somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরাপত্তাহীনতার গল্প।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব ছোট বেলায় বাবার সাথে একবার রথমেলায় গিয়েছিলাম।

কুষ্টিয়াতে বেশ বড় মেলা বসে রথযাত্রা উপলক্ষে, বিশেষ করে উল্টো রথে। পুরনো একটা চায়না ফনিক্স সাইকেলে বসে বাবার সাথে আবেগে শিহরিত হয়ে এক সময় পৌছে গেলাম রথ মেলায়।

হাজার লোকের সমাবেশে ঘুরে ঘুরে এটা ওটা কিনে দিচ্ছিল বাবা আমি কেবল হাতে ধরা ব্যাগে খেলনা, ভুট্টার খই, হাতি ঘোড়া দিয়ে বানানো ছাঁচ মিঠাই গুলো রাখছিলাম।

আকাশ জুড়ে ঘন কালো মেঘ, যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে, হঠাৎ বাবা আমাকে সাইকেলটা ধরিয়ে দিয়ে বলল "তুই একটু দাড়া আমি আসছি"।

বাধ্য ছেলের মত আমি সাইকেলটা ধরে দাড়ালাম, বাবা সেই যে গেলেন ফিরে আসার নাম নেই, হঠাৎ করে বড় বড় ফোটায় বৃষ্টি পড়তে আরম্ভ করল, যে যার মত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে পড়লো, আমি ছোট মানুষ সাইকেলটা নিয়ে ভিড়ের মধ্যে নড়তেও পারছিলামনা, কেবল সংকিত হচ্ছিলাম আমি বোধ হয় হারিয়ে গেছি। এখনই কোন ছেলেধরা আমাকে এসে ধরে নিয়ে যাবে।

জীবনে প্রথমবার আমি নিরাপত্তাহীনতা টের পেয়ে ভয়ে কাঁদতে থাকলাম বাবা না আসা অবধি।

সৈয়দপুর থেকে রাতের ট্রেনে ভেড়ামারা আসছি পরিবার সহ, জানালার পাশে বসে চুঁরিয়ে যাওয়া আলোয় বাইরের দৃষ্য উপভোগ করছি। রাতের এই ট্রেন গুলোতে যাত্রীদের ভীড় থাকেনা খুব একটা তাই জার্নিটা ভিষন উপভোগ্য হয়।
দিনাজপুর স্টেশন ছেড়ে ট্রেনটা এগিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ ফাঁকা মাঠের মধ্যে বলা নেই কওয়া নেই থেমে গেল ট্রেনটা, বাসের মত ট্রেনের ড্রাইভারকে কাছে পাওয়া যায় না যে জানতে পারবো কি হলো।

যাত্রীরা এদিক ওদিক ইতি উতি করছে সবারই এক প্রশ্ন কি হলো কি হলো ?

হঠাৎ কে যেন সামনের বগী থেকে দৌড়ে এসে চিৎকার করে বলে উঠলো ট্রেনে ডাকাত পড়েছে।

চিৎকার চেচামেচি, কান্নাকাটি, মুল্যবান জিনিসপত্র লুকানোর চেষ্টা আরম্ভ হয়ে গেল সকলের মধ্যে।

পরিবার সহ সেই প্রথম আর জীবনে দ্বিতীয় বার সকল যাত্রীর সাথে আমি চরমভাবে নিরাপত্তাহীনতা কি জিনিস টের পেলাম।


কেরাণীন্জ থাকি, যায়গাটা খুব একটা ভালো না, রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে প্রায়শই সন্দেহজনক লোকের আনাগোনা চোখে পড়ে।

বিডিআর বিদ্রোহের ২য় দিন সকাল ১০টা, কেমন যেন থমথমে সকাল হঠাৎ বন্ধু হাসিবের ফোন আসল মোবাইলে, তার বাসা আমার বাসার চার পাচটা বিল্ডিং পরেই....হ্যালো বলতেই প্রবল উৎকন্ঠাই সে চাঁপা গলায় বলল "এই মাত্র আমার পাশের বিল্ডিং এ তিনজন কে কারা যেন জবাই করে রেখে গেছে"।

বিডিআর বিদ্রোহে ঢাকার আইনশৃংখলা ভেঙে পড়েছে, যে কোন সময় আমরাও আক্রান্ত হতে পারি ভেবে ৩য় বারের মত পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতা কাকে বলে টের পেলাম।

উপরের ৩টা ঘটনা আমার তখনই মনে পড়ে যখন পত্রিকায় কিংবা টিভিতে কোন সংখ্যা লঘু নির্যাতনের খবর দেখি। কষ্টে বুকটা ফেটে যায় সেই সব পরিবারের কথা ভেবে যারা সারাটা বছরই নিরাপত্তাহীনতায় কাটায়।

সমাজের সেই নরপশুগুলোকে রুখে দেবার এখনই সময়, আর সেটা আরম্ভ হোক এখন থেকেই।


নির্মলেন্দু গুনের একটা কবিতা দিয়ে শেষ করি....

`রাইতভর ঘুমাইতে পারি না,
ওরা আবার কহন আয়ে, কহন আয়ে।`

আর কান্দিস না মা, আমার কথা শোন
তুই তোর হাতের শাখা খুলে ফেল,
মুছে ফেল তোর সিথির সিদুর।
মা- কালীর শেষকৃত্য দেখে দেখে, শেষে
আমাদের শেষ কৃত্য ডেকে আনবি নাকি?
চল মা, তোর ভগবান পুড়ছে, পুড়ুক।

এই চন্দ্রমুগ্ধ মুর্খের উল্লাস থেমে গেলে
একাত্তরের মত আবারও আমরা
ফিরে আসবো আমাদের অগ্নি শুদ্ধ ঘরে
তখন তিনি ফিরিয়ে দেবেন তোর
শাঁখা- সিঁদুর, তোর প্রতিমার ছিন্নভিন্ন দেহ।
তোর ভগবান কি অথর্ব, অন্ধনাকি?

তবে তাই কর বাবা, এই যে আমি
বন্ধ করলাম আমার চোখ, তই ভেঙে দে
আমার শাঁখা, মুছে দে আমার সিঁদুর,
জ্বলে পুড়ে শুদ্ধ হোক আমার ঠাকুর।

"সুন্দরগন্জ কিংবা বাঁশখালীর গল্প"





১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×