গাড়ি স্টার্ট দিলাম। পুলিশের পিক-আপটার ঠিক পেছন পেছন যাচ্ছি। পার্থকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত রমনা থানায়। হেভি মেটাল হচ্ছে একটা গান হচ্ছে রেডিও-তে। ভালো লাগছে শুনতে। একটা সিগারেট ধরালাম। কোহিনূরের মা আর বাড়ির দারোয়ানটাকে কিছু টিপস দেয়া বাকি আছে। বিছানার নীচে ডিজিটাল ঘড়ি আর গাড়ির ব্রেক কেটে দেয়ার জন্য। সকালেই পাঠিয়ে দেবো কাউকে দিয়ে।
‘হোয়ার এভার আই মে রোম,’ মেটালিকার গানটার একটা লাইন। হ্যা, যেখানে খুশি যেতে পারি আমি, যা খুশি করতে পারি। মুক্ত স্বাধীন একজন মানুষ আমি, কোন পিছুটান নেই। বহুদিন পর দেশে ফিরেছি হারামজাদাটার সাথে হিসেব মেলানোর জন্য।
পার্থ আহমেদ নামক অহংকারি জীবটাকে কিছুটা হলেও যন্ত্রনা দিতে পেরেছি দেখে ভালো লাগছে। ফুরফুরে লাগছে। জীবন আসলেই খুব আনন্দময়। অন্তত এখন তাই মনে হচ্ছে।
রমনা থানার সামনে থেমেছে পিক-আপটা। হ্যান্ডকাফ পরানো উদ্ধত, ড্যাশিং, হার্টথ্রব পার্থ আহমেদ নেমে এসেছে। যদিও কেমন নেতিয়ে পড়েছে বেচারা। এখন তার পরিচয় মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশ অন্তত সাতদিনের জন্য রিমান্ডে নেবে। মেরে হাড়গোড় যেন গুড়ো করে দেয় সে জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করে রেখেছি আগে থেকেই।
সায়মাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল একদিন এই পার্থ। গ্ল্যামার ছিল, টাকা ছিল, পেশিশক্তি, সব ছিল ওর। আমার কিছুই ছিল না। মিথ্যে মামলায় জেল খাটিয়েছে তিনবছর। জেল থেকে বের হয়ে জানলাম সায়মা ভালো আছে তার তারকা স্বামীকে নিয়ে, একটা বাচ্চাও হয়েছে। তখন কিছু করার সামর্থ্য ছিল না, তাই চলে গেলাম বিদেশে। ট্যাক্সি চালালাম, গ্যাস স্টেশনে দিনরাত কাজ করলাম আর টাকা জমালাম। দেশে ফিরে এলাম সাতবছর পর।
মোবাইল ফোন বেজে উঠলো এই সময়। সাপ্তাহিক কালের খবরের পিয়াস ফোন করেছে।
‘কি রে পিয়াস? কি খবর?’
‘ভাই, গরম খবর। পার্থরে ধরছে। মাদক ব্যবসা করে শালা। এমন খবর আমি ছাপার আগে দৈনিক পত্রিকায় চলে আসবে, আফসোস।’
‘আফসোসের কিছু নাই পিয়াস। তোর সব বন্ধুদের জানিয়ে দে। ঠিকঠাক মতো যেন পত্রিকায় খবর যায়।’
‘জ্বি, বড়ভাই।’
‘তোর একাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে। চিন্তা করিস না।’
‘কি কন কন? চিন্তা করমু ক্যান।’
‘ঠিক আছে, রাখলাম।’
জানালা খুলে দিলাম। আজ পূর্নিমা। আকাশভরা জোছনা। বিশেষ একজনকে নিয়ে এই জোছনা দেখার সাধ ছিল। আজ নিজে নিজেই জোছনায় ঘুরে বেড়াবো, আমার কেউ নেই তাতে কি। আমি তো আছি।
আচ্ছা, কোন কিছুই কি আবার ফিরে আসে। যৌবনের সেই উত্তাল দিনগুলো, বন্ধুদের সাথে রাতের পর রাত বাইরে আড্ডা দেয়া, ঢাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, কিছুক্ষন পরপর চা খাওয়া, ভাগাভাগি করে সিগারেট। মায়ের বকুনি, বাবার শাসন। সকালের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে হাকিম চত্বরে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট একটা মেয়ের জন্য অপেক্ষা?
মনে হয় না। তবে আমি ফিরে এসেছি।
শেষ
আবার ফিরে আসে-১ View this link