somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রূপগঞ্জ বিদ্রোহের ১ বছর

২৩ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৪:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ২৩অক্টবর। গত বছরের এ দিনটিতে ঘটে গিয়েছিল আমদের দেশে অনাকাংখিত এক ঘটনা। সেনা সদস্যদের দায়দায়িত্বহীন কাজ ও অযৌক্তিক পরিমান ভূমি নিয়ে আবাসন বাণিজ্য করার ফল স্বরূপ ঘটে এ সংঘর্ষ। যাতে ক্ষুন্ন হয়েছিল আমাদের প্রিয় সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি। কিন্তু সে ভুলের যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে তাই ঘটে যাওয়া সে ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আবার যেন অপদখল না হয় কৃষকের ভূমি, গরীবের শেষ সম্বল। সমবেদনা জানাই ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার এর প্রতি যাদের হারাতে হয়েছে তাদের প্রিয় কোন মানুষকে।

গত বছরের ২৩ অক্টবর, ২০১০ রূপগঞ্জে যে ঘটনা ঘটে গেল তাতে দেখা যায় সেনা বাহিনী ১৩,০০০ বিঘা (কায়েতপাড়া ও রূপগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রাম) ভূমি ক্রয় করে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের জন্য AHS(Army Housing Scheme) নামে একটি কলোনি সৃষ্টি করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী গত জানুয়ারি মাসে প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এটি একটি লিমিটেড কোম্পানি। প্রকল্পের আয়তন ধরা হয় ১৩ হাজার বিঘা যাতে ২৭,০০০ প্লট রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে এটি শেষ হবার পরিকল্পনা করা হয়। এ পর্যন্ত ১,৪০০ বিঘা জমি কিনেছে। এজন্য সেনাবাহিনি ৪টি অস্থায়ী ক্যাম্প করে। এখন এটি ছোট করে ২৭,০০০ প্লটের পরিবর্তে ৮,০০০ করার চিন্তা করা হচ্ছে। প্রকল্পের নাম AHS থেকে পরিবর্তন করে MHS(Military Housing Scheme) হচ্ছে। (সূত্র:প্রথমআলো ২৪,২৫ ও ২৬ অক্টবর, ২০১০ পৃষ্ঠা ১-২) ।

এলাকার লোকজন যারা ২৪মৌজার অন্তর্গত তারা তাদের জমি আর্মি ছাড়া অন্য কারও কাছে বেচতে পারেনা। এমনকি নিজ স্বজনদের কাছেও না। কোনভাবে যদি বেচতে পারে তাহলে তার কাছ থেকে জোর প্রয়োগ করে আর্মির নামে অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে নিয়ে নিচ্ছে এবং মধ্যসত্তাভোগীরা আংগুল ফুলে কলাবৃক্ষ হচ্ছে। এছাড়া যারা জমি বিক্রি করতে চায় না তাদেরকে বিক্রয়ের জন্য বলপ্রয়োগ করা হয়। এসব নিয়ে গ্রামবাসির মাঝে ধিরে ধিরে একটি চাপা ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে। যার বহি:প্রকাশ ঘটে ২৩ অক্টবর। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে যা হয়। সাহসী রূপগঞ্জবাসীর এ প্রতিবাদে কে লাল দলের আর কে নীল দলের সমর্থক সে ভেদ ছিলনা। তাদেরকে তাদের পূর্বপুরুষের সম্পদ রক্ষার প্রত্যয়ই অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, শিখিয়েছে প্রতিবাদী হতে।

রূপগঞ্জ উপজেলা অর্ধেক শীতলক্ষা নদীর পশ্চিম পার্শ্বে আর বাকি অর্ধেক নদীর পূর্ব প্রান্তে। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম অংশে। এ অংশের পূর্বে শীতলক্ষা, পশ্চিমে রামপুরা খিলক্ষেত এলাকা, উত্তরে পূর্বাচল প্রকল্প (যা কিনা রূপগঞ্জেরই অংশ) এবং ডেমরা। অবস্থান থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে এলাকাটি DAP(এর উদ্দেশ্য হলো ঢাকার ক্রমবর্ধমান চাপ নিয়ন্ত্রনের জন্য মহানগরীর পরিধী বৃদ্ধি করা) এর অন্তর্গত। সংগত কারনেই এখানকার জমি হয়ে যাচ্ছে সোনারটুকরো। আর সেটাই হয়েছে এ এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপরূপে।

একটু পেছন ফিরে দেখি। প্রথম রাজউকের পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের নামে আদিবাসীদের থেকে নামমাত্র মূল্যে তাদের পৈত্রিক ধনটুকু নিয়ে নেয়া আর তৎকালিন প্রস্তাবিত প্রকল্পে তাদের কোন প্লট না রাখা। তারপর দাবি তোলা হয় জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তত একটি বাড়ী করার স্থান দেয়া হোক। কিন্তু গাঁয়ের লোককে তারা তাদের অভিজাত এলাকায় বাড়ী করতে দেবে না। তৎকালিন ক্ষমতাসীন সাংসদ নির্বাচনে হেরে গেলেন ঐ প্রকল্পে মদদ দেয়ার জন্য। এবার অন্য দলের লোকেরা ক্ষতিগ্রস্থদের প্লট দেয়ার আশ্বাস দিয়ে সাংসদ হলেন। গত ২৫ ডিসেম্বর '১০ রাজউক চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্থদের প্লট দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এতো বছর পরও, এখন পর্যন্ত ব্যপারটি মূলো ঝুলিয়ে রাখার মতোই রয়ে গেছে।

