১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের আগস্ট মাসে তৎকালীন "পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)" একটি প্রচারপত্র বিলি করে। আজ সেই নথিটিই হুবহু তুলে দিলাম:
পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) কর্তৃক প্রচারিত ইশতেহার
আগস্ট, ১৯৭১
সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ষড়যন্ত্রকে চূর্ণ করুন কৃষকের বিপ্লবী যুদ্ধকে জোরদার করুন
কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত ভাইসব, বিগত চার মাস যাবৎ ইয়াহিয়া সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে আমাদের কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত হাজার হাজার পরিবার হয়েছে ধ্বংস, গৃহহারা ও দেশত্যাগী; মা-বোনেরা হয়েছেন ধর্ষিতা। নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে বাঙালী-অবাঙালী নিরীহ দরিদ্র কৃষক শ্রমিককে। আমরা ভুগছি চরম খাদ্য সংকটে, চরম আর্থিক সংকটে।
আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতের মাটিতে বসে “বাংলাদেশের” তথাকথিত স্বাধীনতার যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং আমাদেরকে তাতে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে তাঁদের নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধ কি সত্যই স্বাধীনতার যুদ্ধ? এ যুদ্ধে কি আমাদের মুক্তি আসবে? আমাদের পার্টি মনে করে, এ যুদ্ধ স্বাধীনতার যুদ্ধ নয়; এ পথে আমাদের মুক্তি আসবে না।
আমরা অনেক আগে থেকেই বলে এসেছি যে, বিগত ২৪ বছর ধরে স্বাধীনতার নামে নতুন কৌশলে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের হুকুম বরদার আমাদের দেশের দালাল পুঁজিপতি ও সামন্তবাদী জমিদার-জোতদার শ্রেণীর মারফত এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত মেহনতী জনতার উপর শোষণ পীড়ন চালিয়ে আসছে। শ্রেণীগতভাবে আওয়ামী লীগও সেই দালাল শোষক শ্রেণীরই রাজনৈতিক দল। তাই তার ৬ দফায় এবং তার কথিত স্বাধীন বাংলা সরকারের কর্মসূচীতে কৃষক-শ্রমিকের শোষণ মুক্তির কোন কথা নাই। তাঁরা সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর মুক্তির জন্য যুদ্ধ করছেন বলে গলা ফাটাচ্ছেন। কিন্তু, তাঁদের কর্মসূচীতে কৃষক-শ্রমিক মেহনতী জনগণের সাম্রাজ্যবাদী শোষণ, জোতদার মহাজনদের শোষণ ও পুঁজিপতিদের শোষণ থেকে মুক্তির কোন কথা নাই। আছে শুধু কৃষক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত মেহনতী জনগণকে শোষণ ও শাসনের ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রত্যাশী বাঙালী পুঁজিপতি জোতদার মহাজন শ্রেণী এবং ক্ষমতাসীন বড় পুঁজিপতি জমিদার শ্রেণী কে কত ভাগ নেবে তার কথা; পূর্ব বাংলার বাজার কার দখলে থাকবে, সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের তথাকথিত সাহায্যের কে কতটুকু অংশ পাবে তার কথা। জনগণকে লুটের ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েই ক্ষমতা প্রত্যাশী বাঙালী পুঁজিপতি-জোতদার-মহাজন শ্রেণী এবং ক্ষমতাসীন বড় পুঁজিপতি-জমিদার শ্রেণীর মধ্যে চলছে লড়াই। এই বিরোধের সুযোগ নিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, আর তাদের পা-চাটা ভারতের সম্প্রসারণবাদীরা তাদের গণ-চীন বিরোধী বিশ্বযুদ্ধ পরিকল্পনার স্বার্থে বিভিন্ন কৌশলে হস্তক্ষেপ করে। এ সবের ফলেই সৃষ্টি হয়েছে বর্তমান যুদ্ধ।
