somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন দিনমজুর পিতার হোম কোয়ারেন্টিন। (ছোট গল্প)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফাঁকা শহরের অলিগলি আজকাল ঝিমিয়ে পড়েছে। চারদিকে সুনসান নীরবতা। থমকে গেছে পৃথিবী থমকে গেছে জনপদ। কোথাও নেই কোন সরব হাঙামা। এমন শান্ত শহর আর কখনো দেখেনি হারুন। সে আজ সরকারের নির্দেশ একটুও অমান্য করেনি। মহল্লার আট দশজন সুখী মানুষের মত আরাম আয়েশে ঘরে বসে সময় কাটানোর স্বপ্ন লালন করেই ঊনিশ বছর আগে রিক্সার পেন্ডেলে হাত দিয়েছিলেন সে। কিন্তু এতবছর ধরে কত ঈদ উৎসব আর রাসের মেলা চলে গেলো ধা ধা করে তবুও সুস্থ থাকাকালীন জীবনে একদিনও কর্মবিরতি পায়নি সে। গতকাল হোম কোয়ারেন্টিনে থাকায় আজ আর সকালে পান্তা ভাতের নাস্তাও জোটেনি তাঁর। যে জীবন যুদ্ধে বাঁচে যুদ্ধে মরে সে জীবন কী আর কোনোদিন নাস্তার পরোয়া করে! কিন্তু দুই সন্তান আর স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আর স্থির থাকতে পারেনি সে। লুঙ্গির গিটে পনেরো টাকাই ছিলো তার শেষ সম্বল। চারদিকে দোকানপাট বন্ধ থাকায় অনেক দূর হেঁটে গিয়ে স্ত্রী সন্তানের মুখে রুটি আর পানি দিতে সক্ষম হলো সে। রাস্তায় দেখে এলো নিরীহ দিনমজুরের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ আর সেনা টহল। করোনা আতঙ্কিত এই শহরে হারুনের মত মৃত্যুর ভয় নেই অনেক ক্ষুদার্ত দিনমজুরের। যারা দিনে এনে দিনে খায়।

হারুনের মাথায় শুধু ঘুরপাক করছে দুপুরের খাবারের চিন্তা। বড় ছেলে প্রশ্ন করে বাবা, দুপুরে কী খাবো? ঘরে বসে না খেয়ে মানুষ কি বাঁচতে পারে? কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ মাথায় গামছাটি বেঁধে নিলেন হারুন। মহামারিতে যে মৃত্যু হতে বাঁচার জন্য সরকার সবাইকে ঘরে থাকতে নির্দেশ দিলেন অথচ না খেয়ে সে মৃত্যু হতে বাঁচতেই আজ হারুন ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়লেন। ক্ষুদার্ত হারুনের কাছে রাস্তা হতে ঘরই এখন বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। তাই আরামের বিছানা হারাম করে জেনেশুনে পুলিশের লাঠিচার্জ খেতেই নেমে পড়লেন সে। লোক শূন্য লোকালয়ে ১ কেজি চাল আর তরকারি টাকা রোজগার করতেই বেলা ২ টা পার হয়ে গেলো। চাল আর সবজি রিক্সার হুডের নিচে রেখে ছোট একটি মাছ কেনার আশায় আরো ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করলো সে। ছোট ছেলে রাহাত মাছ ছাড়া ভাত মুখে নেয় না। কিন্তু রাস্তায় মানুষের আনাগোনা না থাকায় ঘড়ির সেকেন্ডের কাটার সাথে তালমিলিয়ে হারুনের মুখমন্ডলে মেঘের ছায়া ঘনীভূত হচ্ছে। হঠাৎ সেনা বহর দেখে রিক্সা নিয়ে ছোট গলিতে পালাতে গেলো সে। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! ছোট গলির মুখেই ছিলো পুলিশ ফোর্স। ওরা কিছু জিজ্ঞেস না করেই এলোপাতাড়ি লাঠি চার্জ শুরু করলো তাঁর উপর। পুলিশের কেউ কেউ মাস্কের কথা জানতে চাইলেও পেটে ভাত আছে কিনা তা জানার সময় ছিলোনা কারো। লাঠিচার্জের পর দশবার কান ধরিয়ে ছেড়েছেন তাকে। তারপর রিক্সার বাঁকা হওয়া সামনের চাকাটি শূন্য করে তুলে টেনে টেনে গ্যারেজের দিকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পা বাড়ালেন সে।

ঘরে ঢুকার আগে মাথার গামছা দিয়ে শরীর ঢেকে নিলেন হারুন। তারপর চাল ডাল তুলে দিলেন স্ত্রীর হাতে। কিন্তু কেউই জানতে চায়নি যে মাথার গামছাটি পিঠে এলো কী করে? সারাদিন উপবাস থাকায় দ্রুত খেতে বসলেন সবাই। তবে রাহাত এখনো মাছ ছাড়া ভাত খাবেনা বলে কাঁদছে। সারাদিন না খেয়ে থাকায় রাহাতের শরীরের তাপমাত্রা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অসহায় পিতা জানালার ফাঁকে তাকিয়ে দেখলো একটি মানুষও নেই রাস্তায়। জনশূন্য এই শহরে খাঁচার বন্ধি পাখিরা আজ মুক্ত বিহঙ্গে প্রানখুলে উড়ছে দিক হতে দিগন্তে আর মানুষগুলো বন্দী খাঁচার পাখির মত ঘরে ঘরে বন্দী হয়ে আছে। মসজিদে মসজিদে মাইকিংএ ঘোষণা করা হচ্ছে যে, আগামী ১৪ দিন সবাই ঘরে থাকুন। রাস্তায় কারফিউ চলছে। ধীরে ধীরে হারুনের শরীরের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৪৭
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×