somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রেলওয়ের সার্ভিস এবং মৃত্যুভয়!

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





গত দুইদিনে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে রেলযোগে ভ্রমণে গিয়েছিলাম। বাংলাদেশ রেলওয়ের সেবা আমার কাছে মনে হয়েছে একঝাঁক উর্দি পরিহিত বেতনভুক্ত হকারের সার্বক্ষণিক উৎপাত আর তার সাথে পুরো পথজুড়ে কড়া ইউরিনের গন্ধ'র সাথে নানান পচা দ্রব্যের উৎকট গন্ধের মেলা। আর তার সাথে জীবন বাজী নিয়ে চলাচল, সেই গল্প শেষে বলছি।

ফেরার যাত্রাটা ছিলো নাটোর থেকে, সন্ধ্যা ছয়টার পরপর ট্রেন ছাড়লো নাটোর থেকে, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস। ট্রেন ছাড়ার মিনিট পনের পর থেকে শুরু হলো তাদের স্টাফ নামক হকারদের দৌড়াদৌড়ি, পুরোটা পথ প্রায় সাড়ে চারঘন্টার মত এদের এই হকারি চলতেই লাগলো। শুধু শেষের একঘন্টা রাত এগারোটার পর কিছুটা কমে এল তাদের কার্যক্রম। রেলওয়ের সেই বস্তাপচা মেন্যু নিয়ে প্রায় ডজনখানেক স্টাফ প্রতি দুই তিন মিনিট পরপর যাচ্ছে আসছে, আমার সিট ছিল মাঝখানের করিডোর এর পাশে। প্রতিবার প্রায় কানের কাছ দিয়ে তাদের স্টিলের ট্রে যাচ্ছিলো, আসছিলো। একই লোক প্রতি পনের মিনিটে একবার বুঝি আপ-ডাউন করছিলো। প্রতি দু'তিন মিনিটে তাদের কেউ না কেউ ক্রস করছিলো। প্রতিবার সকল যাত্রীকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছিলো কিছু লাগবে কিনা? আর সবচাইতে বড় কথা হল, আমি প্রতিবাদ করায় বার দুয়েক আমার সাথে বেশ কিছু উত্তপ্ত বার্তালাপ হয়েছে। তাদের কথা "আপনার কি সমস্যা?"!!! ক্যান ইউ বিলিভ! আমি টাকা দিয়ে যাত্রা করছি, ঘন্টা ছয়েকের ভ্রমনের শ'দুয়েকের বেশীবার আমার শরীর ঘেঁষে অভদ্র, অশিক্ষিতের মত তারা চলাচল করবে, আর বলবে "আমার কি সমস্যা?"। রেলওয়ের এই উর্দু পরিহিত হকারদের দেখে মনে হল, রেলওয়ে চলছেই এই খাদ্যপণ্য বিক্রির টাকায়। না না, শুধু খাদ্যপণ্য কেন? পানীয় রয়েছে এই তালিকায়, এনার্জি ডিংক্স - তাও বেশ কয়েক কোম্পানীর। ৫০ লিটারের বালতি কাঁধে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো তারা। দুঃখের বিষয় পুরো ছয় ঘন্টার এই যাত্রা পথে আমাদের বগীর একশত যাত্রীর মধ্যে দুজন হয়তো কিছু কিনেছে তাদের কাছ থেকে... আহারে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, কালকে কি পুরোই লসে চলল? কারন, খাবার তো তেমন বিক্রি হলো না :P

আর পুরো রেলপথ জুড়ে রেলস্টেশন থেকে শুরু করে রেললাইন, রেলের ভেতরে ইউরিন আর হাজারো দুর্গন্ধে সয়লাব। আমার তো সন্দেহ হচ্ছে পুরো রেলপথ জুড়ে বুঝি যাত্রীদের প্রস্রাব-পায়খানা ফেলতে ফেলতে চলে রেলগুলো; হাস্যকর শোনালেও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে এদের পয়ঃনিস্কাশন সিস্টেম নিয়ে।

