somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

জিএম হারুন -অর -রশিদ
আমার কারো কাছে নেই কোন অভিমানের দেনাপাওনা, নেই কোন কষ্টের হিসাব, তবুও লুকিয়ে থাকা হাহাকার পরম যতনে আগলে রাখি-- প্রথম পাওয়া চিঠির মত, আমি এই রকমই বন্ধু ।

নীলা’পা

১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ বছর পর বিদেশ থেকে এসে
আমরা যেখানে ভাড়া বাড়িতে থাকতাম
সেই মহল্লায় ফিরলাম পুরনো বন্ধুদের খোঁজে।
সেই বাড়িরই লাগোয়া রাস্তায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারতে মারতে
তোমাকে দেখলাম নীলা’পা।

তোমাদের দোতলা বাড়ির আস্তর খসে পড়া দেয়ালের রং ঝলসে যাওয়া গ্রীল দেওয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে তুমি রাস্তার ফেরিওয়ালার সাথে দরদাম করছ।
পাচঁ টাকা কমাতে বারবার অনুরোধ করছ,
কিন্তু নাছোড় ফেরিওয়ালা কমাবেই না।

সত্যি কী তোমাকে দেখলাম!
একটা সময় টানটান ফর্সা শরীর ছিল তোমার,
মহল্লার সবচেয়ে বেশি লম্বা মেয়েটাও ছিলে তুমি;
অথচ এখন অনেকটা কুঁজো হয়ে গেছ মনে হলো বয়সের তুলনায়,
শরীরও অনেক ভারী হয়ে গেছে তোমার ।
মুখে মেসতার কালো দাগ আর কুচকানো কপাল দেখে
তোমাকে আর তোমাদের আস্তর খসে পড়া,
রঙ ঝলসে যাওয়া বাড়িটা একই রকম দেখতে লাগছে,
বাড়িটার মতো তোমাকেও যত্নহীন মনে হলো অনেকদিন ধরে।
আমাকে দেখে তুমি কি সত্যি চিনতে পারনি,
নাকি চিনেও না চেনার ভান করলে?

মহল্লার বন্ধুদের কাছে শুনলাম, এখনো বিয়েই করোনি তুমি,
একা একা থাক দোতালায়,
তোমার বাবা-মা মারা গেছেন কয় বছর হলো?
বিয়ে করলে না কেনো!

একসময় তোমার এমন দিন ছিল,
আশেপাশে সব পাড়ার ছেলেরা কতো যে তোমার জন্য পাগলামী করতো,
অথচ তুমি পাত্তাই দিতে না কখনো তাদের।
শুনতাম ‌অনেক ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাবও আসতো,
তুমি, কোন একটা খুঁত বের করে সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিতে ‌অনায়াসে।

নীলা’পা,
কী চেয়েছিলে তুমি?
কোনো এক রাজপুত্র তোমাকে নিতে আসবে?
কী পেলে সারাজীবন একা থেকে,
অথচ তোমার প্রত্যাখ্যানে মহল্লার বাদল ভাই গলায় ফাঁস দিলো!
আহা সে কী ভয়ংকর দেখতে লেগেছিলো সেদিনের ঝুলন্ত বাদল ভাইকে,
জিহ্বা বের হয়ে লালা ঝরছিলো।
সেই দৃশ্য দেখে আমি অনেকদিন রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি।

নীলা’পা,
তোমাদের নীচতলায় ভাড়া থাকতাম বলে,
কাউকে পাত্তা না দিলেও
আমাকে দিয়ে অনেক ফুটফরমাস খাটাতে,
দোকান থেকে এটা সেটা কিনতে বারবার পাঠাতে।

কতো বড় ছিলে তুমি আমার থেকে?
চার পাঁচ বছরের বেশি হবে না।
কিসের মোহে যেন
তোমার কাজ করে দেবার জন্য
সুযোগ পেলেই তোমার আশপাশে ঘুরঘুর করতাম।

একদিন না বুঝেই জানতে চেয়েছিলাম,
তোমার নাকি বিয়ে?
আমার আজও মনে আছে তোমার সেই উত্তর,
কী রকম ভয়ংকর উত্তর ছিল সেটা আমার জন্য,
তুমি বুঝতেই পারনি!
“ তুই আরেকটু বড়ো হ,
তোকেই একদিন বিয়ে করবো।"

নীলা’পা,
আমি ভয় পেয়েছিলাম সেই কথায়,
সেই বারও আমি অঘুমে ছিলাম অনেকদিন।
তারপর থেকে তোমাকে দেখলেই আমার অস্থিরতা বেড়ে যেত।
কমিয়ে দিয়েছিলাম তোমাদের দোতলায় ওঠা,
অথচ সারাদিন তোমার কথাই ভাবতাম।
বন্ধুদের কাউকেই বলতে পারিনি এই গোপন অসুখের খবর।

তারপর যখন কলেজ পাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দিনরাত পড়ছি,
তুমি একদিন ঠিক সন্ধ্যে বেলা আমাকে ডেকে নিলে ছাদে,
সিঁড়ির ঘরে,
আচমকা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললে,
“ চল পালিয়ে যাই, বিয়ে করবো তোকে।"
আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছিলো তখন,
ভয়ে, নাকি জীবনে প্রথম কোন নারীর স্পর্শে
আজও বুঝতে পারিনি।
আমি শুধু বলেছিলাম,
“নীলা’পা,
আমার অনেক পড়া বাকি
বাবা আমাকে এখনই খুঁজবে।"

কোনোমতে দৌড়ে পালিয়ে এসেছিলাম সেদিন।
আর দেখা হয়নি তোমার সাথে কোনোদিন,
কিছুদিন পরই বাসা বদল করে অন্য শহরে চলে গিয়েছিলাম।
বিদায় নেবার সময় তোমাকে বলে যাবার জন্য কতো চেষ্টাই না করেছিলাম,
তবুও দেখা দিলে না একবারের জন্য।
কষ্ট পেয়েছিলে
না অপমান বোধ করেছিলে
আমি আজও বুঝিনি?
নাকি শুধু আমাকে নিয়ে একটু দুষ্টুমি করেছিলে?
“নীলা’পা বলে একবার ডাকতে গিয়েও ডাকলাম না,
যদি আসলেই না চিনে থাকো।

“নীলা’পা
সেই দিন থেকে আমার নিজের উপর প্রচণ্ড রাগ আর অভিমান হতো,
আমার বুকের আস্তরও প্রতিনিয়ত খসে পড়ে তোমার কথা ভাবতেই;
কেন আমি তোমার চেয়ে বয়সে বড়ো হলাম না।
সেদিন সেই সিঁড়ির ঘরে সাহস করে বললেই পারতাম,
“ঠিক আছে চল পালিয়ে যাই,
তোমাকেই বিয়ে করবো”।

দেশের কতো কিছু বদলে গেলো সেদিন থেকে,
রাষ্ট্র ক্ষমতা বদল হলো কয়েকবার,
মুদ্রাস্ফীতি ‌অনেক বেড়েছে,
ঢাকা শহর চারদিকে বাড়ছে,
আমার শরীর আগের চেয়ে তিন ইঞ্চি লম্বা হয়েছে,
শুধু আমার বয়স তোমার চেয়ে একটুও বাড়েনি বলে-
আমার আজও বিয়ে করা হয়ে উঠেনি।

“নীলা’পা
কেনো আমি তোমার চেয়ে বয়সে বড় হলাম না।
——————
র শি দ হা রু ন
কাবযগ্রন্থ- বিছানায় পুড়ে আমার মধ্যবিত্ত মুখোঁশ
২৩/০৭/২০২২
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×