ইয়াহিয়া পাকিস্তানের স্বাধীনতা রক্ষার নামে এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্তের উপর মার্কিন ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের মার্কিনের পদলেহী ক্ষমতাসীন বড় পুঁজিপতি ও জমিদার শ্রেণীর শাসন ও শোষণ বজায় রাখার চেষ্টা করছে। অপরদিকে ক্ষমতাপ্রত্যাশী বাঙালী পুঁজিপতি ও জোতদার মহাজন শ্রেণীর প্রতিনিধি আওয়ামী লীগ নেতারাও বাঙালী জাতির তথাকথিত স্বাধীনতার নামে এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী জনতার উপর সাম্রাজ্যবাদী দস্যুদের এবং তাদের বিশ্বস্ত অনুচর বাঙালী পুঁজিপতি ও জোতদার-মহাজনদের শাসন ও শোষণ ব্যবস্থাকে কায়েম করার চেষ্টা করছে। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা উভয়েই মার্কিন, সোভিয়েত ও বৃটিশের সাহায্য চাইছে। তদুপরি, আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতের সম্প্রসারণবাদীদেরও সাহায্য নিচ্ছে তাদেরই মুঠার মধ্য থেকে। পূর্ব বাংলার জনগণের শত্রু সাম্রাজ্যবাদী দস্যু ও জোতদার-মহাজনদের স্বার্থকে বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ করার ইচ্ছা এদের কারো নাই। এরা উভয়ে চায় পূর্ব বাংলার জনগণকে সাম্রাজ্যবাদী দস্যু, জোতদার-মহাজন ও দালাল ধনিকের অধীন করে রাখতে। এরা উভয়েই পূর্ব বাংলার জনগণের মুক্তির বিরোধী।
প্রসঙ্গত বাঙালী পুঁজিপতি ও জোতদার-মহাজন শ্রেণীর পক্ষ থেকে একটা প্রশ্ন উত্থাপন করা হচ্ছে, কেন গণ চীন তাদের তথাকথিত স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করছে না? প্রশ্নটাকে ধীরস্থিরভাবে বিচার করা প্রয়োজন।
৭০ কোটি মানুষের দেশ গণচীনে রাজত্ব কায়েম করছেন শ্রমিক-কৃষকেরা। গণ-চীন আমাদের দেশসহ পৃথিবীর সকর দেশের শোষিত শ্রমিক-কৃষক মেহনতী জনগণের নেতা; তাঁদের সব চাইতে শক্তিশালী দুর্গ। সাম্রাজ্যবাদী দস্যু, জোতদার-মহাজন ও ধনিকদের কবল থেকে মুক্তিলাভের জন্য পৃথিবীর যেখানেই জনগণ সংগ্রাম করছেন সেখানে জনগণকে সমর্থন ও সাহায্যের ক্ষেত্রে গণ-চীন পুরোভাগে। ১৯৬৫ সনে মার্কিন ও সোভিয়েতের হুকুমে ভারত সরকার যখন পাকিস্তানের উপর আক্রমণ করে তখন গণ-চীনই আমাদের দেশের জনগণের পাশে দাঁড়ায়। এবারও আমাদের দেশের জনগণের ঘোর বিপদের সময় গণ-চীনই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
পূর্ব বাংলার জনগণের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখেই আওয়ামী লীগের তথাকথিত স্বাধীনতা সংগ্রামকে গণ-চীন সমর্থন করছে না। কারণ, আওয়ামী লীগের লড়াই জনগণের মুক্তির লড়াই নয়; বরং জনগণের মুক্তি সংগ্রামকে বানচাল করার লড়াই ও জনগণকে বিদেশী ও দেশী শোষকদের অধীনতা পাশে বেঁধে রাখার লড়াই। উপরন্তু, আওয়ামী লীগ নেতাদের লড়াই গন-চীনের বিরুদ্ধে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তথা সারা বিশ্বের শ্রমিক-কৃষক মেহনতী জনগণের মুক্তি সংগ্রামের বিরুদ্ধে।
মার্কিন দস্যুরা ও সোভিয়েত সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদীরা গণ-চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী মুক্তি সংগ্রামকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে পূর্ব বাংলায় তাদের যুদ্ধ ঘাঁটি করতে চায় এবং ভারত ও পাকিস্তানকে একত্র করে তাদের এই যুদ্ধ পরিকল্পনাকে কার্যকরী করতে চায়। পূর্ব বাংলার বাজারের উপর রয়েছে ভারতের পুঁজিপতি শ্রেণীরও লোভ। কাজেই, তারাও মার্কিন ও সোভিয়েতের সাথে একমত। কিন্তু, ভারত ও পাকিস্তানের বৃহৎ পুঁজিপতি শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে স্বার্থের দ্বন্দ্ব। ভারতের সাথে যৌথ প্রচেষ্টায় সামিল হতে গেলে পূর্ব বাংলার বাজার ভারতের পুঁজিপতিদের দখলে চলে যেতে পারে বলে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন বৃহৎ পুঁজিপতিরা ভয় করে। তাই, নিজেদের অস্তিত্ব ও শ্রেণী স্বার্থ রক্ষার জন্য তারা মার্কিন ও সোভিয়েত প্রস্তাব গ্রহণে নারাজ। এই অবস্থায় মার্কিন ও সোভিয়েত সরকার পাক সরকারের উপর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে গণ-চীন বিরোধী যুদ্ধ পরিকল্পনায় সামিল হতে বাধ্য করার প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ নেতারাও মার্কিন, সোভিয়েত ও ভারত সরকারের গণ-চীন বিরোধী ষড়যন্ত্রে পা দিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকার ভারতের পুঁজিপতিদের হাত থেকে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার গরজে