বাংলাদেশে ইনডেমনিটি প্রথম দেয়া হয় রক্ষীবাহিনীকে। ১৯৭৪ সালে, বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়। ৭৪ সালে আনা ওই সংশোধনী কার্যকর দেখানো হয় ৭২ সালের ১ ফেব্রুয়ারী থেকে।
রক্ষীবাহিনী সংশোধনী আইনের ১৬(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে বলা হয়, রক্ষীবাহিনীর সদস্যরা তাদের যে কোনো কাজ সরল বিশ্বাসে করেছেন বলে গণ্য করা হবে এবং এ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কোন কামলা দায়ের, অভিযোগ পেশ কিংবা আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাবে না।
রক্ষীবাহিনীর হাতে নিহত হয় ৩০ হাজারের বেশী আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ।
বাঙালি কখনও কাপুরুষ ছিল না। ১৫ই আগস্টের হত্যাকান্ড কাপুরুষোচিত নৃশংসতম হলেও রক্ষীবাহিনীর নির্মম ইতিহাসই বাঙালিকে সেদিন নির্বিকার করে রেখেছিল। সেই বাঙ্গালি, যারা বঙ্গবন্ধুর এক ডাকেই জীবন দিয়েছিল একসময়।
রক্ষীবাহিনীর নির্মম ইতিহাসের কারণেই পচাত্তরের ২৪ আগস্ট মওলানা হামিদ খান ভাসানি বলেছিলেন, "মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোক মুজিব সরকারের সহায়তায় বিদেশী শোষকদের সঙ্গে আঁতাত করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছে। তিনি দুর্নীতিবাজদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে তাদের কঠোর সাজা দেওয়ার দাবি জানান।" (দৈনিক বাংলা)
মওলানা ভাসানি কখনই কাপুরুষ ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর শত্রুও ছিলেন না।
যারা ১৫ই আগস্টের ওপারের ইতিহাসের সামনে কালো চাদর টেনে, প্রায় ৩২ হাজার মানুষের খুনের বিচার এড়িয়ে শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনের বিচার করেই আইনের শাসন নিশ্চিত করতে চাইছেন, তারা নিজেদেরই সর্বনাশ করছেন।
ভারত প্রধানমন্ত্রীকে সাবধান করেছে। নিরাপত্তা বাহিনীসহ সবাই সচকিত হয়ে উঠছেন ১৫ই আগস্টের খুনীচক্র ও তাদের বংশধর, মতাদর্শের লোকদের ব্যাপারে। কড়া চোখ রাখা হচ্ছে এদের উপর।
কিন্তু কারাগার ও প্রবাসে অর্ধমৃত জীবন নিয়ে যেসব খুনীরা বেঁচে আছেন, প্রধানমন্ত্রী বা তার পরিবারের জন্য কোন খুনী শাবক তারা রেখে যেতে চাইবেন, এমনটা আমার বিশ্বাস হয় না। খন্দকার মোশতাক আওয়ামী লীগেরই শীর্ষতম নেতাদের একজন ছিলেন। এখনও কোন অজানা মুহূর্তে হায়েনা হয়ে ওঠার মতো নেতা দলের মধ্যেই হয়তো আছে। সময়ই তা বলে দেবে।
ইনডেমনিটি কখনই ভালো নয়। বঙ্গবন্ধুর ইনডেমনিটি নয়, খন্দকার মোশতাকের ইনডেমনিটিও নয়। ১৯ নভেম্বর দিয়ে হয়তো একটি ইনডেমনিটির পাপমোচন হয়েছে, কিন্তু আরেকটি ইনডেমনিটিও নিজ প্রয়োজনেই ইতিহাসের মোড়ে মোড়ে নিশ্চিত আরেকটি ১৯ নভেম্বর খুঁজে ফিরবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




