somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গদ্য: 'বাঙলা' শব্দের বানান এবং বাঙালি অথবা বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদ

১০ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১.
আপনার পূর্বপুরুষ যথা পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ প্রমুখ কি বাঙলাদেশী ছিলেন, নাকি বাঙালি ছিলেন? তারা অবশ্যই বাঙালি ছিলেন। বাঙলাদেশী শব্দটি সংবিধানে এসেছেন জিয়া সাথে অবৈধ সামরিক শাসনকে জায়েজ করার জন্যে সংবিধানে পরিয়েছেন এসলামি তকমা। এইভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার উপর করাত চালানেন এবং সংবিধান এবং দেশকে কেবল মুসলমানের ভূখণ্ড বানিয়ে রাজনীতিতে নামলেন। পরে মেতে উঠলেন কবি সৈয়দ আলী আহসান। ইনাকে কবি বলার কারণ ইনার কবিতা ভালো। এবং ইনি অনেক বিষয়ে জ্ঞান রাখতেন। কিন্তু কার্যত ইনি জ্ঞানপাপী ছিলেন। ইনি সামরিক শাসন এবং মৌলবাদের সাথে আপোষ করে নিজেকে সর্বান্তকরণে কলুষিত করেছিলেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি জেনারেল জিয়া এবং সৈয়দ আলী আহসান বাঙলাদেশী জাতীয়তাবাদের ঠিকাদার।

০২.
ভৌগোলিক পরিচয় জনগণকে নাগরিক করে, যেমন আমি বাঙলাদেশের নাগরিক বা অধিবাসী জন্মসূত্রেও হতে পারি আবার নাগরিকতা সূত্রেও হতে পারি। যেমন কবি নজরুল ইসলাম, হাসান আজিজুল হক, হায়াৎ মামুদ এমন আরো অনেকই জন্মসূত্রে বাঙলাদেশী নন, তারা নাগরিকতা সূত্রে বাঙলাদেশী। কিন্তু তারা প্রথমত বাঙালি। আর তাছাড়া ৭৫ এর আগে সবাই বাঙালিই হিশেবেই পরিচিত ছিলেন নথিপত্রে এটা বলা বাহুল্য।
আমার মনুষ্য পরিচয়ের পরে যেটি আসে সেটি আমার মুখের ভাষা।
এইভাবে বলা যায়। ভৌগোলিক সীমা অনুসারে তুমি বাঙলাদেশী। যেহেতু তোমার দেশ বাঙলাদেশ। আর জাতি হিশেবে তুমি বাঙালি।

পৃথিবীর অধিকাংশ অঞ্চলে জাতীয়তা রূপ পরিগ্রহ করে ভাষার ভিত্তিতে, যেমন মধ্যপ্রাচ্যের যেসকল দেশের লোক আরবি ভাষায় কথা বলে তাদের আমরা আরব জাতি বলি। তারপর চাইনিজ, বিহারি ইত্যাদি।

০৩.
বাঙলা একাডেমিতে কিছু অসচেতন লোক ছিলো এবং থাকবে।
যেমন এইযে আমি একাডেমি লিখলাম, এদের নিয়মে এটাই শুদ্ধ। অথচ ওরা নিজেরাই লিখে 'একাডেমী'।
এইরূপে সংসদে আইন পাশ করে সংবিধান সহ অন্যান্য নথিপত্রে ঠিক করতে হবে বলেই ভুল বানানটা মানে 'বাংলাদেশ' বানান অভিধানে রাখা হয়েছে। সংসদে কতো বড় আইন পাল্টে যাচ্ছে-- আর এইটুকু তারা করতে পারে না।
বাঙলা একাডেমির অভিধানে 'বাঙলা' এই বানানটি আছে। কিন্তু 'বাঙলাদেশ' বানানটি নেই। বাঙলা শব্দের সাথে দেশ জুড়ে দিলে 'ঙ' হয়ে যাবে 'ং' এমন যুক্তি ঠিক হবে কেনো?
সুতরাং 'বাংলাদেশ' বানানটি শুদ্ধ নয়। 'বাঙলাদেশ' বানানটিই শুদ্ধ।
আমি বাঙলাদেশ লেখার পক্ষে। যেহেতু 'বাংগালি/বাঙ্গালী' বানান অশুদ্ধ, 'বাংলি' বানানও হবার নয়, শুদ্ধ হচ্ছে বাঙালি।
সিকোয়েন্সটা এই রকম, বাঙালি-বাঙলা-বাঙলাদেশ। এখন আপনি ঠিক করুন আপনি কোনটা লিখবেন।

