somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।

৩০ শে মার্চ, ২০২০ ভোর ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য মতে মহামারি পৃথিবীতে আল্লাহর একটি শাস্তি। যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতার মতো জঘন্য পাপ বেড়ে যায়, তখন আল্লাহ তাদের মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দেন। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারি আকারে প্লেগ রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্লেগ রোগ (মহামারি) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আল্লাহর নবী (সা.) তাকে জানান, এটি হচ্ছে এক ধরনের শাস্তি। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনের জন্য রহমত বানিয়েছেন। অতএব প্লেগ রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তাছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না; তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের সমান সাওয়াব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৪)

দ্বিনের ব্যাপারে উদাসীনতা জাতির ধ্বংস ডেকে আনে
-----------------------------------------------
আল্লাহর অবাধ্যতা, সীমালঙ্ঘন ও অবাধ পাপাচার মহামারির অন্যতম প্রধান কারণ হলেও শুধু পাপীরাই তাতে আক্রান্ত হয় না; বরং সৎ ও নেককার মানুষও তাতে আক্রান্ত হয়। কেননা তারা দ্বিনি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে হয়তো উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের আগের যুগে আমি যাদের রক্ষা করেছিলাম তাদের মধ্যে অল্প কয়েকজন ছাড়া সজ্জন ছিল না—যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে নিষেধ করত। তারা সীমালঙ্ঘনকারীরা যাতে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পেত তারই অনুসরণ করত এবং তারা ছিল অপরাধী।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ১১৬)


কোরআনের বর্ণনায় মহামারিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি
---------------------------------------------
অতীতেও আল্লাহ পাপাচারের শাস্তি হিসেবে মহামারি প্রাদুর্ভাব ঘটান এবং সে জাতিকে ধ্বংস করে দেন। দাউদ (আ.)-এর যুগে এমন ঘটনা ঘটেছিল। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তুমি কি তাদের দেখনি যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক। তারপর আল্লাহ তাদের জীবিত করেন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘তারা সংখ্যায় ছিল চার হাজার। মহামারির ভয়ে তারা পালিয়ে ছিল। তারা বলেছিল, আমরা এমন ভূমিতে যাব যেখানে মৃত্যু নেই। অতঃপর তারা এক স্থানে একত্র হলো। তখন আল্লাহ তাদের ওপর মৃত্যুর ফরমান জারি করেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

এছাড়া একটি হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় আল্লাহ অতীতের কোনো কোনো গোত্রকে মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘এটি আল্লাহর গজব বা শাস্তি বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর ওপর এসেছিল, তার অবশিষ্টাংশই মহামারি।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)

মহামারি নিয়ে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী
----------------------------------------
মহামারি ও রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়াকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কিয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, এরপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারি, বকরির পালের মহামারির মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩১৭৬)

তবে এই মহামারি থেকে আল্লাহ পবিত্র নগরী মদিনাকে রক্ষা করবেন বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মদিনায় ঢুকতে পারবে না দাজ্জাল, আর না কোনো মহামারি। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩১)

মহামারি দেখা দিলে করণীয়
-------------------------
যেকোনো বিপদে বান্দা আল্লাহমুখী হোক এবং তার কাছে ক্ষমা ও আশ্রয় প্রার্থনা করুক এটাই মহান প্রতিপালক আল্লাহর প্রত্যাশা। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে বিপদে আল্লাহমুখী হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তাই মহামারি দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হলো নিজের ভুল ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদের শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনীত হলো না এবং কাতর প্রার্থনাও করে না।’ (সুরা: মুমিনুন, আয়াত: ৭৬)

বেশির ভাগ মহামারিই সংক্রামক। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) মহামারির সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)

সহিহ বুখারির বর্ণনায় পাওয়া যায় শামে মহামারি দেখা দিলে ওমর (রা.) তার গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেন। (হাদিস: ৫৭২৯)

মহামারিতে মারা গেলে শহীদ
--------------------------
আল্লাহ তাআলা শাস্তি হিসেবে মহামারির প্রাদুর্ভাব ঘটান। যেন বান্দা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। সুতরাং মহামারি দেখা দিলে কোনো বান্দা যদি আল্লাহর কাছে বিনীত হয়ে তাওবা করে এবং রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ মোতাবেক ধৈর্যের পরীক্ষা দেয়, তবে আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পেটের রোগে মারা গেলে শহীদ, প্লেগে মারা শহীদ।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৩)

মহামারিতে পড়ার দোয়া
----------------------
হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দোয়াটি সন্ধ্যায় তিনবার পাঠ করবে সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো বিপদ হঠাৎ চলে আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। দোয়াটি হলো, ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজি ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম’, অর্থ: ‘আল্লাহর নামে যার নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮৮)

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, (রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য) নবী (সা.) পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল বাসারি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন সাইয়্যিল আসকাম’, অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ১৫৫৪)

কৃতজ্ঞতা: বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২০ ভোর ৫:২৫
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×