প্রথম দৃশ্য
মাইজদী বাজারে এসে দাঁড়ালাম আমি। তিনিও এসে দাঁড়ালেন। তাঁর সাথে একটি জাতীয় দৈনিকের পাঠক সংগঠনের বৈঠকে দেখা হয়েছিলো এর আগে। কথা হয়নি।
টেম্পুতে উঠলাম আমরা। আমি টেম্পুর পিছনে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছি। তিনি ভেতরে চন্দ্রের সাথে কথা বলছিলেন। চন্দ্র আমার অনুজপ্রতীম। সংস্কৃতিকর্মে আন্তরিক সে। চন্দ্র আর তিনি একসঙ্গে আবৃত্তি সংগঠন কবিতাঙ্গনÑএ কাজ করতেন। টেম্পুতে একবারও তিনি আমার দিকে খেয়াল করলেন না। দু’জনে কিন্তু নামলাম নোয়াখালী জিলা স্কুল গেইটে। সেখানে আরো কয়েকজন এসে দাঁড়িয়ে আছে। অ্যাসিডদ্বগ্ধদের জন্য তহবিল গঠনে নোয়াখালীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা অভিযান চালাই।
একসাথে সবাই নোয়াখালী জিলা স্কুলে অর্থ তহবিলে নেমে গেলাম। ভেতরে ভেতরে সেদিন আমি খুব গর্বিত হয়েছিলাম, আমার স্কুলে এসে। যখন কাসে কাসে ব্রিফিং দিচ্ছি, জড়তা এসে যাচ্ছিল আমার কণ্ঠে। কেউ কেউ আড়ালে এ নিয়ে হাসছিলো। তখন পিছন থেকে তিনি আমাকে সাহস দিয়ে যাচ্ছিলেন।
দ্বিতীয় দৃশ্য
সময়টা মনে নেই।
সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাত সেদিন। নোয়াখালী কবিতা উৎসব আয়োজন প্রস্তুতি চলছিলো টাউন হলে। কথা হচ্ছিলো। হাসাহাসি হচ্ছিলো। কাজও চলছে পুরোদমে। এরই মধ্যে হলের মধ্যে একজন আসলেন। আমাকে বাইরে ডাকলেন। আমি গেলাম তার সাথে। আমার হাতে একটি প্যাকেট ধরিয়ে বললো, ‘তোমার আপু তোমার জন্য পাঠিয়েছে।’
আমি প্যাকেটটি হাতে নিলাম। ভেতরে চলে গেলাম। সবাই প্যাকেটটি হাতে নিয়ে খুলে দেখলো ভেতরে একটি পাঞ্জাবি। শুভ্র-সাদা রঙে পাঞ্জাবি গোলাপি রঙের অণু কাজ। সৌকর্যময় এই পাঞ্জাবিটি পরে আমি পরদিন কবিতা উৎসব উদ্যাপন করলাম। পাঞ্জাবির ভেতর দিয়ে আবিস্কার করলাম তাঁর অসম্ভব স্নেহ আর ভালোবাসা।
পাঞ্জাবি আমার ভীষণ প্রিয় একটি পোষাক। যখন যেখানে যাই একটি পাঞ্জাবি অন্তত আমি কিনি। কিংবা কেউ একটি পাঞ্জাবি উপহার দিলে খুশি হই। আমার প্রথম গল্প মায়াকানন এ পাঞ্জাবি প্রসঙ্গ এসেছে। পাঠকমহলে আনন্দ দিয়েছে পাঞ্জাবি।
শেষ অংক
দুটো গল্প হলো। তার মধ্যে একজন মানুষের চিত্র ভাসছে চোখের সামনে। গল্প দুটোর চরিত্র কিন্তু একজনই। আড়াল থাকতে চান তিনি। মাঝে মাঝে আমি তাঁকে ‘সুচিত্রা সেন’ বলি। সুচিত্রা সেনের মতোই তিনিও আপন গৃহে চলে যান একটা সময়। সবকিছু থেকে দূরে রাখেন নিজেকে। গুটিয়ে নেন।
পরিচয় তাঁর সাথে আমার বেশিদিন নয়। কিন্তু সম্পর্কের দাবী আজন্ম। জীবনের বিষাদ, আনন্দ আর মহত্তম সময় তাঁর কাছেই আমার গচ্ছিত। অপুর দিদি দুর্গার মতো হয়তো তার কোলে-পিঠে মানুষ হইনি, তাঁর শাসন-আদর-স্নেহ-মমতায় পরিপূর্ণ হচ্ছি। অন্তরালে থেকে তিনি ছাপিয়ে দিলো আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।
আস্তে আস্তে তাঁর কাছে আমি কিংবা আমার কাছে তাঁর শারীরিক উপস্থিতি হারিয়ে গেলো ক্রমশঃ। এমনদিন ছিলো কেউ কাউকে না দেখে পারতাম না। অস্থির থাকতাম দেখার জন্য। সেই আমরা হারিয়ে গেলাম জীবনের সাদা অথবা রঙিণ সময় থেকে। মাঝে মাঝে বলাটা ঠিক হবে না, প্রায় সময় তার সাথে আমার খুনসুটি লাগতো। এখন তার কিছুই হয় না। জীবন বড়ো অদ্ভুত গান গায়!
এ লেখা আমার অপূর্ণ থেকে যাবে সবসময়। তাঁর অনিচ্ছার কারণে নামটি তার দেয়া হলো না।
জানি শুধু, বোনটি আমার, ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে চলে প্রতিদিন। ঠিক সাদা পাঞ্জাবির অণু গোলাপির মতো।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



