somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমন শখ (শিমলা-মনালি) পর্ব-১

০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
অনেকদিন ধরে ভাবছিলাম লিখব, কিন্ত সময় হয়ে উঠছিল না। আজ লিখতে বসেই গেলাম। এর আগে পাঠ্য বইয়ের পড়ালেখার বাইরে কিছুই লিখা হয় নাই। যাই হােক আনাড়ী হাতের লিখা, ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। সারাফাত রাজ ভাই আমাকে সাহস না দিলে কখনোই লিখার সাহস করতাম না, তাকে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা তিনজন ছিলাম যারা সফলভাবে ঢাকা- কলকাতা-শিমলা-মানালি-দিল্লী ট্যুর সম্পন্ন করেছি। আমার সঙ্গী ছিল আমার বেয়াই শহিদুল ইসলাম যিনি একজন ছাত্র, আর মেহেদী ভাই যিনি একজন ব্যাংকার। আমাদের ট্যুর ছিল ঈদের ছুটি কেন্দ্রিক। আর প্রাইভেট চাকুরী করি বলে ঈদের ছুটি কবে হবে তাই নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম। মেহেদী ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয় “ToB Helpline” গ্রুপে। আমি একটা পােস্ট দেই যে, ঈদের ছুটিতে শিমলা মানালি ট্যুরে কেউ যাবে কিনা? তখন মেহেদী ভাই সাড়া দেন। আমাদের দুই জনের অবস্থাই ছিল কেউ না গেলেও একাই যাব। তাছাড়া হাদি ভাইও সাড়া দেন। কিন্তু অফিস ছুটি মেহেদী ভাইকে ট্যুর সঙ্গী হিসেবে ঠিক করে দেয়।


মূল কথায় আসি। ট্যুরটা নিয়ে প্রায় ৮ মাস ধরে পরিকল্পনা করে আসছিলাম। এক আত্মীয়ের অভিজ্ঞতা থেকে জানলাম তার ট্রেনের টিকিট পাওয়ার জন্য দুই দিন কলকাতায় বেশি থাকতে হয়েছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, এইবার ট্যুরের সব টিকিট বাংলাদেশ থেকে কেটে নিয়ে যাব। কিন্তু বাধা হয়ে দাড়ায় ঈদের ছুটি। কবে ছুটি হবে তা নিশ্চিত না হওয়ায় কি করব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ মনে হল ২২/০৬/২০১৭ ইং অথবা ২৪/০৬/২০১৭ ইং যেকোন একদিন ছুটি হবে। যেহেতু নিজেই টিকিটের টুকটাক ব্যবসা করি তাহলে কেননা আমি ২ দিনের জন্য টিকিট কাটি, আর পরে যেকোন একদিনেরটা বাদ করে দিব। যেই পরিকল্পনা সেই কাজ। শহিদুল বেয়াইও রাজী হলেন। ঈদের সময় ফেরী ঘাটে জ্যামের কথা মাথায় ছিল না তাই বাসের টিকিটের ক্ষেত্রেও রাত ১১:৩০ মিনিটের দেশ ট্রভেলসের টিকিট বাদ দিয়ে সন্ধ্যা ৬ টার ঈগল পরিবহনের টিকিট নিলাম যশোরের জন্য। সব মিলিয়ে যশোর পর্যন্ত যাওয়া আর ইন্ডিয়ার ট্রেনের টিকিট কাটা বাবদ আমাদের খরচটা একটু বেশিই হয়ে গেল। আমার প্রায় ৬৭০০ টাকা আর শহিদুল ভাইয়ের ৬০০০ টাকা।