বাধ্য হয়ে চীনের সাহায্যপ্রার্থী হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পূর্ব বাংলা তথা পাকিস্তানে সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করা, পূর্ব বাংলা তথা পাকিস্তানের জনগণকে যুদ্ধের ধ্বংসলীলা থেকে রক্ষা করা এবং সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রে ভারত সরকার পূর্ববাংলা তথা পাকিস্তানের উপর কোন হামলা করলে তা থেকে জনগণকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে গণ-চীন পাকিস্তানের জনগণ ও সরকারকে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গণ-চীনের এই ধমকের ফলে মার্কিন, সোভিয়েত ও ভারত সরকার তাদের পরিকল্পনা মাফিক যুদ্ধ বাধাতে ভয় পাচ্ছে; গণ-চীনের বিরুদ্ধে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুক্তিকামী জনগণের বিরুদ্ধে পূর্ববাংলায় সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ ঘাঁটি বানানোর পরিকল্পনা ব্যর্থ হচ্ছে। কাজেই, গণ-চীনের ভূমিকা পরোক্ষভাবে পূর্ব বাংলার জনগণের সত্যিকারের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে সহায়ক হচ্ছে। কেননা, যদি মার্কিন, সোভিয়েত ও ভারতের সম্প্রসারণবাদীরা পূর্ব বাংলার চলতি ঘটনাবলীকে কেন্দ্র করে পূর্ব বাংলার উপর আক্রমণ করে এবং তার ফলে পাক-ভারত যুদ্ধ তথা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধাতে সক্ষম হয় তবে পূর্ব বাংলা আরও বড় রকমের ধ্বংসলীলার কবলে পড়বে। অন্যদিকে, তা ব্যর্থ হলে আমরা আমাদের মুক্তিসংগ্রামকে জোরদার করার অধিকতর সুযোগ পাব; অধিকতর সুযোগ পাব দীর্ঘস্থায়ী বিপ্লবী যুদ্ধের মাধ্যমে মার্কিন তবেদার শাসক গোষ্ঠীকে পরাজিত করে এদেশকে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশী দালালদের হাত থেকে মুক্ত করতে। তাই, গণ-চীনের নীতি পূর্ব বাংলার জনগনের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে সাহায্য করছে।
সুতরাং, ভাইসব, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল ইয়াহিয়ার সামরিক আক্রমণের বিরুদ্ধে মার্কিন, সোভিয়েত ও ভারত সরকারের সমর্থনে আওয়ামী লীগ যে তথাকথিত স্বাধীনতার লড়াই চালাচ্ছে তা এদেশের কৃষক, শ্রমিক মধ্যবিত্ত জনতার মুক্তিযুদ্ধ নয়।
এ যুদ্ধে যদি ইয়াহিয়া খাঁরা জয়ী হয় তা হলে আমাদের উপর বিগত ২৪ বছর ধরে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় দালালদের যে শোষন-নিপীড়ন চলছে তা বহাল থাকবে। আর যদি আওয়ামী লীগ জয়ী হয় তাহলেও মার্কিন, বৃটিশ ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদীদের, সোভিয়েত সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদের, ভারতের সম্প্রসারণবাদীদের এবং এসব বিদেশী ডাকাতদের দালাল বাঙ্গালী পুঁজিপতি ও জোতদার-মহাজনদের শাসন ও শোষণ কায়েম থাকবে; তদুপরি আমাদের দেশ সাম্রাজ্যবাদীদের গণ-চীনবিরোধী যুদ্ধ ঘাঁটিতে পরিণত হবে। তাতে আমাদের মুক্তি আসবে না। কাজেই, ইয়াহিয়া খান ও আওয়ামী লীগের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে তার কোন পক্ষের সমর্থনেই আমরা যেতে পারি না।
স্বভাবতই প্রশ্ন হচ্ছে : এ অবস্থায় আমাদের করণীয় কি? আমাদের করণীয় হচ্ছে : এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত মেহনতী জনতার সত্যিকারের মুক্তির পথ বেছে নেওয়া। সেই মুক্তি সংগ্রামের পথ হচ্ছে কৃষি বিপ্লবের পথ। পূর্ব বাংলার শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী পার্টি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সে সংগ্রাম চলছে। পার্টির নেতৃত্বে খুলনা, নোয়াখালী, যশোর, কুষ্টিয়া, ঢাকা, ফরিদপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, পাবনা, প্রভৃতি জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের বিপ্লবী যুদ্ধে চলছে, কৃষক-শ্রমিকের গণফৌজ গড়ে উঠছে। ইঙ্গ-মার্কিন বেতারে তাই আজ তার বিরুদ্ধে প্রচারণা ও চীৎকার শুরু