'ঙ' বর্ণে হলন্তের দরকার হয় না। যেমন রঙ, সঙ অথবা ব্যাঙ লিখলে রঙ্গ, সঙ্গ কিংবা ব্যাঙ্গ উচ্চারিত হয় না।
'ঙ' দিয়ে বাঙলাদেশ লিখলেই শুদ্ধ। 'বাঙলা' বানানই ঠিক আছে।
বঙ্গ তৎসম শব্দ, এটা থেকে বঙ্গীয়, বাঙ্গাল, বাঙ্গালী, বাঙ্গলাদেশ এইসব শব্দ হয়, আর বাঙালি সেইখান থেকেই মানে তৎসমজাত।
আর তৎসমজাত যেসব শব্দ সন্ধিযুক্ত নয় সেইসব শব্দে অনুস্বার ং হবে না।
'বাঙলা' শব্দটির সন্ধি নাই। তাই বাঙলা শব্দটি ং দিয়ে হবে না।
সংবাদ=সম+বাদ, এটি তৎসম, এটার সন্ধি হয় বলেই এটাতে অনুস্বার হবে।
আর 'বাঙলা' আর 'বাংলা'র মধ্যে ধ্বনিগত মানে উচ্চরণগত কোনো পার্থক্য বা কোমলতার বিষয় নাই।
দুটোই একই শোনায়। এবং একাডেমির অলসতার কারণে 'বাঙলাদেশ' শব্দটি এখনো 'বাংলাদেশ' আছে।

০৪.
হুমায়ুন আজাদ আমাদের দেশের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ব্যাকরণবিদদের একজন, তিনি লিখতেন 'বাঙলাদেশ' এই বানান। আর তাছাড়া ১৯৯৩ সনে বাঙলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত 'বাংলা একাডেমী সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান' এর ভূমিকায় সম্পাদক আহমদ শরীফ 'বাঙলা' শব্দটিই ব্যবহার করেছেন। তিনি কোথাও 'বাংলা' ব্যবহার করেন নি।
দেশের উক্ত দুই মহান পণ্ডিত কি লোকদেখানোর জন্যে 'বাঙলাদেশ' বানানটি লিখতেন? না, এইভাবে লিখলে শুদ্ধ, তাই লিখতেন।

হুমায়ুন আজাদ ১০খণ্ড ব্যাকরণ রচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন একাডেমির কাছে সেই ৮০ দশকে। কিন্তু একাডেমি তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কারণ তিনি সত্য কথা বলতে কাউকেই ছাড়েন না।
বাঙলা একাডেমি যদি হুমায়ুন আজাদের প্রস্তাবে সম্মত হতেন আজ আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ এবং আধুনিক ব্যাকরণ পেতাম।

সংবিধানের এর মধ্যে অনেক সংশোধনী হয়ে গেছে। যদি সরকার ভাষা এবং বানান সচেতন হতো, বাংলাদেশ বানানটি ঠিক করে সংবিধানে তার স্থলে বাঙলাদেশই লেখা হতো।
এই সত্য জেনে সংবিধানে আছে (অলসতা এবং গুরুত্বপূর্ণ মনে না করার কারণে এখনো এই বানান বর্তমান) বলে আমি যদি ভুল বানান লিখি তাহলে আমার কুড়িবছর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আর কী দাম রইলো?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৬
২৮টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×