কোনভাবে বসের কাছ থেকে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার ২ দিন আগে ছুটি ম্যানেজ করে ২২/০৬/২০১৭ ইং তারিখে অফিস শেষ করে বিকেল ৫ টায় নবীনগর বাস কাউন্টারে গিয়ে উপস্থিত হলাম। শহিদুল ভাই আরো ১ ঘন্টা আগে এসে অপেক্ষা করছেন। মেহেদী ভাই খুলনাতে থাকে তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী তার সাথে বেনাপোলে গিয়ে দেখা হওয়ার কথা। বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখি মানুষে ভরা, পা রাখার জায়গা নেই। বাস ছাড়তে এখনো ৪০ মিনিট বাকি। আমি ইফতার করার জন্য এক বােতল ঠান্ডা পানি নিয়ে নিলাম। ঠিক সময়মত বাস চলে আসে কাউন্টারের সামনে। গাড়িটা এতটাই পুরানো ছিল যে মনে হয় ২ বছর পর গাড়িটা রাস্তায় বের করেছে, এই গাড়ি যশোর পর্যন্ত পৌছাবে কি না তা নিয়ে ভালোই সংশয় ছিল। মালামাল গাড়ির বাক্সে দিয়ে আমরা বাসে উঠে আমাদের জন্য নির্ধারিত সিট (সবার পেছনে বাম পাশে) গিয়ে বসে পড়লাম। সিটে যদিও ধূলা ছিল, কিন্তুু আরামদায়ক ছিল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে রাস্তার দুই পাশের মানুষগুলোর ইফতারের জন্য ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। মানিকগঞ্জ শহরের কাছাকাছি যাওয়ার পর আমাদের গাড়ি ইফতারের জন্য থামে। শহিদুল ভাই তার বাসা থেকে রুটি আর আলু ভাজি এনেছিল আর আমি মুরগি ভুনা। দুজনে মিলে রুটি আর আলু ভাজি দিয়ে ইফতার সেরে নিলাম আর মুরগি ভুনা রাতের খাবারের জন্য রেখে দিলাম। ইপতারের পর গাড়িতেই নামাজ পড়ে নিলাম। ইফতারের পর গাড়ি ছাড়ল কিন্তু হেড লাইট না জ্বলায় রাতে গাড়ি চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ল। মানিকগঞ্জ শহরে গিয়ে যাত্রীদের ধমকের কারনে গাড়ি বন্ধ করতে বাধ্য হল। পরে লক্ষ্য করে দেখলাম চালকও কম বয়সীী, ভাবলাম আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। পরবর্তীতে সুপারভাইজরকে সবাই বকাবকি করতে থাকে। সে আশ্বস্ত করেন ভালো গাড়ি দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের তাে মন মানে না। সামনে ফেরী ঘটে লম্বা জ্যাম তাছাড়া এইখানে দেরি হলে কলকাতাতে ট্রেন মিস করার সম্ভবনা আছে শুধু এই চিন্তা মাথায় আসছিল। দুই ঘন্টার †চষ্টার পর ঢাকগামী একটা সম্পূর্ন নতুন বাসের ব্যবস্থা হয়। রাত ১০ টায় নতুন বাস আমাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বাস নতুন হলেও আমার বেয়াইয়ের সিট টা আরামদায়ক ছিল না। তার প্রায় সােজা হয়ে বসে থাকতে হল। কিন্তু সে জানালার পাশের সিট ছাড়া বসতে পারেন না । ৩০ মিনিটের মধ্যে বাস ফেরী ঘাটে পৌছায়। আমি তাে পুরো বােকা বনে গেলাম, ঘাটে জ্যামের কােন নাম গন্ধ পর্যন্ত নেই।


ফেরীতে উঠার আগে আমার অফিসের গাড়ির ড্রইভার সাগর আমাকে ফােন দিয়ে বলে ”স্যার আপনি কোথায়? প্রিন্স স্যার তাে আমার গাড়ি নিয়ে বেনাপোল যাচ্ছে, আপনি গাড়ি থেকে নেমে যান আমার গাড়িতে চলে আসেন”। আমি বললাম ”থাক সমস্যা নাই আপনারা চলে যান, তবে যদি আমি আপনার আগে যশোর গিয়ে পৌছাই তবে যশোর থেকে আমাদের নিয়ে যাইয়েন।” তাছাড়া আমরাও চাইনি স্যারের ফ্যামেলিকে বিরক্ত করতে।

প্রিন্স স্যারের পরিচয় দিই। উনি ইন্ডিয়ান নাগরিক, আমার অফিসে কোয়ালিটি ম্যানেজার। উনি আমাকে উনার গাড়িতে যাওয়ার জন্য দুপুর বেলা বলেছিলেন, কিন্তু আমি ওনার কথার অর্থ সঠিকভাবে না বুঝেই না করে দেই।”





