somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনা গজবের কারণে আমরা যেই সমস্যাগুলোর ভিতর পড়তে যাচ্ছি।

৩১ শে মার্চ, ২০২০ ভোর ৫:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আফসোস, আমরা বেশীরভাগই কিন্তু এখনও বুঝছি না আমরা কি গজবে কিংবা আসন্ন গজবের ভেতর আছি।

এই স্কুল, অফিস-আদালত ছুটিটা কিন্তু কোন ভ্যাকেশন না, কোন পিকনিক না। ইকোনোমিকালী আমরা পুরো ওয়ার্কফোর্স কিন্তু মূলতঃ বসে আছি। নো প্রোডাক্টিভ ওয়ার্ক। মানি রোলিং হচ্ছে না। টাকা আসছে না। আমরা যতই হোম অফিস করি মূল টাকা কিন্তু প্রোডাকশন রিলেটেড। প্রোডাকশন নেই তো ব্যবসাও নেই। বসে বসে খেলে সাত রাজার ধনও ফুরিয়ে যায়। আজকে বন্ধের এক সপ্তাহও কিন্তু যায় নি। আপনার আমার মত বহু লাট সাহেবের বাচ্চা আজকে বেকিং, কুকিং, নেটফ্লিক্সিং হেনতেন নানা কাজ করে খুব আনন্দের সাথে ফেসবুকে দিচ্ছি। এই অবস্থাটা এক মাস যেতে দেন, আপনার এগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

হয়তো কয়েকমাস পরে আপনি আমি টিসিবির ন্যায্য মূল্যের ট্রাকের লাইনে রোদের মধ্যে চাল-ডাল কেনার লাইনে দাঁড়াবো। তার কিছুদিন পর এভাবে চললে হয়তো যাকাত ফেতরার লাইনেও দাঁড়াতে হতে পারে। সেদিন আপনি আমি ফেসবুকে সেলফী বা স্টোরি দেবো না নিশ্চিত থাকেন। "সকালে রাজা বিকালে ফকির"- কথাটার মানে তখন হাড়ে হাড়ে বোঝা যাবে।

এই যে বিকাল হলেই ঘরের মহিলারা গরমে ঘেমে ভিজে হরেক পদের নাস্তা পানীয় বানিয়ে খাওয়াচ্ছেন; এই আদর মাসখানেক পরে আর এরকম থাকবে না। যদি আপনার ইনকাম বসে যায় আপনার মূল্যও স্বাভাবিকভাবেই কমতে থাকবে। সন্তানের সাথে খেলতে ভালো লাগবে না। স্ত্রীর সাথে কথা বলতে ভালো লাগবে না। মনে রাখবেন, যারা বাইরের কাজের মানুষ তাদের ছুটির দিনেই বাসায় মানায়। বিদেশী আত্মীয়-স্বজন খুব বেশীদিন দেশে থাকলে আদর আপ্যায়ন কমে যায়।

সুতরাং, সমাজে আপনার চেয়ে দরিদ্র শ্রেণী যাদের আপনার মত মাসখানেক বসে খাওয়ার লাক্সারী নেই তাদের কথা ভেবে হলেও ফেসবুকে খাবার-দাবারের ছবি দেয়া থেকে বিরত থাকুন। বদ নযর এবং মানুষের অন্তরের কষ্ট আপনার এই শো অফকে বিরাট ধ্বংসে পরিণত করতে পারে।

একটু ভেবে দেখুন, এই সামান্য দশদিনের বন্ধেই ইলেকট্রিক, গ্যাস, পানির মিস্ত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। সবাই আতংকে আছে। আজকে আপনার বাসার মেইন ইলেকট্রিক লাইনে সমস্যা হলে আপনি মোটামোটি বেশ বড় বিপদে পড়বেন। কয়েক ঘন্টায় আইপিএস চলে গেলেই আপনাকেও গরীব লোকটার মত কুপি-মোমবাতি জ্বালতে হবে, গরমে ঘামতে হবে।

