somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রামীণ অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ভুমিকা

০২ রা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জি এস এস ফিচারঃ নারী সমাজ জাতীয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরুষের পাশাপাশি নারী সমাজের ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় সাত'শ কোটি লোকের অর্ধেক নারী। সমাজ ও সভ্যতার উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে নারীর ভূমিকা অগ্রগন্য। সন্তান প্রতিপালন ,সন্তানের জীবন গঠন নারীর প্রথম ও প্রধান কাজ হলেও জীবনের অনেক ক্ষেত্রে নারীর করনীয় অনেক কিছুই রয়েছে। অতীতের মত নারী সমাজ আর পিছিয়ে নেই। যুগের বির্বতনে জীবনের বিভিন্ন ত্রে প্রসারিত হয়েছে। সে সাথে পরিবর্তিত হয়েছে মানুষের জীবনের গতি,বেড়েছে কাজ,আর পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীর কাজও বেড়েছে। তাই তো বিদ্রোহকবি কাজী নজরুল ইসলাম অকুন্ঠচিত্তে ঘোষনা করেছেন-
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে,অর্ধেক তার নর।”
বাংলাদেশে ৮৬ হাজারেরও অধিক গ্রাম রয়েছে। দেশের ৮০ ভাগ জনগনই গ্রামে বসবাস করে। পনের কোটি জনগনের অর্ধেক নারী। আবার এ অর্ধেক নারীর সিংহ ভাগই বসবাস করে গ্রামে। যার ফলশ্রুতিতে গ্রামীণ অর্থনীতিক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গ্রাম বলতে চোখের সামনে চিরাচরিতভাবে যেটা ফুটে উঠে সেটা হচ্ছে অঁজপাড়া গাঁ। যেখানে বিদ্যুৎ সুবিধা নেই,যোগাযোগ ব্যাবস্থা বলতে গরুর গাড়ি,নৌকা ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবে বর্তমানে বাংলাদেশের গ্রামীণ অবস্থা ভিন্ন। গ্রামে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। যার সিংহভাগ অবদান নারীর। গ্রামীণ নারীরা এখনও উচ্চশিক্ষা বা সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা বঞ্চিত এই নারীরা কুটির শিল্প,বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ,সেলাই প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সম হয়েছে। গ্রামীণ নারীরা সংসারের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করার পরও বাড়তি আয় উপার্জনের জন্য ,আর্থিক সচ্ছলতার জন্য, ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার খরচ মেটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করে থাকে। নিম্নে সে সম্পর্কে সংপ্তি আলোকপাত করা হল ঃ
১.বাঁশ ও বেতের কাজ ঃ
গ্রামীণ অর্থনীতির উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বাঁশ ও বেতের কাজ। গ্রামীণ মহিলারা বেতের সাহায্যে পাঁটি,জায়নামায,ঝুড়ি ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। বাঁশের সাহায্যে মুরগির খোপরি,ঘরের বেড়া ইত্যাদি তৈরি করে,যা স্থানীয় বাজারে ও পাড়া প্রতিবেশির কাছে বিক্রি করে আর্থিক প্রয়োজন মেটাই।
২. প্রোলট্রি শিল্প ঃ
গ্রামীণ নারীরা ছোটা আকারে প্রোলট্রি শিল্পের কাজ করে থাকে। দেশি ও বিদেশি জাতের স্বল্প সংখ্যক মুরগি লালন-পালন করে তারা। বিভিন্ন মুরগি ও মুরগির ডিম বিক্রি করে তারা টাকা আয় করে। প্রোলট্রি শিল্পের বিকাশের ফলে উদ্ভিদ আমিষের প্রয়োজন মিটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সম হয়েছে।
৩. মৃৎ শিল্প ঃ
গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাচীনকাল থেকে সর্বাধিক অবদান রাকারী শিল্প হল মৃৎ শিল্প। শুধুমাত্র মৃৎ শিল্পের উপর নির্ভর করে অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মৃৎ শিল্পের অধিকাংশ শ্রমিকই নারী। মাটি পোড়ানো,কাঠামো তৈরি,নকশা করা,রোদে শুকানো ইত্যাদি সব কাজই নারীর সুনিপুন হাতে সাধিত হয়।
৪.আঙ্গিনায় শাক-সবজি চাষ ঃ
বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক ভূমিহীন। চাষাবাদের নিজস্ব জমি নেই। কৃষানীরা বাড়ির আশে-পাশে বিভিন্ন শাক-সবজি,তরি-তরকারির এবং দেশীয় বিভিন্ন ফল মুলের চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির অভাব পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
৫.মৎস্য চাষ ঃ
গ্রামের অনেক নারী শাক-সবজির পাশাপাশি মৎস্য চাষ করে। মৎস্য চাষ ছোট হলেও অনেক সাফল্য ইতিমধ্যে অর্জিত হয়েছে। পুকুরে তিন মাসের মধ্যে বড় হয় এরকম মাছের চাষ করে,পারিবারিক চাহিদা পূরণ করছে।
৬. গবাদিপশু পালন ঃ
