চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বানিজ্যিক রাজধানী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম লীলাভুমি চট্টগ্রাম। পাহাড় সমুদ্র বনবনানী উপত্যকা বানিজ্য পোর্ট কি নেই এখানে ? কথিত আছে এই বিভাগের সাথে যদি গোটা দেশ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় তবে বাংলাদেশ অচল হয়ে পড়বে কারণ চট্টগ্রাম পোর্ট। চট্টগ্রাম শহর থেকে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এর দুরত্ব মাত্র ১৪৮ কিঃ মিঃ । যেতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টা।
এবার বলছি কেন একথা বলছি। ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম জেলা গঠিত হয়। গুগলে খুজলে দেখা যাবে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে। যার কারণে চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে প্রচুর শিল্প-কারখানা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে ত্বরান্বিত হয়েছে হয়েছে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। এই অর্থনৈতিক গুরুত্বের কারনেই চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীর মর্যাদা লাভ করেছে।
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সর্বমোট রপ্তানী বাণিজ্যের প্রায় ৭৫ ভাগ সংঘটিত হয়। অন্যদিকে আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ হার ৮০ ভাগ। রাজস্ব আয়েও চট্টগ্রামের ভূমিকা অপরিসীম। দেশের মোট রাজস্ব আয়ের শতকরা ৬০ ভাগ আসে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে।বাংলাদেশের প্রথম রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল হিসাবে ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রামের হালিশহরে ৪৫৩ একর জায়গার উপর নির্মাণ করা হয় চট্টগ্রাম ইপিজেড। এটা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩.১০ কিলোমিটার এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে মাত্র ১.৩০ কিলোমিটার দুরত্বে হওয়ায় শিল্প পার্ক হিসাবে দ্রুত প্রসার লাভ করেছ। চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক সমুদ্র বন্দর।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে চট্টগ্রাম। কিন্তু একে বানিজ্যিক রাজধানী ঘোষনা করার কথা বার বার উঠলে বাস্তবে রুপ পাচ্ছেনা। চীনের সাংহাই, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক কিংবা ভারতের মুম্বাই গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক নগর হয়েছে ব্যবসা–বাণিজ্যের সহায়ক সব সুবিধা থাকার কারণে।চট্টগ্রামকেউ এভাবে স্পেয়ারেট করে টেক কেয়ার করতে হবে। একসময় বাণিজ্যের প্রয়োজনে ছুটে এসেছিল বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও।প্রাচীনকালে বন্দরকে ঘিরে একের পর এক বিদেশী চট্টগ্রামে আসলেও ব্যবসা–বাণিজ্যের জন্য সহায়ক অবকাঠামো ও নীতিগত অনুমোদনের সুবিধা ঢাকায় কেন্দ্রীভূত হওয়ায় এই স্রোতে ভাটা পড়তে থাকে। বর্তমান সরকার বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও শিল্প–বাণিজ্যবিষয়ক সিদ্ধান্ত আসছে ঢাকা থেকে।
দেশের অর্থনীতিতে চট্টগ্রাম কেমন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। এখনো সমুদ্রপথে সারা দেশে কনটেইনারে আমদানি–রপ্তানির ৯৮ শতাংশই এই বন্দর দিয়ে পরিবহন হয়। পণ্য হিসেবে চট্টগ্রাম দিয়ে পরিবহন হয় ৯৩ শতাংশ। ২০০৩ সালে বিএনপি সরকার বুঝলেও বর্তমান সরকার চট্টগ্রামের গুরুত্ব কেন বুঝতে পারছেনা সেটা আমি বুঝছে পারছিনা। যদিও প্রধানমন্ত্রী মৌখিক ভাবে অনেকবার ঘোষনা দিয়েছেন কিন্তু বাস্তবে রুপ পায়নি। সেদিন চিটাগাং চেম্বার অফ কমার্স এর মাহবুব ভাই সাক্ষাতকারে বলেছেন চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের নৌ, আকাশ, সড়ক ও রেলপথের সংযোগ আরও উন্নত করতে হবে। আর আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। তাহলে বাণিজ্যিক রাজধানী বাস্তবায়নের স্বপ্ন পূরণ হবে।
জাতীয় অর্থনীতিতে বর্তমানে গার্মেন্টসের এক বড় ভূমিকা সবচেয়ে বেশী। গার্মেন্টস শিল্পের এক বিরাট অংশ চট্টগ্রামে অবস্থিত। ২০ লক্ষ নারী শ্রমিক এই শিল্পের সাথে জড়িত। বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের প্রায় ৮৫ ভাগ এবং রপ্তানি বাণিজ্যের ৮০ ভাগই পরিচালিত হয় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। প্রতি অর্থবছরে গড়ে ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করা হয়।যার ৯০ % হয় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে। আমদানী হয় ১৩ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য সামগ্রী যার ৮৫% এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের মাধ্যমে আহরিত রাজস্ব আয় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা।
আরো অনেক তথ্য উপাত্ত দেয়া যায়। কিন্তু পোস্ট দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। তাই এখানেই সমাপ্ত।
চট্টগ্রাম কে পরিচর্যা করলে বাংলাদেশকে কখনো শ্রীলংকার ভাগ্য বরণ করতে হবেনা।ততদিন বাংলাদেশ কখনো শ্রীলংকা হবেনা।
তথ্য ছবিঃ প্রথম আলো, উইকি, ফেসবুক, গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০২২ রাত ২:৩৬