somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কর্পোরেট মানবতায় না ঝাঁপিয়ে খুঁজে ফিরুন আশেপাশের মানুষের জন্য মানবতা

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গতবছর ঈদেই তো, মনে আছে সবার নিশ্চয়ই? মোবাইল ফোন কোম্পানি রবি সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের ঈদের জামা দেয়ার একটা কর্মসূচী দিল। যেখানে মোবাইল গ্রাহকদের টাকা পাঠানোর আহবান করা হল। তারপরের কথাতো সবারই জানা আছে তাই না? লালরঙ্গা নিজেদের লোগো সম্বলিত ফতুয়া টাইপের জামা বিশ হাজার সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হল। গ্রাহকের টাকায় কোম্পানির মার্কেটিং করার কি সুচতুর বুদ্ধি। আসলেই এটাই হচ্ছে তথাকথিত সিএসআর (কর্পোরেট সোশ্যাল রেস্পন্সিবিলিটি)। ঠিক একই কাজ এবার শুরু করেছে মোবাইল কোম্পানি গ্রামীণ ফোন। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে চাচ্ছে মোবাইল ফোন! আপনি আপনার পুরানো বা অব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি তাদের কাছে পাঠিয়ে দিবেন, তার বদলে তারা সেই ফোনে তাদের সিম ভরে একটি প্যাকেজ বিনে পয়সায় দিয়ে সুন্দর মোড়কে মুড়িয়ে (যেখানে বড় বড় করে হাইলাইটেড হবে তাদের নাম এবং লোগো) পৌঁছে দেবে সেইসব মানুষের হাতে যারা মোবাইল সুবিধা হতে বঞ্চিত। হাসি ফুটবে তাদের মুখে, তার সাথে গ্রামীণ ফোনের মুখেও কিন্তু। কিভাবে? প্রথমত তারা ফোনটা সুবিধাবঞ্চিতদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছে, এটা নিয়ে বিশাল মার্কেটিং শুরু করে দিয়েছে, পরেও করবে। আর তাদের প্যাকেজ শেষে সেই মোবাইল প্রাপ্ত মানুষগুলো কিন্তু তাদের গ্রাহক হিসেবে থেকে যাবে, সেখান থেকে তাদের রেভেনিউ কি কিয়দংশ হলেও গ্রো করবে না?

আসলে বর্তমান সময়টাই হল শো অফ। কিন্তু কষ্ট হয় এই শো অফ করতে গিয়ে যখন অসহায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের দেদারসে ব্যবহার করা হয়। পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খেয়ে বাঙালী হওয়ার মত রমজান আর ঈদ আসলে শুরু হয়ে যায় সুবিধা বঞ্চিতদের নিয়ে ইফতার, আর ঈদের জামা প্রদানের হিড়িক। সারা বছর এই মানুষগুলোর কোন খোঁজ কয়জন নেই? এদের ভাগ্য উন্নয়েনের নিমিত্তে কতটুকু কতজন ভেবেছে? সেদিন দেখলাম এক ফেসবুক সেলিব্রেটি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ইফতার করাচ্ছেন, যাদের বয়স ৫-৭ বছর সর্বোচ্চ দশ বছর। আচ্ছা এই বয়সের শিশুরা কয়জন রোজা রাখে? একজন যুক্তি দিলেন একবেলাতো ভালো খাবার খাচ্ছে তারা। আমার কথা হল ঠিক আছে, ভালো কাজ; তো ফলাও করে অনলাইনে ছবি তুলে প্রচার কেন? উত্তরে যা পেলাম, আরও সবাই উৎসাহিত হবে। আচ্ছা উৎসাহ দেয়াই যদি লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে সেইসব শিশুদের সাথে নিজের ছবি তোলা কেন? তাদের আহারের ছবি তুলে বললেই তো হত আসুন এভাবে অসহায় শিশুদের মুখে একবেলা আহার তুলে দেই।

আসলে এসব হচ্ছে নিজেদের প্রবঞ্চনা দেয়া, আমি খুব ভালো কাজ করছি। আসলে এগুলোর পেছনে কাজ করে নিজস্ব আত্মতৃপ্তি আর প্রচারণা। আপনি যদি ইসলাম ধর্ম অনুসারী হয়ে থাকেন, তবে জেনে রাখুন, ইসলামে বলা আছে যে, দান এমনভাবে কর যেন ডান হাত দান করলে বাম হাত টের না পায়।

