
দি অসুস্থ: এনারা চরম রোগগ্রস্থ । বিয়েবাড়িতে ঢুকে থেকে জনে জনে ধরে নিজের রোগের ফিরিস্তি দেন । প্রেসক্রিপশন পকেটে নিয়ে খেতে বসেন । ডাক্তার কি কি খেতে ওনাকে বারন করেছেন সেটা দুশো আটষট্টিবার টেবিলের বাকি লোকেদের শোনান । কি খেলে ওনার ইয়ে এঁটে যায় তাও আপনাকে শুনতে হবে । শুনতেই হবে । এনারা কেন খেতে আসেন তা বলা ভগবানেরও অসাধ্য ।
দি স্বল্পাহারী : এনারা শুরু থেকেই টিয়াপাখির মত আওড়াতে থাকেন... "অল্প" । নুন লেবু থেকেই ডায়লগ চালু । ভেজিটেবল চপ দিতে এলেও বলবেন "অল্প" । আরে ভাই দাবী কি ? ভেঙে অর্ধেকটা দেবে ? "অল্প" "অল্প" করেও কিন্তু একবারও "না" বলবেন না । তিনবার মাংস নেবেন , চারবার ভাত । তবু শেষে সাবানজল দিতে এলেও বুলি বন্ধ হবেনা-- "অল্প" ।
দি বুভুক্ষু: জগতে সবক্ষেত্রেই ব্যালেন্স লাগে । বিয়েবাড়িতেও লাগে । তাই স্বল্পাহারীর পাশের সিটেই এমন একজন দরকার যার খাওয়া দেখলে আপনি নিজেই দুপিস মাংস কম নেবেন । আয়োজকের দুরবস্থা ভেবে আপনার আর লুচি নিতে ইচ্ছে করবে না । এনারা কোনো রাখঢাক করেন না । শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গাঁতিয়ে খান ।
দি অপব্যয়ী: এনারা গিফ্টের পয়সার পাঁচগুন উসুল করার উদ্দেশ্যে মাঠে নামেন । খাওয়া মধ্যমানের , কিন্তু অঢেল জিনিস নেন । এবং শেষে যে গন্ধমাদন পাতে জড়ো করে আসন ছাড়েন , তা দিয়ে আরামসে চারটে কুকুরের পেট ভরে যায় ।
দি শীঘ্রপতন: উল্টোপাল্টা ভাববেন না । এনারা বিয়েবাড়িতে ঢুকেই কফি পকোড়া ফুচকা ইত্যাদি স্টার্টার খেয়ে পেট ডাঁই করে ফেলেন । আসল খাবার জায়গায় বসে আর কিছুই খেতে পারেন না ।
দি বিদঘুটে: এনাদের খাওয়া দেখলে আপনার নিজের খাওয়া থেকে ভক্তি উঠে যাবে । এনারা সোজাসাপ্টা কিছু খেতেই পারেননা । মাংসের ঝোলে ডিমের ডেভিল ডুবিয়ে খাবেন ; হাত ধোয়ার লেবু গ্লাসে কচলে তাতে নুন আর রসগোল্লার রস চিপে মিশিয়ে শরবত বানাবেন ।
আমি একজনকে দেখেছিলাম মাছের গ্রেভী আর চাটনি দিয়ে ভাত মেখে সেটা তরকারি হিসাবে ইউজ করে তা দিয়ে রাধাবল্লভী খেতে । এটা দেখে আমি হাসবো না কাঁদবো না টেবিল ছেড়ে ছুটবো বুঝে পাইনি ।
দি মাংসাশী: এনারা টার্গেট সেট করে খেতে বসেন যে মুরগি বা ছাগলের বংশলোপ করিয়েই ছাড়বেন । শুরু থেকে টুক টুক করে পাখির মত খাবেন ; কিন্তু মাংস খাওয়ার সময় দেখে মনে হবে দু সপ্তাহের অভুক্ত হায়নায় হাড় চিবোচ্ছে । এবং মাংস পর্ব শেষ হলে বাকিটুকু আবার সেই পাখির ভোজন !
দি মিষ্টিলাভার: এনারা বাকি সব নর্মালি খান । কিন্তু মিষ্টির ক্ষেত্রে আলাদাই আত্মা ভর করে । চল্লিশটা রসগোল্লা নেবেন , পঁচিশটা সন্দেশ । এবং দই দিয়ে বোঁদে মেখে না খেলে তো এনাদের খাবার হজমই হয় না ।
দি খুঁতখুঁতে: এটা সবচেয়ে ইমপর্টেন্ট । এবং বিয়েবাড়ির বেশিরভাগ পাব্লিক এই শ্রেণীর । এনারা শুরু করবেন স্যালাদের শসায় দানা কম বলে । তারপর একের পর এক অভিযোগ । লুচিতে ময়েন কম , ভাতে চিনি কম , মাংসতে তেতো কম , চমচমে নুন কম , আইসক্রিমে গরম কম ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি । এবং শেষে বলতে বলতে উঠবেন... " ওটা মিনারেল ওয়াটার না ছাই, ডাঁহা পুকুরের জল । খেলেই বোঝা যায় হাইড্রোজেন কম। "
আরেকটা ক্যাটাগোরি আছে, সবজান্তা_গামছাওয়ালা। এরা #খুঁতখঁতের নেক্সট স্টেপ। ভজহরি মান্না চোর, ভোজ আর আগের মত নেই, বিজলিগ্রীল স্রেফ নামেই কাটছে, দাওয়াত তো মাওড়াদের “ক্যাটারার” এসব গুষ্টির তুষ্টি করে শেষে আসল কথাটা পাড়বেন। অশোকদা ক্যাটারার ঠিক করলো, আমায় একবার জানালো না। পদ্মপুকুরের আহার ক্যাটারার ঠিক করে দিতাম ফিফটি পার্সেন্ট কস্টে হয়ে যেতো। লোকজন খেয়ে ধন্যধন্য করতো।
আপাতত এগুলো মনে পড়ল ।
এবার আপনি ভাবছেন আমি কোন দলে ?
আমি হলাম 'দি পর্যবেক্ষক শ্রেণী'র ।
এনারা নিজের খাওয়া ছেড়ে আশেপাশে চোখ চালাতে বেশি পছন্দ করেন । এবং বেরিয়ে পরিচিতদের সাথে আলোচনা করবেন ..... "ওই হলুদ জামা লোকটা কত্ত মাংস নিল দেখেছ " ?
(প্রাণ খুলে হাসলাম। লেখকের নাম জানি না,আপনারা নাম জানতে পারলে share করবেন pl
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