ফেরীতে এশার নামাজ পড়ে নিলাম। রাতে ফেরিতে দূরের আলোগুলো জোঁনাকি পোকার মত মনে হচ্ছলি। যাই হােক আমরা আগেই সাগর সাহেবের আগেই ঘাট পার হয়ে যাই। ফরিদপুর পার হবার পর বুঝতে পারি যে আমরা রাত ২ টার মধ্যেই যশোর পৌছে যাব। তখন সাগরকে সাহেবকে ফােন দিয়ে বলি আমাদের যশোর থেকে নিয়ে যেতে হবে নয়তো এত রাতে সবকিছু খােয়াতে হবে। যশােরে আমরা কিছইু চিনি না, তাই মাগুরা পার হওয়ার পরই সাগরকে আবার ফােন দিই এবং সে বাসের সুপারভাইজরকে বলে দেয় আমাদের কােথায় নামাতে হবে। সে আমাকে আশ্বস্ত করে যে সে পিছনেই আছে। ঠিক ২ টায় যশোর নিউ মার্কেট আমাদের নামিয়ে দেয়।


কি যে করি বুঝতে পারছিলাম না, মনে মনে ভয় কাজ করছিল। এদিকে সাগরের গাড়ি আসতে দেড়ী হচ্ছিল। অবশেষে ২ টা ৩০ মিনিটে গাড়ি এসে পৌছায়। এত রাতে একটা ফ্যামেলিকে বিরক্ত করতে ইতস্ত বােধ হচ্ছিল। কিন্তু কিছু করার ছিল না। গাড়ি থামার পর প্রিন্স স্যার তার স্ত্রীকে পিছনের সিট থেকে সামনের সিটে সরে আসতে বলেন, আর আমাদের মালামাল গাড়িতে তুলতে বলেন। সাগর সাহেব প্রিন্স স্যারকে বলে চা খেতে চলে যায়।


প্রিন্স স্যারের মা অনেক বয়ষ্ক। কিন্তু অল্প কিছু কথাতেই বুঝতে পারলাম উনি বেশ শিক্ষিতা একজন মহিলা। ফ্যামিলিতে আরো দুইজন আছেন প্রিন্স স্যারের মেয়ে বৃষ্টি (০৮) আর ছেলে স্টিফেন (০৫)। রাত দুইটা চল্লিশ বাজে, সাগর সাহেব ইতিমধ্যে চা খেয়ে চলে এসেছেন। গাড়ি চলতেে শুরু করল আর আমরা দুইজন (বেয়াই আর আমি) পিছনের সিটে চুপ করে বসে আছি, নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছিল। প্রিন্স স্যার পরিবারের সবার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। জানি না পরিবারের বাকি সবাই এই দুইজন অপরিচিতকে কিভাবে নিয়েছেন, যেহেতু এত রাতে সবাইকে বিরক্ত করলাম।


রাস্তার মধ্যে একবার গাড়ি থামালেন সাগর সাহেব, বললেন সামনে গাড়িতে ডাকাতি হয় তাই অন্য গাড়ির সাথে যাওয়াটা নিরাপদ। কথাটা শুনে কিছুটা ভয় পেলাম। কিছুক্ষন পর একটা বাসের পিছনে পিছনে গাড়ি চলতে লাগল। রাত তিনটা পঁচিশ মিনিটে বেনাপোল জিরো পয়েন্টে নিরাপদেই পৌছে গেলাম। এই দিকে সেহেরীর সময় যায় যায়। সাগর সাহেব গাড়ি নিয়ে কােনমতে একটা হােটেল খুজে বের করলেন আর বললেন স্যার সেহেরী করে নেন। তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে দুই বেয়াই মিলে সাথে আনা মুরগি ভুনা আর হােটেল থেকে ভাত, ডাল দিয়ে সেহেরী করে নিলাম। সেহেরী শেষে গাড়ি আবার জিরো পয়েন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। আমাদের নামিয়ে দিয়ে সাগর সাহেব বিদায় নেন আর যাওয়ার বেলায় মনে করিয়ে দেন ”স্যার আমার জন্য একটা ঘড়ি কিন্তু ইন্ডিয়া থেকে নিয়ে আসবেন”।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৯:১৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×