somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর শ্রীনগর - ওয়াজওয়ান ভক্ষণ শেষে নাগিন লেকের ওয়াঙনু হাউজবোটে (মিশন কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগের পর্বঃ গুলমার্গে যাপিত অলস দিনটি (মিশন কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)

গুলমার্গে যেদিন এলাম সেদিন ছিল বন্‌ধ, যথারীতি পরেরদিনও তা অব্যাহত ছিল। আমাদের ড্রাইভার সাহিল চাইছিল খুব ভোরে রওনা হয়ে যেতে গুলমার্গ থেকে কাশ্মীরের দিকে। প্রথমে প্ল্যানিং ছিল নয়টা নাগাদ যদি গণ্ডোলা খুলে, তবে সেখানে ঢুঁ মেরে যাওয়ার। কিন্তু আগেরদিন বিকেলেই কনফার্ম হয়েছিলাম এদিনও পৃথিবীখ্যাত “গুলমার্গ গণ্ডোলা” বন্ধ থাকবে, তাই সাহিলের পরামর্শ মতে সকাল সকাল হোটেল থেকে চেক আউট করে রওনা হয়ে গেলাম শ্রীনগরের দিকে।

গুলমার্গ থেকে শ্রীনগরের দূরত্ব প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটারের মত, সময় লাগে ঘণ্টা দুয়েকের মত। কিন্তু পথিমধ্যে আমরা যাত্রা বিরতি করলাম একটা আপেল বাগানে। সেখানে সবাই ফটোসেশনের সাথে খেলাম তাজা আপেল, ফ্রিতে! বাগান মালিক এবং তার কর্মচারীরা গাছ হতে আপেল পেড়ে কাঠের বক্সে প্যাকিং করছিল বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ডেলিভারি দিতে।



এই বাগানেই ছিল একটা ড্রাই-ফ্রুট’র দোকান, সেখান হতে সবাই কমবেশি কেনাকাটা করলাম। আমি ভিন্ন ভিন্ন পদের মিশ্রনে চার কেজির মত শুকনো ফল কিনে নিলাম, সাথে এক কৌটো বিখ্যাত কাশ্মীরি পানীয় ‘কাহওয়া’ এর ড্রাই ক্রাশড ইনগ্রেডিয়েণ্ট। ড্রাই ফ্রুটের মধ্যে ছিল আপেলের আমসত্ত্ব, আঞ্জির, আখরোট, আলমন্ড, ব্ল্যাকবেরি, কিশমিশ ইত্যাদি।















সেখানে ঘণ্টাখানেকের বেশী সময় কাঁটিয়ে আমরা ফের যাত্রা অব্যাহত রাখলাম শ্রীনগরের পানে। শ্রীনগর শহরের কাছে পৌঁছেতে দেখা মেলল চমৎকার সব নকশাদার আর ঢালু ছাঁদবিশিষ্ট বাড়িঘর। শহরে ঢোকার মুখে পড়লাম ট্র্যাফিক জ্যামে। এদিন আমাদের প্ল্যানিং এ ছিল লাঞ্চ করব অতি বিখ্যাত “মুঘল দরবার” রেস্টুরেন্টে বিখ্যাত ডিশ ‘ওয়াজওয়ান’ দিয়ে। সাহিল গাড়ী নিয়ে পার্ক করল রেস্টুরেন্টের উল্টোদিকের রাস্তার পার্কিং এরিয়ায়। যাওয়ার আগেই রেস্টুরেন্টের ওয়েবসাইট থেকে জেনেছিলাম, একই ভবনের নীচতলায় যে মুঘল দরবার নামক রেস্টুরেন্ট রয়েছে তা আসল মুঘল দরবার নয়, আসলটা দ্বিতীয়তলায় অবস্থিত। মজার ব্যাপার না! ওখানে গিয়ে মালিককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, বলল মামলা চলছে!





রেস্টুরেন্টের দোতলায় উঠে দেখা মিলল রেস্টুরেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মাদ ইব্রাহীম মুগলো’র সাথে। উনার সাথে কথা বলে ভালো লাগলো, ফাঁকে ছবিও তুলে নিলাম। নীচের ছবিতে ভ্রমণ সঙ্গী মুক্তার হোসেন এর সাথে ইব্রাহীম মুগলো সাহেবকে দেখা যাচ্ছে।