হয়েছে। সাথে সাথে তারা ইয়াহিয়া সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা আপোষ করার মাধ্যমে কৃষকের এই বিপ্লবী সংগ্রামকে বাধা দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ইয়াহিয়া খাঁরাও আওয়ামী লীগের একাংশের সাথে বোঝাপড়ায় গররাজী নয় এমন ভাব প্রকাশ করছে। তাই আসুন, আমরা সাম্রাজ্যবাদী ও তার দেশীয় দালাল ইয়াহিয়া সরকার এবং তথাকথিত স্বাধীন বাংলার ধ্বজাধারীদের গণবিরোধী প্রতিবিপ্লবী যুদ্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। মার্কিন, সোভিয়েত ও তাদের পা-চাটা ভারত সরকার এবং এদেরই সাহায্যে পুষ্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের ধোকায় পড়ে যে-সমস্ত সরল প্রাণ দেশপ্রেমিক কৃষক, শ্রমিক ও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান সন্ততিরা ভুল পথে গিয়েছেন তাঁদের প্রতি আমরা আহ্বান জানাই : আপনারা সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় দালালদের ষড়যন্ত্র থেকে সরে আসুন। চলুন আমরা গ্রামে গ্রামে কৃষকের গন-মুক্তিফৌজ গঠন করি; গণ-মুক্তি-ফৌজ ও কৃষকের বিপ্লবী গেরিলা যুদ্ধের জোরে সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় দালালদের মূল সামাজিক অর্থনৈতিক ভিত্তি জুলুমবাজ জোতদার-মহাজনদের উচ্ছেদ করে গ্রামাঞ্চলে কৃষক-শ্রমিক রাজ্যের প্রাথমিক ভিত্তি রচনা করি; বিপ্লবী কমিটি গঠন করি; ঘৃণিত জোতদার-মহাজনদের রক্ষা করার জন্য সামরিক বাহিনী ও পুলিস এলে গণফৌজ দিয়ে গেরিলা কায়দায় তাদের মোকাবিলা করি; এবং কৃষক-শ্রমিকের বিপ্লবী ঘাঁটি এলাকা, মুক্ত লাল এলাকা স্থাপন ও টিকিয়ে রাখার জন্য বীর বিক্রমে এগিয়ে যাই।
চেয়ারম্যান মাও বলেছেন : “গণফৌজ না থাকলে জনগণের কিছুই থাকবে না।” তিনি আরও বলেছেন, জনগণ যদি নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য অস্ত্র হাতে দাঁড়ায়, দুনিয়ার কোন শক্তিই তাকে পরাজিত করতে পারবে না। একথা যে কত সত্য তা আমরা দেখছি ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও অন্যান্য দেশে।
ভাইসব, আমরা দেশের শতকরা ৯৯ জন। আমরা যদি সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় দালালদের ধোকাবাজিতে বিপথগামী না হই, নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য ঐক্যবদ্ধ হই, নিজেদের ফৌজ গড়ে তুলি, নিজেদের মুক্তি অর্জনের জন্য অস্ত্র হাতে সংগ্রামে নামি, জীবনদানে নির্ভয় হই, তবে আমাদের জয় হবেই হবে।
সংগ্রামী কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত ভাইরা, নিজেদের শক্তিতে আস্থা রাখুন। সাম্রাজ্যবাদীদের সাহায্য ও সমর্থনে তথাকথিত স্বাধীন বাংলার জন্য লড়াই লড়াইয়ের পথ নয়; শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবী পার্টি, পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) নেতৃত্বে কৃষকের বিপ্লবী যুদ্ধের মারফত কৃষক শ্রমিক রাজ কায়েমের পথই এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্তের মুক্তি অর্জনের একমাত্র সঠিক ও নির্ভুল পথ। কৃষি বিপ্লবের পতাকা হাতে নিয়ে বিপ্লবী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। বিজয় অর্জন করুন। নিজেদের মুক্তি অর্জন করুন।
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতের সম্প্রসারণবাদ ধ্বংস হোক!! সাম্রাজ্যবাদের দালাল ধনিক ও জোতদার মহাজনদের রাজত্ব ধ্বংস হউক!! গণ-চীনের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলায় যুদ্ধ ঘাঁটি করতে দেব না!! তথাকথিত মুক্তি বাহিনী নয়, গণ-ফৌজ গড়ে তুলুন!! ইয়াহিয়ার সামরিক সরকার নয়; তথাকথিত স্বাধীন বাংলা সরকার নয়— কৃষক-শ্রমিকের গণরাজ কায়েম করুন!!— পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) ১-৮-৭১। নিজে পড়ুন এবং অন্য দশজনকে পড়তে দিন; সম্ভব হলে নিজেরা ছাপিয়ে বিলি করুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