ঈদ আর শীত, এইদুটো হল বর্তমানে মানবদরদী হওয়ার পিক সিজন। কিন্তু আপনি আমি যদি একটি শিশুর সারা বছরের শিক্ষার দায়িত্ব নেই তবে শিশুটির ভাগ্য স্থায়ীভাবে বদলে যেতে পারে। একবেলার ভরপেট দামী খাবার হজম হওয়ার পর কিন্তু নর্দমাতেই মিশে যাবে। আপনি বলতে পারেন কোন শিশুকে সাহায্য করবেন, কিভাবে করবেন আরও অনেক প্রশ্ন আপনার থাকতে পারে। কিন্তু একটু সচেষ্ট হলে কি সম্ভব নয়। ধরুন, আপনি যে স্কুলে পড়ালেখা করেছেন সেই স্কুলের হেডমাস্টারকে গিয়ে বললেন, স্যার কোন ছেলে/মেয়ে যদি খুব দরিদ্র থাকে যে টাকার অভাবে পড়ালেখা চালাতে পারছে না, তাহলে তাকে আমি প্রতিমাসে একটা নির্দিষ্ট টাকা বৃত্তি দিব। দেখবেন আপনার খুঁজতে হচ্ছে না, আপনাকেই সাহায্যপ্রার্থী খুঁজে নিবে। তাই বলে আবার, ঐ কিছু যাকাতদাতাদের মত হয়ে যাবেন না, যারা যাকাত দেয়ার সময় পদপিষ্ট হয়ে মানুষ মারা যায়।

সবশেষে বলি, কর্পোরেট দালালদের এসব মানবতার বয়ানে কান না দিয়ে, আপনার আশেপাশে চোখ বুলালে নিজের পরিমণ্ডলে অনেক অভাবী মানুষ পাবেন। সে হয়ত আপনার কোন নিকট অথবা দূরের আত্মীয়, প্রতিবেশী, কর্মচারী, বন্ধু অথবা অপরিচিত কেউ, সহকর্মী, গ্রামের কোন লোক; একটু খুঁজে দেখুন অনেক অনেক মানুষ খুঁজে পাবেন যারা এতোটুকু সাহায্য প্রাপ্তির জন্য মুখিয়ে আছে, কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না কিছুটা আত্মসম্মান বোধে, কিছুটা লজ্জায়। তাদের খুঁজে, একেবারে লোকচক্ষুর আড়ালে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন তাদের দিকে, যেন তাদের আত্মসম্মানবোধে এতোটুকু আঁচড় না লাগে। তাই শিরোনামের কথাটা আবার বলি, কর্পোরেট মানবতায় না ঝাঁপিয়ে খুঁজে ফিরুন আশেপাশের মানুষের জন্য মানবতা। দেখবেন সেইটাই হবে সবচেয়ে কার্যকর এবং সবচেয়ে আনন্দের।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এনসিপির ভোট কিভাবে বাড়ানো যায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৩



একটি নিরপেক্ষ সংস্থার জরিপ অনুযায়ী এখন বিএনপির ভোট ১৯% (প্রায়), জামায়াতের ভোট ১৬% (প্রায়), আওয়ামী লীগের ভোট ৯% (প্রায়), এনসিপির ভোট ৩% (প্রায়) সিদ্ধান্তহীন ভোট ৩০% (প্রায়), ভোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দা গুলশান ফেরদৌস জানা কেমন আছেন?

লিখেছেন জেনারেশন একাত্তর, ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৪



আমি আশা করছি, তিনি ভালো আছেন! কেহ কি জানেন উনি শারীরিকভাবে কেমন আছেন বর্তমানে? সর্বশেষ জেনেছিলাম (বছর খানেক আগে ) যে, উনি ভালো আছেন, চিকিৎসা চলছিলো। এরপর আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কমলাপুর টু নারায়ণগঞ্জ - ১ : কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৫ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৯



সময়টা ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখ।
উত্তর বাড্ডা থেকে রওনা হয়ে সকাল ১১টার দিকে পৌছাই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। উদ্দেশ্য রেললাইন ধরে হেঁটে হেঁটে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত যাবো

হাঁটা শুরু হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি ব্লগ ........

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৪

২০১২-১৩ থেকে কয়েক বছর পছন্দ এদেশে ছিল ডিএসএলআর যুগ। মানে একটি ভালো মানের ক্যামেরা থাকা মানে ছিল সোস্যাইটি বা বন্ধ মহলে ছিল সম্মান, মর্যাদা, আর অহংকারের প্রতিক। সোস্যাল মিডিয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আঁধারের মাঝেও আলো থাকে

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৬ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮


আমাদের মানব জীবনে আলো আঁধারের দ্বন্দ্ব চিরন্তন
ইতিহাস বারবার করেছে প্রমান অন্ধকার যত গভীরই হোক
তার ভিতরেই পরবর্তী আলোর বীজ লুকিয়ে করে অঙ্কুরণ।

আঁধারেও আলো থাকে শুধু একটি কবিত্বময় বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×