কিন্তু আবার নতুন বর্গীর আগমন ক্ষমতাসীনদের পিঠে চড়ে। এবার পূর্বাচল প্রকল্পের দক্ষিণে রূপগঞ্জের যে অংশটুকু ছিল তা স্থানীয় জনসাধারণের স্বাভাবিক অধিকার হরণ করে ভক্ষণ করার পালা। এবার আর্মি নামে এলো একটি প্রাইভেট লিমিটেড হাউজিং কোম্পানি। জমির জন্য তারা (অবসরপ্রাপ্ত) আর্মিদের নিকট থেকে কাঠা প্রতি নিচ্ছে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা ও রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১০০০০টাকা। আর রূপগঞ্জের লোকের বিঘা(৩০শতাংশ) প্রতি ৭০-৮০ লাখ (স্থান ভেদে কমবেশি হবে) টাকা বাজার মূল্যের জমি খতাপত্রে দেখাচ্ছে ৫০-৬০ লাখ, জমির মালিক পাচ্ছে ১৫-২০ লাখ টাকা বাকি টাকা আর বাকি টাকা স্থানীয় দালাল ও আর্মির অসাধু সেনাদের পকেটে চলে যায়। এমনটি হলে স্বাভাবিকভাকেই ক্ষোভ সৃষ্টি হবে, কারন বাজার মূল্যের আর প্রাপ্ত মূল্যের মাঝে পার্থক্য কয়েক গুন। আর একসাথে ৪০টি গ্রাম দখল করতে চাইলে স্থানীয় জনগন এর মাঝে ক্ষোভ দেখা দেবেনা, তার নিশ্চয়তা কি?

তাছাড়া, আপনার যে ধন আপনি সেচ্ছায় ছাড়তে রাজি নই, সেই ধন নিতে হলে অবশ্যই অধিক গুণ মূল্য দিতে হবে গ্রহিতাকে। কারন সে ধনতো তার বিক্রি করার কোন প্রয়োজন নেই। একজন চাষী সেই জমিতে ফসল করে দিব্যি তার সংসার চালিয়ে নিচ্ছে আবার তার জমির মালিকানাও থাকছে, সেইসাথে দিনদিন জমির দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সে এমন কোন জীবন মৃত্যুর সংকটের সম্মুখ্খীন হয়নি যে সম্পদ পানির দরে বিকিয়ে দিতে হবে। আর প্লট কেনার টাকাতো যারা প্লট কেনতে ইচ্ছুক তারা দিচ্ছেই, তাহলে স্থায়ীবাসীদের সাথে কেন এ অবহেলা। গরীব ঠকানো সল্প মূল্যের এই সকল প্লটের জন্য রাজউকে আবেদনের জন্য সুদীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। প্লট এবং আবেদনের রেশিও হয় ১:১০০০। দামটা একটু বাড়িয়ে দিলে গরীবও কিছুটা ন্যায্য মূল্য পায়, আর আবেদনের রেশিওটাও কিছুটা কমে।

এতো গেলো সরকারি বর্গীদের কথা। বেসরকারী বর্গীদের অত্যাচারেও রূপগঞ্জবাসীর রাতের ঘুম হারাম হতে বসেছে, যা বিভিন্ন সময় পত্রপত্রিকাতে এসেছে। প্রায়ই দেখা যায় পৈত্রিক সম্পত্তিতে বিভিন্ন বেসরকারি হাউজিং সোসাইটি এসে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিচ্ছে "ক্রয় সূত্রে জমির মালিক কখগ কোং" । অথচ জমির মালিক জমি বিক্রিই করেনি। অথবা আপনার জমির চারপাশে জমি কিনে আপনাকে জোর করে সস্তায় বিক্রি করতে বাধ্য করছে। এদের অত্যাচার দেশের অন্যান্য স্থানের ভূমি দস্যুদের থেকে একটু বেশিই হবে। এক্ষেত্রেও স্থানীয় দালালদের অত্যাচার ও তাদের আর্থিক সুবিধা ভোগের অভিযোগ শুনতে পাওয়া যায় স্থানীয় জনসাধারণের নিকট। আর সকল ক্ষেত্রে স্থানীয় দালাল তারই, ক্ষমতাশীল দলের ছত্রছায়া যাদের উপর থাকে।

ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে। আশা করি রূপগঞ্জের এ ঘটনার পর আর কোন অযৌক্তিক ভূমি গ্রহণ হবে না। ঘটবেনা কোন অবৈধ দখল।

রূপগঞ্জ, সেনাবাহিনী, জনবসতি ও ভূমি
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×