রেস্টুরেন্টে ঢুঁকে অর্ডার করা হল পৃথিবীখ্যাত কাশ্মীরি ডিশ ‘ওয়াজওয়ান’ এর। এটা মূলত একটা কমপ্লিট মিল প্যাকেজ, রাইস-ফ্রাই-কারি সব কাশ্মীরি আইটেম। রাইস, লাব্বি কাবাব (শিককাবাব বিশেষ), তাবাকমাজ (খাসীর চাপ এর ফ্রাই), ওয়াযা চিকেন (বিশেষ চিকেন ফ্রাই), রিশতা (কোপ্তা বিশেষের কারি), গোশ্ততাব (এটা হল কোপ্তা জাতীয় কোরমা কারি), রোগান জোশ প্রভৃতি আইটেম নিয়ে এই ওয়াজওয়ান ডিশ তৈরি হয়। পরিমানে এতো বেশী থাকে যে দুজনের একটা ডিশ দিয়ে চার-পাঁচ’জনের অনায়াসে লাঞ্চ হয়ে যায়।


===================================== লাব্বি কাবাব।


===================================== ওয়াজাচিকেন


===================================== রিশতা


===================================== তাবাকমাজ


===================================== গোস্তাব


===================================== আরও অনেক কিছু মিলে একত্রে ওয়াজওয়ান

আমরা দশজনে দুটা ফুল ডিশ এর সাথে এক্সট্রা রাইস নিয়েছিলাম, ভরপেট খাওয়া হয়েছিল। জনপ্রতি ওয়াজ্বান ডিশ হাজার থেকে পনেরশ রুপী চার্জ হয়। আমাদের সিস্টেমে খেলে জনপ্রতি পাঁচশ রুপীতে হয়ে যাবে। খাওয়া শেষে ফ্রুট ফালুদা খেলাম সবাই।







এই ভদ্রলোক (হোটেলের পরিচারক) চমৎকারভাবে দুইটা ফুল ওয়াজওয়ান আমাদের মাঝে সময় নিয়ে পরিবেশন করেছিলেন, যা একটি দেখার মত বিষয় ছিলঃ



সাধারণত কাশ্মীরি এই ওয়াজওয়ান পরিবারের সবাই মিলে এক থালিতে একসাথে খাওয়া হয়। রেস্টুরেন্টে সেই ব্যবস্থাও করা ছিল। ইয়াসমিন আপা একটি পরিবারের সেই রকম ভোজন ক্যামেরাবন্দী করেছিলেন উনাদের অনুমতি নিয়ে।







আর বের হওয়ার আগে আমি মোঘল রেস্টুরেন্টের বেকারি কর্নার হতে বিকেলের নাস্তা হিসেবে কুলচা, কাকচা, নানখাতাই, কাশ্মীরি ফ্রুট কেক, কোকোনাট বিস্কিট কিনে নিয়ে রওনা হলাম নাগিন লেকের উদ্দেশ্যে।













নাগিন লেকে পৌঁছে বিশেষ কাশ্মীরি নৌকা ‘শিকারা’ করে সংক্ষিপ্ত নৌভ্রমণ করে গিয়ে পৌঁছলাম আমাদের একরাত্রের নিবাস, ২০১৪ সালের ‘বেষ্ট হাউজ বোট’ এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত হাউজবোট ‘ওয়াঙ্গনু হাউজবোট’এ।











উল্লেখ্য যে, শ্রীনগর ভ্রমণে এসে এই হাউজ বোটে রাত্রি যাপন করেছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন সিং। আসুন দেখি সেই হাউজবোটের ভেতর-বাহিরের কিছু ছবিঃ





















মুক্তার ভাউ উনার সেলফি স্টিক হাতে হাউজবোটের ড্রয়িংরুমে যেখানে বসেছিল সন্ধ্যার পর এক জম্পেশ আড্ডাঃ





হাউজবোটের চারিপাশ হতে নেয়া কিছু ছবিঃ

















যাই হোক, আমাদের সামনে রইল সৌন্দর্যের রানী নাগিন লেক, সাথে দুটো হাউজবোটের পুরোটা আর আমরা দশজন ভ্রমণ সাথী; আর হ্যাঁ সারাটা বিকেল, সন্ধ্যা লগণ আর একটা মায়াবী রাত।

পরের পর্বঃ শ্রীনগর এর দুই বিস্ময় - নাগিন এবং ডাল লেক (মিশন কাশ্মীর এক্সটেন্ড টু দিল্লী-সিমলা-মানালিঃ ভারত ভ্রমণ ২০১৫)

এই পর্বের ছবিঃ
সাদা মনের মানুষ (কামাল ভাই)
রওশন আরা ইয়াসমিন (আপা)
মুক্তার হোসেন
বোকা মানুষ বলতে চায়

এবং ওয়াঙনূ হাউজবোট , মুঘল দারবার রেস্টুরেন্ট
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:১০
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×