somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“গনহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত জাতিসংঘ ঘোষনা : জামায়াত এবার নিজেকে বাঁচাবে কি করে? ”

১৬ ই জানুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গনহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত জাতিসংঘ ঘোষনা : জামায়াত এবার নিজেকে বাঁচাবে কি করে?

ভূমিকা বাহুল্যমাত্র । সরাসরি কথাবার্তা হোক ।


৯ডিসেম্বর ১৯৪৮ জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের অধিবেশনে CONVENTION ON THE
PREVENTION AND PUNISHMENT OF THE CRIME OF GENOCIDE নামে একটি রেজুলেশন পাশ হয় । লিংক আছে এখানেঃ-
গনহত্যা সংক্রান্ত জাতিসংঘ ঘোষনা

রেজুলেশনের ২৬০(৩) ধারার অনুচ্ছেদ ২ এ নির্ধারন করা হয়েছে , শুধু হত্যা নয় আরো কিছু অপরাধ গনহত্যা হিসেবে গন্য হবে —

১।পরিকল্পিত ভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠিকে নির্মুল করার জন্য
তাদের সদস্যদেরকে হত্যা বা নিশ্চিহ্নকরন
২।একই উদ্দেশ্যে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিসাধন
৩।একটি জাতি বা গোষ্ঠিকে নির্মুল করার উদ্দেশে এমন পরিবেশ
সৃষ্টি করা যাতে তারা সম্পুর্ন বা আংশিক ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে
যায়
৪।এমন পরিবেশ তৈরী করা যাতে একটি জাতি বা গোষ্ঠীর
জীবনধারন কষ্টসাধ্য , সেই সংগে জন্মপ্রতিরোধ করে জীবনের
চাকা থামিয়ে দেয়া হয়
৫।একটি জাতি বা গোষ্ঠি শিশু সদস্যদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে
তাদের জন্ম পরিচয় ও জাতিস্বত্বা মুছে ফেলা ।

গনহত্যার সংজ্ঞা নির্ধারনের পর ধারা ৩ এ গনহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধ সমুহ ও চিহ্নিত করা হয়েছে

১। গনহত্যা চালানো
২।গনহত্যা চালানোর ষড়যন্ত্র/পরিকল্পনা করা
৩। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে গনহত্যা উস্কে দেয়া
৪।গনহত্যা চালানোর চেষ্টা করা
৫।গনহত্যায় যে কোন প্রকারে সহযোগী হওয়া ও সমর্থন করা

ধারা ৩ এর পর ধারা ৪ এ বলা হয়েছে–
উপরোক্ত যে কোনো একটি অপরাধেই, অপরাধী যুদ্বাপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে- তা সে সাংবিধানিক সরকার, সরকারের আজ্ঞাবাহী কর্মচারী, কোন দল কিংবা একক কোনো ব্যক্তি ই হোক ।

ধারা ৭ এ আবার স্পষ্ট করে বলা হয়েছে –
ধারা ৩ এ বর্নিত অপরাধ সমুহ কোনো ভাবেই রাজনৈতিক অপরাধ বলে গন্য হবেনা ।
বাকী সব কিছু বাদ দিচ্ছি, ধারা ৩ এর ৫ নম্বর উপধারা কি বলে? গনহত্যায় সহযোগীতা করা কিংবা যে কোনো ভাবে সমর্থন জানানো ও যুদ্ধাপরাধ ।


২৫ শে মার্চ রাত থেকে বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কি কাজ করছিল? পাকিস্তান সেনাবাহিনী কি গনহত্যা চালাচ্ছিলোনা? ২৫ শে মার্চ রাতে শুধু মাত্র ঢাকাতেই কয় হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিলো পাকবাহিনী?

২৫ শে মার্চের পর থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে কারা পাকবাহিনীকে সমর্থন জানিয়েছিলো? পাকবাহিনীকে সমর্থন জানিয়ে গোলাম আজম-নিজামীদের শত শত বিবৃতি আছে । ১৯৭১ এর মে মাসে খুলনায় জামায়াতের ৯৬ সদস্য নিয়ে যে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয় সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে সেই বাহিনী টিক্কা খানের সামরিক অধ্যাদেশ বলে নিয়মিত বাহিনীর সহযোগী হিসেবে নথিবদ্ধ হয় । এরা সেনাবাহিনীর মতোই বেতনভুক্ত ছিলো । রাজাকার ছাড়া আলবদর ও আলশামস নামে বাহিনীগুলো গঠিত হয় এগুলোর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কারা ছিলো?
রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী তৈরী হয়েছিলো পাকবাহিনীর সহযোগীতা করার জন্য । পাকবাহিনী নয় মাস জুড়ে গনহত্যা চালিয়েছিলো । সুতরাং পাকবাহিনী যদি গনহত্যার জন্য দায়ী হয় তাহলে এদের সহযোগী বাহিনী সমুহ এবং এইসব বাহিনীতে যুক্ত জামাতের নেতৃবৃন্দ সেই দায় এড়াবে কি করে?