গবাদিপশু পালন গ্রামীণ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানকারী একটি কাজ। গ্রামের এমন কোন বাড়ি নেই, যাদের দুই- চারটি গরু ছাগল থাকে না। গরু দিয়ে চাষাবাদের পাশাপাশি দুধ ও গরুর বাছুর বিক্রির মাধ্যমে সংসারের প্রায়োজনীয় চাহিদা পুরন করে। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতীয় ছাগল পালন অত্যন্ত লাভ জনক বলে বিবেচিত। কারণ এ জাতীয় ছাগল বছরে একাধিক বাচ্চা দেয়। যার ফলে নারীরা পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সম হচ্ছে।
৭. সূচিকর্ম ঃ
প্রাচীনকাল থেকে বাঙ্গালী নারীরা স্বভাব বসত ভাবে যে কাজটা করে তা হল সূচিকর্ম। নারীরা ঘরে বসে অবসর সময়ে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে নকশী কাঁথা, তোষক ইত্যাদি তৈরি করে। নকশী কাঁথার মধ্যে নারীরা বিভিন্ন ফুল ,পাতা,পাখি,পহেলা বৈশাক,বিভিন্ন উৎসব,গ্রামীণ নারীজীবনের সুখ-দু:খ ,হাসি-কান্না,পাওয়া-না পাওয়া ইত্যাদি মনের মাধুরী মিশিয়ে আপনমনে কারুকার্য ফুটিয়ে তোলে নান্দনিক সূচিকর্মের মাধ্যমে। গ্রামীণ নারীদের সূচিকর্ম বর্তমানে দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশে স্থান করে নিতে সম হয়েছে। এছাড়া গ্রামীণ নারীদের হাতের বিভিন্ন কারুকার্য দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা জাগাতে সম হয়েছে।
গ্রামীণ বিশাল জনগোষ্ঠির মধ্যে নারীদের এই অবদান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করলেও এর কোন স্বীকৃতি নেই,নেই সরকারী পৃষ্টপোষকতা,তা না হলে গ্রামীণ নারীর এ অবদান আরো ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সম হতো ,যা দেশের অর্থনীতিকে অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যেতে সম হতো। নারীদের এই অর্থনৈতিক সংগ্রাম শুরু অত্যন্ত ুদ্র পরিসরে। যার পেছনে রয়েছে উপযুক্ত প্রশিনের অভাব,পর্যাপ্ত মুলধনের অভাব,সঠিক পুষ্ঠপোষকতার অভাব,দৃষ্টিভঙ্গির নেতিবাচকতা,পারিবারিক অসহযোগিতা,নারীদের বন্দীদশা সবকিছু মিলিয়ে নারীদের এই অর্থনৈতিক সংগ্রাম যে তিমিরে শুরু সে তিমিরে রয়ে যাচ্ছে। ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কি:মি:র এই দেশে নারীদের এই অর্থনৈতিক সংগ্রাম সমুদ্রে ঢিল ছোড়ার মতো। গ্রামীণ নারীদের এই অর্থনৈতিক পশ্চাদপতার মূলকারণ সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সঠিক পরিকল্পনার অভাব। পশ্চিম পাকিস্তানে যে রকম কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার ভিত্তিতে উন্নয়নের চিন্তা করা হত অদ্যবধি বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের বর্তমান প্রোপটেও সেই পরিকল্পনার ভিত্তিতে উন্নয়নের চিন্তা করা হচ্ছে। যার সিংহভাগ পরিকল্পনা প্রনয়ন,উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন শহর কেন্দ্রীক। শহর কেন্দ্রীক উন্নয়ন পরিকল্পনার কারনে শহরে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হলেও গ্রামীণ নারীরা থেকে যাচ্ছে পশ্চাদপ। যার কারনে গ্রামীণ অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন নাজুক হয়ে পড়ছে। জাতিকে যেমন সাইকেল হিসাবে বিবেচনা করে একদিকে পুরুষ অন্যদিকে নারী সেভাবে গোটা দেশটাকে সাইকেল হিসাবে চিন্তা করলে একদিকে শহর অন্যদিকে গ্রাম। আর গ্রাম মানেই পুরুষের চেয়েও নারীর সংখ্যা বেশি। আর একটা দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের পূর্বশর্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়ন করা। যার অধিকাংশই পূরণ হবে গ্রামীণ নারীদের উপযুক্ত প্রশিণ,পর্যাপ্ত মূলধণ,সার্বিক সহযোগিতা,সহজশর্তে ঋণ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, ঋণের সুদ যথাসম্ভব কমিয়ে আনা,কারিগরী শিার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিার ব্যাবস্থা করা,নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরন এবং সঠিক তদারকির মাধ্যমে গ্রামের প্রতিটি ঘরের নারীদের যদি অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী করা যায়, তাহলে গোটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতে খুব বেশি দেরী হবে না। আর তা যদি করা না যায় তাহলে রবীন্দ্রনাথের সেই উক্তি সত্য বলে প্রমাণিত হবে
“হে বঙ্গ জননী ,
সারে সাত কোটি বাঙ্গালীরে
রেখেছ বাঙ্গালী করে
মানুষ করনি”


সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×