সবশেষে বলি গতকাল রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। রাত নয়টার আশে পাশে, সিরাজগঞ্জ পার হয় নাই তখনো, হুট করে ট্রেন থেমে গেল। অনেকটা সময় বসে থাকলো, এরপর শুনি আমাদের বগীর আগের বগীতে একটা বছর বাইশের ছেলে টয়লেটে মরে পরে আছে। আবার কেউ কেউ বললো সিরিয়াস অসুস্থ। আমাদের বগী হতে কয়েকজন দেখে এসে জানালো, "ছেলেটা বাথরুমের ভেতরে অসুস্থ হয়ে পড়লে দরজায় শব্দ করে, আশেপাশে থাকা সবাই দেখে প্রায় মৃত অবস্থায় ছেলেটি অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে সেখানে। এরপর প্রায় আধঘন্টা পরে ট্রেনে স্পীকার এ ঘোষণা হচ্ছে ট্রেনে কোন ডাক্তার আছে কি না। আশেপাশে থাকা অনেকেই জানালো কাউকে ছেলেটিকে ফার্স্ট এইড দিতে দেখা যায় নাই। বরং পুলিশ কেস বলে কাউকে ধরতে বারণ করা হচ্ছিলো। এর কিছুক্ষণ পর একজন এসে জানালো ছেলেটি মারা গেছে। আমাদের দেশের প্রতিটি ট্রেন কয়েক হাজার যাত্রী নিয়ে পরিবহন করে; সেখানে একজন ইমার্জেন্সি ডাক্তার রাখা কি খুব অসম্ভব ব্যাপার। যে কেউই এভাবে অসুস্থ হতে পারে। পরবর্তী স্টেশনে এসে এম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নিতে নিতে রোগী মারা যাবে। অথচ অল্প একটু ফার্স্ট এইড পেলেই অনেক সময় রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। আমি জানি না, রেল আইনে প্রতিটি রেলে ডাক্তার রাখার কথা বলা আছে কি না? যদি থাকে তাহলে গতকাল কোন ডাক্তার ছিলো না কেন? আর যদি আইনে ডাক্তারের কথা না থাকে, তাহলে তো আরো ভয়াবহ বিপদ! যাত্রী প্রতি দশ টাকা অতিরিক্ত রাখলে যে পরিমাণ টাকা হবে তা দিয়ে অনায়াসে একটা ডাক্তারের ব্যবস্থ করা যেতে পারে। কালকের যাত্রার পরে রেল জার্নি সম্পর্কে আমাকে তিনবার ভাবতে হবে। কিন্তু খবর ছড়িয়েছে ছেলেটিকে মৃত পাওয়া গেছে এবং তার পকেট থেকে আরবি বই ও ভারতীয় টাকা পাওয়া গিয়েছে। অথচ আমার পাশে থাকা অনেক যাত্রী ঐ বগীতে গিয়ে ছেলেটিকে জীবিত অবস্থায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে টয়লেটের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে এসেছে। ধরে নিলাম, সবাই মিথ্যা কথা বলেছে অথবা না জেনে বলেছে। তাহলে রেলের অফিসিয়াল স্পিকারে যে ডাক্তারের খোঁজ এবং সহযোগীতা চেয়ে ঘোষনা হল প্রায় অনেকটা সময় জুড়ে তা কেন ছিলো? পুরো রেলের কর্মচারী এবং উক্ত বগীর দুই পাশের বগীর সকল যাত্রী জানে ঘটনাটি অথচ নিউজের ধরন দেখে মনে হচ্ছে যেন ছেলেট জংগী টাইপের কিছু। সেরকম কিছু হলেও কিন্তু চিন্তা বা ভয় কমে যাবে না; বরং বেড়ে যাবে।

গতকাল মারা যাওয়া ছেলেটির খবরের লিংকঃ ঢাকাগামী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস টেনের "ছ" বগিতে আনুমানিক ২০-২২ বছরের একটি ছেলের মৃতদেহ

লাস্ট আপডেট মৃত ছেলেটির পরিচয় পাওয়া গেছে, তাহলে ভারতীয় মুদ্রা আর আরবি বই এর সম্পর্ক কি হইলো? সেই পোস্টে আরও জানা গেল কিছুদিন আগেই নাকি "পঞ্চগড় এক্সপ্রেস" এ একই রকম ঘটনা ঘটেছিলো। তাই সবাই সাবধানে যাতায়াত করি।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২২ রাত ২:২৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×