ঘরের ওয়াটার পিউরিফায়ারটা নষ্ট হলে আপনি খাবার পানির সংকটে পড়ে যাবেন। ডাক্তারদের অনেকেই সরাসরি রোগী দেখছেন না। কেউ কেউ নিজেরাই কোয়ারেন্টাইনে। রাস্তার একটা ভিক্ষুকেরও ইকোনোমিতে কনট্রিবিউশন আছে। কারন, ভিক্ষার পয়সা দিয়েও সে চাল-ডাল কিনে আপনার আমার ব্যবসাতে টাকা দিয়ে থাকে। সবার কাছে অনুরোধ, এই সময়টাতে কোন অপচয় করবেন না। চাল-ডাল-তেল থেকে শুরু করে ইলেকট্রিসিটি-গ্যাস-পানি-ইলেকট্রনিক্স পর্যন্ত কিছুই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না। হতে পারে সামনে খুবই খারাপ সময়। সম্পদের পরিমিত ব্যবহার আর কিছু না হোক আপনার নির্ভরশীলতা কমাবে।

আমরা এখনও অনেকেই ছোটবেলার সামাজিক বিজ্ঞানের সেই ছবকের মধ্যেই আছি;

"আল্লাহর গজব বলতে কিছু নেই, সবই কুসংস্কার।"

"একত্রে মিলেমিশে আমরা করোনার মত দুর্যোগের মোকাবেলা করতে সক্ষম"

"সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আমরা করোনাকে রুখে দিয়েছি" ইত্যাদি ইত্যাদি।

ভুলে যাবেন না, আর পাঁচটা ইস্যুর মতো এবারেরটা লোকাল ইস্যু না। বরং, গ্লোবাল এবং ডেঞ্জারাস ইস্যু। মরলে তো মরেই গেলেন, কিন্তু বেঁচে থাকলে হয়তো অনেক অভাব, দূর্ভিক্ষ, বেকারত্ব, সামাজিক অবক্ষয় দেখতে হতে পারে। আগে এই গরীবের দেশে কিছু হলে পালাতেন বড়লোকের দেশে। কিন্তু এইবার আর সেই সুযোগটা নেই। আজকে কোন ভিআইপি মরতে বসলেও বিদেশী এয়ার এ্যাম্বুলেন্স কিংবা জগদ্বিখ্যাত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আসতে পারার কথা না। সুতরাং, মুখ থেকে কথা বের হবার রাস্তায় ফিল্টার বসান।

আজকে আত্মীয়-স্বজনও কেউ কাউকে স্বশরীরে এক্সপেক্ট করছে না। করোনা দূরে থাক, নরমাল সর্দিকাশি-নিউমোনিয়ায় মরেছে শুনলে গোসল-জানাযার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। কত লোক পরিবার থেকে দূরে আছে। করোনা আক্রান্ত রোগী হলে তো কাছে ধারেই ঘেষবে না। পুরো বিষয়টা হাশরের ময়দানের একটা মিনি মডেল বলতে পারেন। "আমার কি হবে? আমার কি হবে?"- ছাড়া সেদিন আর কোন স্বার্থ কাজ করবে না।

আলহামদুলিল্লাহ। আমরা এমন একটা দেশে আছি যেটা কাগজে কলমে অনেকটাই সেক্যুলার বা ধর্মনিরপেক্ষ হলেও বাস্তবে পশ্চিমাদের মতো ধর্মহীন না। আল্লাহর একত্ববাদের স্বাক্ষ্য দেয়ার মতো, আল্লাহকে একমাত্র ক্ষমতার অধিকারী মনে করার মতো বহু মুসলিম-মুমিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'লা জীবিত রেখেছেন। বিপদে পড়লে যেগুলো একদমই নাস্তিক সেগুলা বাদে সবাই আল্লাহর নাম স্মরণ করে। এর উপর ভিত্তি করেই আমরা আশা রাখবো, রব্বুল আলামীন আমাদের দয়া করবেন। আমরা হতাশ হবোনা।
©Khondoker Asif
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২০ ভোর ৫:৫৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×