দায় এড়াতে হলে তাদেরকে প্রমান করতে হবে- যে ২৫ মার্চ রাত থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকৃত ভুখন্ডে পাকিস্তান আর্মি কোন গনহত্যা চালায়নি । সংখ্যাটা ৩০ লক্ষ না হয়ে ৩০ হাজার কিংবা ৩ হাজার ও যদি হয়- সেটা গনহত্যা হবে,গনহত্যা হলে যুদ্ধাপরাধ হবে,যুদ্ধাপরাধ হলে পাকিস্তান আর্মি ও তার সহযোগী ও সমর্থক জামাত ও যুদ্ধাপরাধী বলেই বিবেচিত হবে ।
এবার দেখা যাক, নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য জামায়াত যে সব যুক্তি দেখায় সেগুলোর অসারতাঃ

১। জামায়াত ইদানিং বলছে, শেখ মুজিব যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে হস্তান্তর করেছিলেন শিমলা চুক্তির আওতায় । সুতরাং ঐ ১৯৫ জন্য ছাড়া আর কেউ যুদ্ধাপরাধী নয় ।–

হাস্যকর যুক্তি । ঐ ১৯৫জন পাকিস্তানী সৈন্য এতোবড় হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলো? ১৬ ডিসেম্বরে আত্নসমর্পন করা ৯৩,০০০ পাক আর্মি তাহলে নির্দোষ ছিলো?
বস্তুতঃ এই ১৯৫ ছিলো একটা স্মারক সংখ্যা মাত্র । ১৬ ডিসেম্বরের পর পাকিস্তান সরকার তার সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে নিলেও রাজাকার আল বদরদের ফিরিয়ে নেয়ার কোন চুক্তি হয়নি । সুতরাং ঐ চুক্তির আশ্রয়ে জামাতীদের বাঁচার সুযোগ নেই ।
এখানে আরো বলা যেতে পারে, শেখ মুজিবের সকল সিদ্ধান্তই ধ্রুবক নয় । শেখ মুজিব যদি দালালদের ক্ষমা করেও থাকেন তাহলে ও সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হতে পারে, কারন ধর্মনিরপেক্ষতা,সমাজতন্ত্র,বাকশালের মতো সিদ্ধান্ত যদি বাতিল হতে পারে তাহলে দালাল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল হতে আপত্তি কেনো?
যে শেখ মুজিবের রাজনীতির চরম বিরোধী জামাত,নিজেদের জান বাঁচানোর সেই শেখ মুজিবের দোহাই দেয়া জামাতী রাজনীতির দৈন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয় ।

২। জামাতীরা বলে, তারা যদি আসলেই অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে গত ৩৬ বছরে কেনো কেউ তাদের বিচার করলোনা? এই বিচার না করাই নাকি তাদের নিরপরাধের প্রমান?

বিচার না হলেই কি অপরাধি নির্দোষ প্রমানিত হয়ে যায়? পৃথিবীতে বহু হত্যা,বহু অপ্রাধের বিচার হয়নি । কারবালার মর্মান্তিক হত্যাকান্ড ঘটালো যে ইয়াজিদ তার ও তো বিচার হয়নি,বিচার হয়নি চেংগিস,হালাকু খানদের,বিচার হয়নি জালিওয়ানোয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের । এইসব বিচার না হওয়ার পেছনে অনেক রাজনীতি আছে । বিচার হয়নি বলেই ইতিহাস ইয়াজিদকে নির্দোষ ঘোষনা করেনি,বিচার হয়নি বলেই জামাতীরা নিজেদের নির্দোষ দাবী করতে পারেনা ।

৩। গোলাম আজমের নাগরিকত্ব মামলার রায়কে উদাহরন হিসেবে টেনে জামাতীরা নিজদের নির্দোষ প্রমান করতে চায়—

জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার আইন অনুযায়ী(ধারা ১৩) জন্মসুত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব বাতিল কিংবা কাউকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া বা দেশে ঢুকতে বাধা দেয়া যায়না । আদালতের রায়ে গোলাম আজম নাগরিকত্ব পেয়েছে কারন মামলা ছিলো নাগরিকত্বের,যুদ্ধাপরাধের নয় । এই মামলার রায় কোনভাবেই প্রমান করে না যে সে যুদ্ধাপরাধী নয় । বরং এই মামলার রায় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার করাকে আরো সহজতর করেছে ,কারন এখন সে বাংলাদেশের নাগরিক । বাংলাদেশ রাষ্ট্র চাইলেই তার নাগরিকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিচার কার্য সমাপদন করতে পারে -এর জন্য কোন কুটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই ।



জামাতী সহ জামাতীদের বাঁচানোর জন্য কেউ কেউ দাবী তুলছেন প্রচলিত আইনে বিচার করার । পৃথিবীর কোথাও গনহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রচলিত আইনে হয়নি । নুরেম্বার্গ ট্রায়াল কিংবা বসনিয়া গনহত্যার জন্য সার্বিয়ান জেনারেলদের বিচার -সবই বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে হয়েছে ।

তাই প্রচলিত আইনে বিচার করা একটা চরম ফাঁকিবাজী মাত্র । এর মাধ্যমে জনগনের চোখে ধুলো দেবার আয়োজন করা হবে । তাই সচেতন সকলকে দাবী উত্থাপন করতে হবে বিশেষ ট্রাইবুন্যালের । রাষ্ট্র কে নিজে বাদী হতে হবে কারন জামাতীদের অপরাধ ছিলো স্বয়ং বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ।


আর যুদ্ধাপরাধীর বিচার করাই শেষ কথা নয়, বন্ধ করতে হবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি । যেহেতু নিরংকুশ ভাবে সকল ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোই এদেশের জন্মযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলো সেহেতু এ দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চলতে পারেনা । যে রাজনীতি রাষ্ট্রের জন্মের বিরোধীতা করেছিলো,সেই রাজনীতি রাষ্ট্রের কল্যান কামনা করবে-এমোন ইউটোপিয়া থেকে বের হয়ে আসা খুব জরুরী

লেখাটি মুক্তমনা থেকে নেয়া।
লেখক হাসান মোরশেদ
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×