
বড় হয়ে জানলাম, প্রতিভার মাপকাঠি হচ্ছে আই কিউ। যার আই কিউ যত বেশি, সে তত প্রতিভাবান। তো আমি ভাবলাম, তাহলে আমারটা মেপেই দেখি। কিন্তু কীভাবে মাপে, তা তো জানি না। ছোটবেলায় পাড়ার হোমিওপ্যাথ কালী ডাক্তারের নিয়মিত রোগী ছিলাম আমি, সেখানে কাউকে আই কিউ মাপাতে আসতে দেখিনি। বড় হয়ে অনেকের জন্য হাসপাতালে রাত জেগেছি, সেখানকার করিডরের সব লিখন আমার মুখস্থ, তাতে কোথাও আই কিউ মাপার কথা লেখা নেই। ইস্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে কোথাও আই কিউ নিয়ে বিন্দুমাত্র কথাবার্তা হয়নি। সায়েন্সে আই মানে আয়োডিন, কিউ মানে ইলেকট্রিক চার্জ, আই কিউ একত্রে কিছুই হয় না। মহা মুশকিল!
ইন্টারনেট বাজারে মানে আমাদের হাতে আসতে জিনিসটা আয়ত্তের মধ্যে চলে এল। তখন কাউকে না বলে চুপি চুপি একদিন মেপে দেখলাম, আমার আই কিউ হচ্ছে বিয়াল্লিশ দশমিক কত-যেন। আইনস্টাইনের চেয়ে মাত্র সওয়া একশো মতন কম! তার মানে সেই কাকুর ভবিষ্যদ্বাণী সঠিকই ছিল। এটা জানতে আমার এত বছর চলে গেল, এই ভেবে আমি নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলাম। কত কিছু করা সম্ভব ছিল, কিছুই করতে পারলাম না, মহাপ্রতিভা জলে চলে গেল। ‘মন রে কিসিকাজ জানো না’ টাইপের মানসিক অবস্থা তৈরি হ’ল আমার।
তারপর বাজারে ফেসবুক এল। চেয়ে দেখি, চারিদিকে অদম্য পোতিভা। ততদিনে বাংলা বাজার থেকে র-ফলা উঠে গেছে। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার ভ-এ র-ফলা লাগে না আর। সবারই গাদা গাদা আই কিউ। আইনস্টাইনের চেয়ে খুব বেশি কম না। ব্যবধান একশো সওয়া শো-র মধ্যেই।
তখন আমার মনে একটা সন্দেহ দানা বাঁধল। সবার আই কিউ তো বেশি হতে পারে না। তাহলে অল্প কিছু লোক মহাপ্রতিভাবান কী করে হবে? সবাই যদি কোনো একটা মেথডে টেস্ট করলে মহাপ্রতিভাবান বলে প্রতিপন্ন হয়, তার মানে সেই মেথডে ভুল আছে। এর অর্থ, যে পদ্ধতিতে আমি আমার আই কিউ মেপেছিলাম, সেটা ঠিক নয়।
ভেবে দেখলাম, ঠিক। কেননা স্ট্রাইক রেট পদ্ধতিতে বিরাট কোহলিকে সবার ওপরে দেখানো শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভব। তার মানে স্ট্রাইক রেট পদ্ধতিটাই ঠিক না। এটা আমার আগে ভেবে দেখা উচিত ছিল।
কেন আগে ভাবিনি? সেটাও ভেবে ভেবে বের করে ফেললাম। এর কারণ আমার নিয়মিত ইস্কুলের ক্লাশ করা। হাঁটতে শেখার পর ইস্কুলে নিয়মিত যারাই যায়, তাদের প্রতিভা ক্রমে ক্রমে শুকিয়ে যায়। আমারই বা শুকাবে না কেন?
বেচারা প্রতিভার জন্য কষ্ট হতে লাগল আমার। সেই কষ্ট আজও যায়নি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




