somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনজন পরিত্যক্ত পুরুষ

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি, একটা পরিত্যক্ত বাড়ী
আর সাথে একটা বট গাছ,
আমরা তিনজনে একসাথেই থাকি
অথচ আমরা তিনজেনই একা,
সম্পূর্ন একা।

এটাকে বাড়ী বললে ভুল হবে
দেড় রুমের ভাঙা মাটির ঘর,
গ্রামের একেবারে শেষ মাথায়।
আশে পাশে কোন কিছুই নেই।
অনেকে ভূতের বাড়ী বলে।
আমাকেই হয়তো ভূত মনে করে অনেকে।
শুধু একটা বটগাছ বোকার মতো দাড়িয়ে আছে বাড়ীটির উঠোন জুড়ে।

আমাদের মধ্যে এক অদ্ভুত মিল আছে,
আমরা তিনজনই পরিত্যক্ত,
তিনজনেরই বয়স হয়েছে,
অথচ তিনজনই অপেক্ষায় থাকি একজনেরই,
একজন নারীর
-যে একসময় কিশোরী ছিলো,
এই বাড়ীর বউ ।

নারীটি নিজ হাতে মায়া মমতায় লাগিয়ে ছিলো বটগাছটি,
অনেকে হেসেছিলো,
বলেছিলো-
“মানুষ বুঝি বটগাছ লাগায় উঠোনে?
অমঙ্গল হবে তোর”
মাটির ঘরটি ও ছিলো তার হাতের।
আর আমাকে,
আমাকে পুরুষ বানিয়েছে তার শরীর।

একদিন,
দুই কুড়ি বছর আগে
“আসি”- বলে
সে চলে গেলো,
গেলোতো তো গেলো
আর কখনোই আসলো না।

আমাকে কতোজন বলে,
“তোমার বউ আর এই জীবনেও আসবেনা,
ও তো শহরে নতুন সংসার পেতেছে,
সেই সংসারে এখন নাতীপুতি ঘুরে বেড়ায়,
ভূতের মতো এখনো কার জন্য বসে থাকো এই ভাঙা বাড়ীতে?”

প্রতিদিন অন্ধকার হলেই আমি বটগাছের নিচে বসে পড়ি,
মনে হয় আজ বোধহয় সে আসবে,
‘আমাকেতো বলে গেছে,
-“আসি”
যদি আজ আসে,
দুই কুড়ি বছর
যদি এসে আমাকে না পায়,
আহারে,
এই ভেবে তার মন খারাপ হবে.
কেউ তার অপেক্ষায় নেই।

যতো রাত বাড়তে থাকে
আমি অস্হির হয়ে আকাশের তারার দিকে তাকিয়ে
রাতর সব তারা গুনে শেষ করে ফেলি।
একসময়ে যখন মনে হয় আজও আসবেনা,
তখন আমি কাঁদতে থাকি,
বুকের ভিতর চিৎকারে করে কাঁদি,
নিঃশব্দে, একেবারে নিঃশব্দে,
বাতাসও যেনো টের না পায়,
এমনকি ঘর আর বটগাছটিও।

আমি কিন্তু টের পাই
বাড়ীটি আর বটগাছটিও প্রতিদিনই অপেক্ষা করে তার জন্য আমারই মতো।
তারাও একসময় বুঝে যায় আজ আর সে আসবেনা,
তারাও আমার মতো কাদঁতে থাকে বুকের ভিতর,
একেবারে নিঃশব্দে,
আমারই মতো তারাও চেষ্টা করে কেউ যেনো টের না পায়।

আমার ইদানিং মনে হয়
গাছটি আর বাড়ীটিও
আমার মতই পুরুষ গাছ আর পুরুষ বাড়ী।
তা নাহলে এতো নীরবে,
লুকিয়ে বুকের ভিতর কি ভাবে কাঁদে?
পুরুষ হলে বোধহয় শব্দ করে কাঁদতে নেই,
চোখের জল বুকে ফেলতে হয়।

রাতের আকাশের তাঁরারা শুধু দেখে
তিনজন পরিত্যক্ত পুরুষ কাদঁছে,
নিরবে চিৎকার করে নিজেদেরই বুকের ভিতর,
কেউ কাউকে টের পেতে দেয়না।
——————————————
রশিদ হারুন
০১/১০/২০১৯
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:২২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×