? থার্মোমিটার থাকলেই তো হয়ে যায়! আজ্ঞে না, এখানেও প্রচুর ঘাপলা আছে। থার্মোমিটার টা আগে ভালোভাবে দেখে নিন। পারদের সুত্রটা কোথাও বিচ্ছিন্ন হয়ে নেই তো! ফুটন্ত জলে ডুবিয়ে দেখুন 100°C দেখাচ্ছে তো! বাতাসের চাপ সঠিক 760 mmHg. আছে তো!
তাছাড়া, ঘরের তাপমাত্রা মানে কী? ঘরের খাটের তলায় মেপে দেখলেন 32°C। বেশ, এবার সিলিং ফ্যানের তলায় ধরে দেখুন তো! 29°C। আর ওই চেয়ারের কাছে? 30.5°C।
তাহলে? ঘরের তাপমাত্রা কোনটা?
গড় করে নেবেন? তা নিতেই পারেন। তবে কিরকম গড় করবেন? সাধারণ গড় নেওয়া কি উচিৎ হবে? নাকি ভারযুক্ত গড় ( weighted average) নেবেন?
তাহলে আশা করি বোঝাতে পেরেছি যে সাধারণ ঘরোয়া পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেই যদি এত জটিলতা, এত ত্রুটির সম্ভাবনা থেকে যায়, তাহলে বড় বড় জটিল বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নীরিক্ষায় কত হাজার হাজার ভুলত্রুটির সম্ভাবনা থেকে যায়।
শুধু ত্রুটি বা error নিয়েই অঙ্কের একটা আলাদা সাবজেক্টই আছে।
তাই, এই তিনধাপ পেরিয়ে নেওয়া বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্তও কয়েক বছর পরে সম্পুর্ন ভুল প্রমাণিত হয়।
ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে।
নিউটন -ল্যাপলাস, রাদারফোর্ড -নীলস বোর, কত বলব?
বিজ্ঞানের পুরো ইতিহাসটাই এক অবিরাম কাটাকুটির ইতিহাস!
তবে হ্যাঁ, প্রকৃত বিজ্ঞানী সবসময়ই বলেন-আজ এই মুহূর্তে এটাই সত্য। কাল মিথ্যা হয়ে যেতেই পারে।
কিন্তু হলে কি হবে! ওই যে, সাধারণ মানুষের ( পড়ুন, বিজ্ঞান না পড়া মানুষের) বিজ্ঞানের প্রতি একটা দুর্বলতা আছে! নিজেকে বিজ্ঞানমনস্ক প্রমাণ করতে পারলে একটা আত্মপ্রসাদ লাভ করে! ঠিক, এই দুর্বলতাটাকেই কাজে লাগানো হচ্ছে। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে encash করা হচ্ছে।
আমাদের বিজ্ঞানমনস্ক, সচেতন, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করার যে ইচ্ছা বা চেষ্টা আমরা প্রতিনিয়ত করে চলেছি, সেটাকেই পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করে কিছু ক্ষুরধার বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ নিজের নিজের আখের গুছিয়ে চলেছেন।

(বন্ধুবর : সম্বরণ চ্যাটার্জ্জী)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৩০
২০টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশাল বড় সৃষ্টি তোমার

লিখেছেন প্রামানিক, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

বিশাল বড় সৃস্টি তোমার
মানুষ ক্ষুদ্রতম
চন্দ্র সূর্য দেখার পরে
করছে নমঃ নমঃ।

নানা রকম সৃস্টি দেখে
হচ্ছে চমৎকার
দুইটা চক্ষু উর্দ্ধে তুললে
দৃস্টি যায়না আর।

কোথায় সৃস্টির শেষ সীমানা
কোথায় বা তার শুরু
দূর সীমানায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিছু কিছু মানুষ বলার শুরু করেছে, "আমরা আগেই ভালো ছিলাম"।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:০২



একাধিক কারণে মানুষ ইহা বলার শুরু করেছেন: (১) সাধারণ মানুষ কোমলমতিদের ক্রমেই চিনতে পারছেন, ইহা ভীতি ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করছে; কোমলমতিরা সরকারের গুরুত্বপুর্ণ অনেক পদে আছে ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি - একাল সেকাল

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮



টানা বৃষ্টির মধ্যে মরিচের দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা কেজি । অন্যদিকে ফার্মের মুরগির এক পিছ ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা।শুধু মরিচ নয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলা যদি পরাজিত হয়, "দ্রব্যমুল্য"ই হবে ১ নম্বর কারণ

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৭



দ্রব্যমুল্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সুচকগুলোর ১ টি বড় প্যারামিটার; ইহা দেশের অর্থনীতি ও চলমান ফাইন্যান্সের সাথে সামন্জস্য রেখে চলে; টাস্কফোর্স, মাস্কফোর্স ইহার মুল সমাধান নয়; ইহার মুল সমাধন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই লেখা বলা নয়....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৩১



বকস্বাধীনতা মানেই- যা খুশী তাই বলা/ লেখা নয়। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জনসংহতি নষ্ট করা রাষ্ট্র দ্রোহিতার শামিল। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের দোসর সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণবিপ্লব পরবর্তী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×