
ছবি আমার তোলা। র্যাম্পে ক্যাট ওয়াক করছে দুই পাহাড়ি মেয়ে সিন্ডি ও ডিবিয়ানা।
বর্ষাকালে কখনো রাঙামাটি গিয়েছেন? মেঘের মতো কুয়াশা দেখে মনে হবে শীত শেষ হচ্ছে। এই মেঘ, এই বৃষ্টি, এই রৌদ্র। সত্যি এক অসাধারণ পরিবেশ। বন–জঙ্গলে ঢাকা সারি সারি সবুজ পাহাড় উপভোগ করার মতো সুন্দর।
চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৪৮ মাইল। রিলাক্সে ড্রাইভ করলেও ৩ ঘণ্টা লাগে যেতে শহর থেকে। চট্টগ্রাম শহর থেকে কাপতাই ও রাঙামাটি যাওয়া সবচেয়ে সহজ। কোন ছুটির দিনে যদি বৃষ্টি হয় ওদিকে চলে যায় শুভ। একদিন ঝুম বৃষ্টি হচ্ছিল। যথারীতি বের হয়ে গেল রাঙামাটির উদ্দেশ্যে।
সেদিন পাহাড়ের বুকে বর্ষায় মেঘের পরশে প্রকৃতি মাদকতার রূপ ধারণ করেছিল। মেঘের উদ্দাম নৃত্য মুগ্ধ করে দিচ্ছলো। চবির এক অপরূপা ত্রিপুরা নজর কেড়েছিল শুভর।মেয়েটির জন্মদিন ২০ শে শ্রাবন। সালটি ২০১৬। ওর গ্রাজুয়েশন শেষ করে ওখানেই একটি কাপড়ের দোকান দেয়।এতো চমৎকার মেয়ে খুব কম দেখা যায়। পাহাড়ি মেয়েরা খুবই সৎ ও বিশ্বস্ত। জীবনের সিংগেল সময় পার হচ্ছিল শুভর। একাকীত্ব সহ্য হচ্ছিলোনা।মেয়েটির নাম ডিম্পল। সে সময়টিতে লোনলিনেস যখন শুভকে তীব্র যন্ত্রনা দিচ্ছিল তখন ডিম্পল যেন - সিগারেট পাওয়া যায়না এমন একটি স্থানে এক প্যাকেট বেনসন লাইট পাওয়ার মতো আনন্দের। গুটি গুটি বৃষ্টি হচ্ছে।পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি নামলে বিকাল ৫ টা বাজলে মনে হয় সন্ধ্যা নেমেছে।ওর দোকান রাঙামাটি শহরে হওয়ায় একেবারে ওর শপের সামনে গাড়ি পার্ক করলো শুভ। নিজ শহরে প্রিয় বন্ধুর দেখা পাওয়া প্রত্যেকের জীবনে অন্যরকম আনন্দের মাত্রা যুক্ত করে। ডিম্পলের ক্ষেত্রেও অনুভূতির ব্যতিক্রম হয়নি।

প্রিয় বন্ধুকে পেয়ে দোকানের কর্মচারীদের রেখেই শুভর সাথে বেরিয়ে পড়ল। তখন দুপুর ১২ টা। ওর দোকানের নিকটবর্তী একটা রিসোর্টে উঠলো। ডিম্পল রিসেপশানে বসে আছে। রিসেপশানিস্ট মেয়েটি ডিম্পলের বন্ধু। শুভ ফ্রেশ/চ্যাঞ্জ হয়ে বেরিয়ে পড়ল ডিম্পল কে নিয়ে। শুভ এবার প্ল্যান করে এসেছে ডিম্পলকে প্রপোজ করবে। রিসোর্টের পাশে একটি রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ সেরে গল্প আড্ডায় মেতে উঠল চবির দুই প্রিয় বন্ধু। ধর্ম আলাদা, সংস্কৃতি আলাদা, কিন্তু কোন বৈষম্য নেই।আসলে বন্ধুত্বের কাছে বৈষম্য টৈষম্য এগুলো জাস্ট নাথিং। অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন ও শিক্ষিত, স্বনির্ভর হওয়ায় জাস্ট ডুন্ট কেয়ার দ্যা ডার্টি পিপল'স মেন্টালিটি টাইপ বন্ধুত্ব ওদের। দুপাশে পাহাড় এর আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে ঝুলন্ত সেতুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দুইজন। একপর্যায়ে পৌঁছে গেল। তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। শুভর বিশ্বাস ডিম্পল কখনো ওকে ফিরিয়ে দিবে না। সে বিশ্বাস থেকে সাথে করে ডিম্পলেএ জন্য রিংও নিয়ে গেসে।

সন্ধ্যা ৭ টা।চারদিকে মেঘ আর মেঘ।মেঘের উপর দিয়ে নিজেদের জানান দিচ্ছে বিশালাকার সেগুন গাছ। সেই মেঘ ছুঁয়ে আসা হালকা ঠাণ্ডা বাতাসে প্রাণটা জুড়িয়ে গেল। ডিম্পলের খোলা চুল, সেক্সি চোখের চাহনি, শরীরের মিষ্টি ঘ্রানে শুভর মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গীয় উদ্যানে দাঁড়িয়ে আছে!আবার যেন নতুন করে প্রেমে পড়ে। অপরূপা ডিম্পলের পাগল করা সৌন্দর্যে সারাদিনের ক্লান্তি এক নিমিষেই উড়ে গেল। চারদিকে শুধু মুগ্ধতা। এটাই বাংলাদেশের মাটির পাহাড়ের সৌন্দর্যের সাথে ডিম্পলের সৌন্দর্য মিলে একাকার। এমন একটি মুহুর্তে প্রপোজ করল শুভ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ টি বছর যাকে প্রিয় বন্ধু জেনে এসেছে, সে প্রপোজ করবে ডিম্পল কল্পনাও করেনি।একটু আগেও যার মায়া কাড়া মুখের সৌন্দর্য আশে পাশের সব সৌন্দর্য মলিন করে দিচ্ছিল সে নিষ্পাপ পবিত্র মুখখানির উপর যেন কালো মেঘের ছায়া।
"ডিম্পলের স্পষ্ট জবাব, এতো বছর একসাথে পড়লাম, কখনো বলিসনি কেন, আমি ১ বছর আগে নিখিলের সাথে এনগেজমেন্ট করেছি,তাকে বড্ড ভালোবসি। ওকে কষ্ট দেয়া সম্ভব নয়"
অথচ ডিম্পলকে নিখিলের চেয়ে শুভ ১০ গুণ বেশী ডিজার্ভ করে। এরাই হলো আমাদের উপজাতি মেয়ে। এদের সম্মান করি এদের সততা, বিশ্বস্ততা এবং কমিটমেন্ট এর জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ৮:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




