somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্ধুকে মনে পড়ে ...

০৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকে আমরা একসাথে বড় হয়েছি। একই পাড়ার ভেতর। এক সাথে খেলেছি। পড়ালেখা করেছি। এক সাথে হেসেছি। আর কেঁদেছি আড়ালে। সে পড়তো অন্য স্কুলে, আমি পড়তাম আরেকটি স্কুলে। কখনোই একই স্কুলে ছিলাম না আমরা। তারপরও সকাল-বিকাল দেখা হতো। মাঝে কিছু সময় কিছুটা যোগাযোগ বিছিন্ন ছিল, তখন আমরা চট্টগ্রাম ছিলাম ব’লে।

তাদের পরিবারের সাথে আমাদের পারিবারিক একটি বন্ধন ছিল, কী সামাজিক, কী আত্মীয়তায়। যখন ইচ্ছে ছুটে যেতাম তাদের বাসায়। পড়ালেখার জন্য হোক, আর অন্য যে কোন কারণেই হোক। এ আসা-যাওয়ায় কোন সীমাবদ্ধতা ছিল না। কোন বাধা ছিল না। তার মা আমাকে খুব ভালোবাসতেন।

কথা কম বলতো। আর যখন কথা বলতো, কথাগুলো হতো নরম আর মসৃণ। একটা সরলরৈখিক ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে চলতো সে। দেখতো নিষ্পাপ, ঠিক পুতুলের মতো সুন্দর।

যার কথা বলছি তার নাম সুমী। মা-বাবার খুব আদুরে ছোট মেয়ে সে।

সুমীর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর কয়েকবারই তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। দেথে মনে হতো বেশ সুখে আছে। তার একটি ছেলেও হল। ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে-আসছে। দেখা হতো, কথা হতো।

দুপুর বেলা সেদিন, আমি স্বভাবগতভাবেই আমি হাঁটছি মাস্টার পাড়ায়। প্রাইমের একটি অ্যাম্বুলেন্স মাস্টার পাড়া থেকে দ্রুতগতিতে বের হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর দেখলাম সুমীদের বাসার কিছু মানুষ আছে। কিছু বুঝে উঠতে পারি নি। সুমীর বোনের স্বামী প্রাইমের প্রকল্প প্রকৌশলী। হয়তো অ্যাম্বুলেন্সে করে তারা কোথাও যাচ্ছে। আর অনেকদিন ধরে শুনছিলাম সুমীর মা অসুস্থ। এইরকম ভাবনার মধ্যে ছিল আমার সেদিন।

পরের দিন সকালে নাজমুল (হুদা) পাপ্পু ভাই ফোন করেছে। সুমীর ফুফাতো ভাই তিনি। জিগ্যেস করলেন, তুমি কিছু জানো নাকি! আমি বললাম, কই কিছু জানি না। তারপর তিনি জানালেন খবরটা।

দুইদিন আগে খুব বিষ্টি হয়েছে। রোদের কোন ঝলক ছিল না। বাচ্চার বয়স তখন দেড়মাস কী দু’মাস। বাচ্চার অনেক কাপড়। শুকানো জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। রান্নাঘরে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে কাপড় শুকাতে দেওয়া হলো। সেখান থেকে শুকনা কাপড় আনতে গিয়ে সুমীর গায়ে আগুন লেগে যায়। এ আগুন তার পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সে চিৎকার করে, কিন্তু প্রথমে কারোর কানে ঠিক পৌঁছে নি। সুমী তেলাপোকা-কে ভয় করতো। সবাই ভেবেছিল হয়তো তেলাপোকা দেখে ভয় পাচ্ছে। ক্রমাগত আর উচ্চস্বরে চিৎকারে তার মা রান্নাঘরে গিয়ে দেখে সুমী অগ্নিদ্বগ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। তারপর তাকে প্রাইম হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখান থেকে রাজধানীর সিটি হসপিটালে নিয়ে আসা হয়।

এ খবরটি শুনে তো আমি বাকরুদ্ধ। কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি। হাত-পা সব ঠাণ্ডা হয়ে গেল। গা-টা ছমছম করে উঠল। নিজেকে স্থির রাখতে পারছিলাম না কোনভাবেই।

পাপ্পু ভাই জানালেন, ডাক্তার ৭২ ঘণ্টার সময় দিয়েছে। এর মধ্যে ১২ ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। এবি পজিটিভ। খুব জরুরি।

রক্তের জন্য ছুটোছুটি। আমি আর পাপ্পু ভাই সব জায়গায় খোঁজ লাগালাম। রেডিও-তে বিজ্ঞাপন দেওয়া হল। পত্রিকায় জানানো হলো। ব্লগে লিখতাম তখন। সেখানেও জানানো হল। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলাম না। সাড়া পাওয়া গেল না খুব একটা। রক্তের অভাব সেই সময় টের পেলাম। যদিও কিছু জায়গা জায়গা অপ্রতুলভাবে পাওয়া গেল।

৭২ ঘণ্টা পার হয়। আবার নতুন করে সময় বেঁধে দেওয়া। টান টান উত্তেজনা। আস্তে আস্তে সুমীর বেঁচে ওঠার আশা কিছুটা জ্বলে উঠে। তার মধ্যে বেঁচে উঠার সাহস ফিরে আসে। দেড় মাসের মাথায় ২০০৮ সালের ১৪ জুলাই ভোরবেলায় সুমী চলে যায়, না ফেরার দেশে। সব আশা-সব প্রচেষ্টা নিভে যায়।

আমরা সুমী-কে বাঁচিয়ে রাখতে পারি নি।

সুমী সিটি হসপিটালে আইসিইউ-তে ছিল। আম্মু দেখতে গিয়েছিল। বন্ধুরা গিয়েছিল। অনেকেই গিয়েছিল সেখানে। কিন্তু কেউই দেখতে পারে নি তাকে। আর আমি তো যাইনি একবারও। কেনো যাইনি এ প্রসঙ্গ যতোটা না কুঁকড়ে খায় আজ, তার চেয়ে বড় কষ্ট হয়, হাহাকার হয়, ব্যথিত হই, তার পাশে থাকা হলো না ভেবে।

খুব মনে পড়ে সুমী-কে। ভীষণভাবে ধরা দেয় সে প্রতি মুহূর্ত।
নদীর পাড়ের নির্জনতায় পশ্চিম আকাশে ডুবে থাকা চাঁদের ভেতর এখনো তাকে খুঁজি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×