ঠিক যেমন মোগল সম্রাটদের নাম মনে রাখার সূত্র ছিল ‘বাবার হ’ল আবার জ্বর, সারিল ঔষধে’, তেমনি শাহজাহানের চার ছেলের নাম মনে রাখার উপায় ছিল এইটে – ‘ঔরঙ্গজেব, যদি মুরাদ থাকে তো সুজা হয়ে দারা!’
তো এই চার ছেলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল দারা – দারাশিকো। শাহজাহান নাকি তাকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। কিন্তু মোগলরা তো বিজ্ঞানে খুবই আস্থা রাখত, তাই তাদের সাম্রাজ্য চালানোর উত্তরাধিকারী ঠিক হ’ত পুরোপুরি ডারউইনিয়ান ওয়ে-তে – সার্ভাইভ্যাল অভ দ্য ফিটেস্ট নীতি মেনে। মানে সেয়ানা হলেই ভাইরা পরস্পরের সঙ্গে মারামারি করবে। যে জিতবে সে বাকি ভাইদের ও বাবাকে কোতল করে সিংহাসনে চেপে বসবে। সে ভাবেই ১৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে যখন জানা গেল শাহজাহানের শরীর খারাপ, অমনি মেজোভাই সুজা – সে তখন বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেখভালের দায়িত্বে, তার অফিস ঢাকায় – ভেবে বসল, এই সুযোগ! সেজো ঔরঙ্গজেব দেখাশোনা করছে পুরো দাক্ষিণাত্য, সে কি ছেড়ে দেবে! যাই হোক, বছরখানেক প্রচুর মারামারি হ’ল, গদিতে বসল ঔরঙ্গজেব। সুজা দিল্লির দিকে যাত্রা শুরু করেছিল, মধ্যে দু-তিনটে যুদ্ধে হেরে পশ্চাদপসারণ করে ঢাকায় পালিয়ে এল। যেই শুনল ঔরঙ্গজেব ঢাকায় সেনা পাঠাচ্ছে, অমনি ঢাকা ছেড়ে পালিয়ে গেল আরাকানে। আরাকানের শাসক সুজাকে বলেছিল তার পরিবারকে মক্কায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু অতগুলো উটের পিঠে বোঝাই অত সোনাদানা আর এতগুলো পালকি-বোঝাই অসামান্যা রূপবতী যুবতী দেখে প্রতিজ্ঞা ভুলে গেল। শহিদ হলে বাহাত্তর হুর মেলে, শাস্ত্রে বলেছে, কিন্তু বেঁচে থেকেই যদি অতগুলো পাওয়া যায়, তাহলে শহিদ হওয়ার দরকার কী – এই অশাস্ত্রীয় নীতিতে সে সুজাকে আটকে রাখল। সুজার লোকবল কম, সে ঝামেলা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হ’ল। প্রাণ, সোনাদানা এবং নিজস্ব নারীবাহিনীর সম্ভ্রম সবই হারাল সে।
মারাঠা ধূর্ত গেরিলা শিবাজির কাছে নাকানি-চুবানি খেয়েছিল ঔরঙ্গজেবের মামা তালেবর যোদ্ধা শায়েস্তা খাঁ। বিরক্ত ঔরঙ্গজেব তাকে দাক্ষিণাত্য থেকে তুলে পাঠিয়ে দিল ঢাকায়। সুজাকে ঔরঙ্গজেব হত্যা করতে চাইলেও সুজার হারেমের বেগমরা তো আফটার অল মোগল-ঘরের বউ, তাদের সম্ভ্রম নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে এক মগ শয়তান, তা কী করে সহ্য করা যায়? শায়েস্তা খাঁর ওপর দায়িত্ব পড়ল মগ ব্যাটাকে শায়েস্তা করার। সে ব্যাটা তো ফেল মারলো !
চট্টগ্রাম কক্সবাজারে তখন মোগল-আরাকান ছাড়াও আর এক পার্টির আনাগোনা। পোর্তুগিজ। ভাস্কো ডা গামার লাইন ধরে তারা কালিকট ছেড়ে বহুদিন আগেই উত্তরে ঘাঁটি গেড়েছে গোয়ায়। আর কন্যাকুমারী পেরিয়ে চলে এসেছে বঙ্গোপসাগরে। প্রথম প্রথম ব্যবসা-বাণিজ্য তাদের উদ্দেশ্য থাকলেও তারা হিসেব করে দেখেছে জিনিসপত্র কেনাবেচা থেকে অন্যের জাহাজ লুট করে মাল বাগিয়ে নিলে লাভ অনেক বেশি। ফলে তাদের নতুন নাম হয়েছে – জলদস্যু! আরাকানের শাসক তাদের মিত্র। মগেরাও শিখেছে এই বৃত্তি। ফলে গোটা অঞ্চলটাই তখন মগের মুলুক।
আর এখন ? গেনজী ও জামাতীদের পাল্লায় পরে গোটা বাংলাদেশ টাই মগের মুলুক !

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




