৪২০ সালে আধুনিক ইরাকের দক্ষিণের এক পার্সিয়ান প্রদেশ খুজিস্তানের (Khuzistankhujistan) এক পারসিক মন্দিরে এক খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতা আগুন ধরিয়ে দেয়। ধারণা করা হয় ওই চরমপন্থী নেতাকে ঘটনাস্থলেই নিরাপত্তা কর্মীরা মেরে ফেলে। যদিও ততক্ষণে যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এই আত্মঘাতী হামলার পেছনে প্রধান উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের প্রধান ধর্ম, Zoroastrianism কে একটি বড় রকমের আঘাত প্রদান করা। আরেক খ্রিস্টান যাজক আব্দাস সেই হামলায় সামিল ছিল, কিন্তু ঘটনার পর আত্মহত্যা করতে সে ব্যর্থ হয়। রক্ষীরা তাকে গ্রেপ্তার করে তৎকালীন শাসক ইয়াজদেগার্দের সামনে নিয়ে আসে। এই ইয়াজদেগার্দ বিগত ২০ বছর ধরে খ্রিস্টানদের প্রশ্রয় দিয়ে আসতেন। কিন্তু এই ঘটনার পর তার মানসিকতা পরিবর্তিত হয়। তিনি আব্দাস ও তার অনুসারীদের নির্দেশ দেন পোড়ানো মন্দির আবার নির্মাণ করার। তবে আব্দাস ও তার অনুসারীরা ইয়াজদেগার্দের মত পরিবর্তনে সমর্থ হয়। তারা শাসককে এটা বোঝাতে পারে যে খ্রিস্টানদের পারস্যের সমাজ ব্যবস্থায় দখলদারিত্ব চালানোর কোন ইচ্ছা নেই। কিন্তু তারা ওই শাসকের উদার নীতিমালার ফায়দা ক্রমাগত লুটতে থাকে।
ক্রিস্টোফার কেলি তার বই ‘Attila The Hun - Barbarian Terror And The Fall Of The Roman Empire" এ এমনটাই উল্লেখ করেছেন।
ইয়াজদেগার্দ পারস্যের ত্রয়োদশ অধিপতি ছিলেন, যার শাসনকাল ছিল ৩৯৯ খ্রি থেকে ৪২১ খ্রি পর্যন্ত। তার শাসনকাল তেমন ঘটনাবহুল ছিল না। তাকে মোটামুটি শান্তিপ্রিয়ই ধরা হত। তিনি রোমানদের সাথেও ভাল সম্পর্ক রাখতে চাইতেন। নিজের শাসনকালের প্রথনদিকে তিনি খ্রিস্টানদের প্রশ্রয় দিয়ে আসতেন। কিন্তু যখন তিনি তাদের দুরভিসন্ধি বুঝতে পারেন ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। এভাবেই পারস্যে খ্রিস্টানরা তাদের দখলদারিত্ব শুরু করে ক্রুসেডের মাধ্যমে।
ধর্মীয় সাম্রাজ্যবাদ বলতে যা বোঝায় খ্রিস্টানরা এখানে সেটাই করেছিল। এরপর খ্রিস্টধর্ম প্রচার পায় আরও বৃহৎ পরিসরে। এরপর ২ শতাব্দী পর মুহম্মদের মাধ্যমে ইসলামের জন্ম হয়। এবং এই ইসলামের প্রসারে নবী ও তার অনুসারীরা এই ক্রুসেডের মতই আরেকটি নীতি অনুসরন করে যাকে আমরা বলি জিহাদ। জিহাদ ও ক্রুসেড উভয়কেই বাংলায় বলা হয় ধর্মযুদ্ধ। কাজেই ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ বলা হয় খ্রিস্টানরাই শুরু করেছিল। এর আগে ইহুদিরা বা আর্যরা তাদের ধর্ম প্রচারে অস্ত্র ব্যবহার করলেও এই ক্রুসেড বা জিহাদের মত এত পরিকল্পিত ও সংগঠিতভাবে আক্রমণ চালানোর মত সৃজনশীলতা তাদের মধ্যে ছিল না। কাজেই বলা যায় ধর্মীয় উন্মাদনা ও আগ্রাসন খ্রিস্টানদের মাধ্যমেই শুরু হয়। যা আজও অব্যহত আছে। তবে এখন মূলত এটা জিহাদের আধুনিক প্রয়োগের মাধ্যমেই টিকে আছে।
(আরো দেখতে পারেন, http://beinghuman.blogs.fi/ ও http://thelittlebook.blogs.fi/ )